রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার জরুরি: আনু মোহাম্মদ
রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ। রাজনৈতিক দলের ভেতর নেতাদের অবসরের বয়স বেধে দেওয়ার পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, 'একজন নেতা হলেন আর তিনি স্থায়ীভাবে পদ পেলেন, এটা ঠিক নয়। পদে স্থায়ী হওয়ার ভাবনা থেকেই স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হয়। তাই রাজনৈতিক দলের প্রতিটি স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা দরকার। এই প্রতিনিধির বয়সসীমাও নির্ধারিত হওয়া উচিত।'
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত 'বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে'- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় আনু মুহাম্মদ বলেন, 'আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনের কারণে দেশে বৈষম্য বেড়েছ। এ দর্শনে নির্ভরশীল কাঠামো রেখে দেশে বৈষম্য কমবে না।'
গোলটেবিল আলোচনায় 'রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী সংস্কার'- বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান ও এশিয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'সংবিধানের প্রস্তাবনা নতুন করে লেখার প্রয়োজন আছে কি-না সন্দেহ আছে। তবে পরিমার্জন করতে হলে ২০২৪ এর জুলাইয়ে অভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশিত গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার জন্ম জনআকাঙ্ক্ষার কথা নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষার স্মরণ করাও যথার্থ হবে। প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধ ও প্রজাতন্ত্র শব্দাবলী প্রতিস্থাপনের প্রয়াস অপ্রয়োজনীয়।'
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ প্রতিস্থাপনের সুপারিশটি পরিপক্ব নয়। প্রস্তাবিত পাঁচটি মূলনীতি- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র সমূহের মধ্যে যৌক্তিক এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থন অনুপস্থিত। সুতরাং এ নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন'
তিনি বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে সংবিধান পরিমার্জনের উদ্যোগ গ্রহণকারী কমিশন কেন ২(ক) ধারা বাতিল করার সুপারিশ প্রদানে অপারগ হলো তা বোধগম্য নয়।'
তিনি আরও বলেন, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করেছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে পুনরায় সুপ্রিম কোর্ট রাজনীতিকরণের বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। যদি আনুপাতিক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রত্যাশিত শুভ পরিবর্তন ঘটে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা দৃঢ় এবং নিশ্চিত হতে পারে। তখন নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে।'
সভায় 'বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার'- শীর্ষক আরেক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান ও সাপ্তাহিক একতার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, 'শুধুমাত্র ভালো নীতি প্রণয়ন নয়, তার বাস্তবায়নের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক ও জ্বালানি খাত, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় জরুরি নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।'