‘ক্রিমিনাল সংস্থা’ ইউএসএআইডি বন্ধের সময় হয়েছে: ইলন মাস্ক
স্পেসএক্সের সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান ইলন মাস্ক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) 'বন্ধ' হয়ে যাওয়া উচিত। সম্প্রতি সংস্থাটির বিশেষ কিছু নথিতে প্রবেশাধিকার চাইলে দু'জন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এমন মন্তব্য করলেন ইলন মাস্ক।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ইউএসএআইডিকে একটি 'অপরাধী সংস্থা' বলে মন্তব্য করেছেন ইলন মাস্ক। অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসএআইডি-এর সদর দপ্তরের সংরক্ষিত এলাকায় তার ব্যয় সংকোচনকারী টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের প্রবেশ করতে দেননি।
আজ ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, "এটি শেষ হওয়ার সময় এসেছে।"
ইউএসএআইডি-এর নিরাপত্তা পরিচালক জন ভোরহিজ এবং তার ডেপুটি ব্রায়ান ম্যাকগিল-কে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ডিওজিই-এর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা অনুমোদন না থাকায় তাদেরকে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেননি ওই দুই কর্মকর্তা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ডিওজিই-এর প্রতিনিধিরা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তারা সরকারের কোনো বিভাগ নয়। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এ পরবর্তীতে বলা হয়, পরে ওই কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তবে ডিওজিই-এর কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হোয়াইট হাউজের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চিয়াং। তিনি ওই প্রতিবেদনকে তিনি 'ভুয়া' এবং 'একদমই সত্য নয়' বলে অভিহিত করেন।
এক্স-এর এক পোস্টে স্টিভেন চিয়াং লিখেছেন, "এটাই প্রমাণ করে যে গণমাধ্যম কতটা অবিশ্বাস্য ও দায়িত্বহীন।"
তবে ডিওজিই-এর এক কর্মকর্তা কেটি মিলার তার এক্স-এ লিখেছেন, "যথাযথ নিরাপত্তা অনুমোদন ছাড়া কোনো বিশেষভাবে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা হয়নি।"
এ ঘটনায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএসএআইডির কার্যক্রম সংকুচিত বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
শনিবার থেকে ইউএসএআইডি-এর ওয়েবসাইটটিও আর দেখা যাচ্ছে না। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শুধু সংস্থাটির একটি সাধারণ তথ্য-ভিত্তিক পেইজ দেখা গিয়েছে। এতে গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে যে, ইউএসএআইডি-কে হয়ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একীভূত করা হতে পারে।
ডেলাওয়ারের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনস এক্স-এ লিখেছেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই সপ্তাহ ধরে ইউএসএআইডি-এর কর্মীদের হয়রানি করেছেন এবং বরখাস্ত করেছেন, আর এখন তার দল পুরো সংস্থাটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।"
তিনি আরও বলেন, "এরা দেশপ্রেমিক আমেরিকান, যারা বিশ্বব্যাপী আমাদের নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা আমাদের নিরাপদ রাখেন। কিন্তু ট্রাম্প আমাদের আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।"
২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ইউএসএআইডি-এর মার্কিন বিদেশি দুর্যোগ সহায়তা কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেরেমি কোনিন্ডাইক বলেন, "কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইউএসএআইডি বিলুপ্ত করা বেআইনি হবে এবং এটি মার্কিন সংবিধানে নির্ধারিত ক্ষমতার বিভাজন আইনেরও লঙ্ঘন।"
তিনি এক্স-এ আরও বলেন, "যদি এই চাল সফল হয়, অর্থাৎ যদি ট্রাম্প (বা ইলন) কংগ্রেসের আইন ও অর্থায়নের বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করতে পারেন এবং কংগ্রেস যদি তাতে নীরব সমর্থন দেয়- তাহলে এটি একটি অশুভ সংকেত এবং এটি কেবল ইউএসএআইডি-তে সীমাবদ্ধ থাকবে না।"
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারাও এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, নির্বাচিত কোনো সরকারি পদে না থাকলেও ইলন মাস্ক সরকারের ওপর বিপুল প্রভাব বিস্তার করছেন।
ইউএসএআইডি-এর সঙ্গে মাস্কের এই বিরোধের মধ্যে সংবাদ সংস্থা নিউইয়র্ক টাইমস ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডিওজিই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার পেয়েছে এবং সেখানে যেখানে লাখ লাখ আমেরিকানের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।
নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ এক্স-এ লিখেছেন, "এটি চূড়ান্ত সতর্ক সংকেত। জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছে, ইলন মাস্ককে নয়।"
তিনি আরও বলেন, "তিনি একজন অনির্বাচিত বিলিয়নিয়ার। তার নিজস্ব বিদেশি ঋণ ও স্বার্থ রয়েছে। তিনি যদি আমেরিকানদের সংরক্ষিত তথ্য হাতিয়ে নেন, তবে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। এটি কোনো দলীয় বিষয় হওয়া উচিত নয়।"
গতকাল রোববার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তার প্রশাসন ইউএসএআইডি-এর 'উগ্র উন্মাদদের' বের করে দেওয়ার পর সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
পরবর্তীতে ট্রাম্প বিশেষভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সহায়তার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং ঘোষণা করেন যে, "নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের প্রতি অন্যায় আচরণ ও ভূমি দখলের ঘটনায় প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তিনি ভবিষ্যতে সব ধরনের তহবিল বন্ধ করে দেবেন।"
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত সপ্তাহে একটি বিতর্কিত আইন স্বাক্ষর করেছেন, যা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি ক্ষতিপূরণ ছাড়া অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় সহায়তার জন্য প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র এটা মেনে নেবে না, আমরা পদক্ষেপ নেব। এই পরিস্থিতির পূর্ণ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সহায়তার তহবিল স্থগিত থাকবে।"
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদেশি সহায়তা প্রদানকারী দেশ। যদিও এর মোট ব্যয়ের এক শতাংশেরও কম সহায়তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং কিছু দেশ তাদের বাজেটের তুলনায় বেশি সহায়তাই দিয়ে থাকে।
২০২৩ সালে ওয়াশিংটন ১৮০টিরও বেশি দেশে মোট ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি সহায়তা দিয়েছে। আর এর অর্ধেকের বেশি সহায়তা দিয়েছে ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে।