প্রতিবেশির কারণে রক্ষা: আফগানিস্তানকে ধন্যবাদ, বাংলাদেশ কখনোই তলানিতে পৌঁছায় না
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/bangladesh_destructive-race-to-bottom.jpg)
বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনেই একটা আশঙ্কা রয়েছে। তা হলো- আমরা 'আরেকটি আফগানিস্তান' হয়ে উঠছি।
বিষয়টাতে নজর দেওয়া যাক। বিভিন্ন বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বছরের পর বছর ধরেই বাংলাদেশের স্থান তলানিতে। দুর্নীতি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসন কিংবা গণতন্ত্র, আপনিই যেটাই বলুন না কেন, সবখানেই প্রায় একই চিত্র। কিন্তু আমরা আফগানিস্তান হবো না। আসলে আফগানিস্তানকে বাংলাদেশের আগের চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন।
ভরসা করার মতো আমাদের প্রতিবেশি আফগানিস্তানকে ধন্যবাদ, আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে নেই। এটি একটি ছোট বিজয়, যদিও তা প্রশ্নবিদ্ধ।
২০২৪ সালে বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে ১০০ এর মধ্যে ৪০ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। সে হিসেবে বাংলাদেশ 'আংশিক স্বাধীন'।
আর আফগানিস্তান? মাত্র ৬ স্কোর নিয়ে দেশটি অষ্টম স্থানে রয়েছে। যেটি 'স্বাধীন নয়' হিসেবে বিবেচিত।
চলুন দেখি আইনের শাসন সূচক কী বলছে। ২০২৪ সালে এ সূচকে ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম। যেখানে আফগানিস্তান রয়েছে ১৪০ নম্বরে। সেদিক থেকে আমরা যে একেবারে তলানিতে নেই, সেটি স্পষ্ট।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক ২০২৪-এও চিত্র একই। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। আর আফগানিস্তান? এই সূচকে তলানিতে আফগানিস্তান। দেশটির অবস্থান ১৭৮তম। সে হিসেবে আমাদের অবস্থা কিছুটা ভালো।
এবার চলুন ট্রেস ব্রাইবারি রিস্ক মেট্রিক্স-২০২৪ তথা ঘুষের ঝুঁকি সূচকের দিকে নজর দেওয়া যাক। এ সূচকে ১৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৪৭ নম্বরে। আর আফগানিস্তান রয়েছে ১৮৬ নম্বরে। সে হিসেবে বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে রয়েছে দেশটি।
দুর্নীতি ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪-এ দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম, যেখানে আফগানিস্তান রয়েছে ১৬৫তম স্থানে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম।
চলুন এ সূচকে স্কোরের অবস্থা দেখে দেওয়া যাক। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সিপিআই স্কোর ছিল ১০০-এর মধ্যে ২৩, যা গত বছরের চেয়ে এক কম। এছাড়াও এটি গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে আফগানিস্তানের স্কোর ১৭, যা আগের বছরের চেয়ে তিন কম। সে হিসেবে আমাদের 'দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' দেশের মুকুট পরতে হচ্ছে না।
তবে মজার বিষয় হলো, আফগানিস্তান প্রসঙ্গ উঠলে সবসময়ই বাংলাদেশের মানুষের মাঝে চরম দুটি মতে বিভক্তি দেখা যায়।
ইসলামি চরমপন্থা বৃদ্ধি ও স্বাধীনতা হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একদিকে কিছু স্বঘোষিত উদারপন্থী বারবার সতর্ক করে বলছেন যে বাংলাদেশ তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের পথে হাঁটছে।
আরেকটি পক্ষ স্পষ্টভাবে আফগানিস্তানের মতো শাসনব্যবস্থার পক্ষে। যেখানে কট্টর ইসলামপন্থীরা ঠিক তেমনটাই আকাঙ্ক্ষা করে।
এমন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক এই র্যাঙ্কিংগুলো দেখে উভয়পক্ষরই কি শেষমেশ কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে?
আর দেশের বাকি মানুষগুলোর অবস্থান? বলতে গেলে তারা কেবল এ দুয়ের মাঝখানে আটকে আছেন। তারা বছরের পর বছর ধরে কেবল স্কোরই কমতে দেখছেন এবং এক অলৌকিক ঘটনার আশায় বসে আছেন, যা কখনো আসে না।
তাহলে এই সবকিছুর অর্থ কী?
এক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশ একজন ছাত্র হতো, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা হতো সেই ছাত্রের মতো, যে পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করেছে এবং কেবল অন্য কেউ উত্তরপত্র জমা দিতে ভুলে গিয়েছিল বিধায় খারাপভাবে ফেল করা থেকে রক্ষা পেয়েছে।
তবে এই 'আপেক্ষিক সফলতা' উদযাপনের আগে একটি প্রশ্ন খুবই জরুরি— কেবল অন্য কেউ খারাপ করছে, আর তাই আমাদের তলানিতে পৌঁছানো ঠেকে আছে, এভাবে কতদিন আমরা নিজেদের তলানিতে পৌঁছানো আটকে রাখব?
আমরা হয়তো নিচের দিকে আগানোর বদলে একটু উপরের দিকে তাকাতে শুরু করতে পারি।
কেবল একটা চিন্তা।