বিশ্বের প্রথম মানুষ বনাম রোবট ম্যারাথন আয়োজন করছে চীন
মানুষ ও রোবট কি একই দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারে? এবার সেই চিত্রই দেখা যাবে বেইজিংয়ে।
প্রথমবারের মতো রাজধানী বেইজিংয়ের দাক্সিং জেলায় এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য একটি হাফ-ম্যারাথনে কয়েক ডজন হিউম্যানয়েড রোবটের (মানবসদৃশ-রোবট) অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এই আয়োজন এমন সময় হচ্ছে, যখন চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও রোবোটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। এর লক্ষ্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং বার্ধক্যজনিত সমাজ ও নিম্ন জন্মহারজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
বেইজিং ইকোনমিক-টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এরিয়া (ই-টাউন) জানিয়েছে, আসন্ন প্রতিযোগিতায় প্রায় ১২ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেবেন। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৌড়ে তাদের সঙ্গে থাকবে অন্তত ২০টি কোম্পানির তৈরি রোবটও। প্রথম তিন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হবে।
দাক্সিং জেলায় অবস্থিত ই-টাউন একটি রাষ্ট্রীয় শিল্প এলাকা। এখানে বেশ কয়েকটি শিল্প পার্ক রয়েছে। এগুলো বিমান নির্মাণ ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি খাতে ভূমিকা রাখে।
ই-টাউন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গবেষণাকেন্দ্র, রোবোটিক্স ক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ম্যারাথনে তাদের হিউম্যানয়েড রোবট নিয়ে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রোবটগুলোকে দেখতে অবশ্যই মানুষের মতো হতে হবে। তাদের যান্ত্রিক কাঠামো এমন হতে হবে, যাতে তারা হাঁটা বা দৌড়ানোর মতো স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। তবে চাকার ওপর চলতে সক্ষম কোনো রোবট দৌড়ে অংশ নিতে পারবে না।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া রোবটগুলোর উচ্চতা হতে হবে ০.৫ মিটার থেকে ২ মিটারের মধ্যে। পাশাপাশি কোমর থেকে পায়ের সোল পর্যন্ত ন্যূনতম প্রসারণ ক্ষমতা থাকতে হবে ০.৪৫ মিটার।
রিমোট-নিয়ন্ত্রিত ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় রোবট এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। দৌড় চলাকালে প্রয়োজন হলে রোবটগুলোর ব্যাটারি পরিবর্তন করার সুযোগও থাকবে।
গত বছর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আরেকটি হাফ-ম্যারাথনে চীনা রোবোটিক্স কোম্পানি গ্যালবটের তৈরি একটি হিউম্যানয়েড রোবট ফিনিশিং লাইনে উপস্থিত হয়েছিল। এমনকি অল্প সময়ের জন্য দৌড়েও অংশ নিয়েছিল। তবে এবারই প্রথমবারের মতো রোবটগুলো পুরো ম্যারাথন দৌড় সম্পন্ন করবে।
এই আয়োজন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন চীনের বিভিন্ন শহর রোবোটিক বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক গতিবিধি সংক্রান্ত উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
চীন হিউম্যানয়েড রোবট প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মাধ্যমে দেশটি প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা অর্জন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে চায়।
গত এক বছরে ই-টাউনে হিউম্যানয়েড রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডির কারখানাতেও এসব রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি ও প্রসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একাধিক সম্মেলন ও প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে।
চীনে দ্রুত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের সহায়তা জোরদারে দেশটি রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। মানসিক সাহচর্য, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং স্মার্ট পারিবারিক পরিষেবার মতো কাজে রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চীনে ৬০ বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১০ মিলিয়নের বেশি—যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। টানা তৃতীয় বছরের মতো জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় দেশটি কমতে থাকা কর্মী সংকট মোকাবিলায় কারখানা ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে রোবোটিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অভ রোবোটিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৮৮টি রোবট স্থাপন করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী মোট স্থাপন করা রোবটের ৫১ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের রোবোটিক্স শিল্পের বাজারমূল্য প্রায় ৫৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে।