বগুড়ায় সংকটে অ্যান্টিক গোল্ডের গহনা ব্যবসা
ব্যবসায়ীদের দাবি বগুড়া সদর উপজেলার ধরমপুর ও ফুলবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামে তামা ও পিতলের অ্যান্টিক গোল্ড প্লেট গহনার পাশাপাশি সোনার নাকফুলের যে চাহিদা ছিলো করোনা দেখা দেওয়ার পর তা কমতে শুরু করে। এখন তাদের আশংকা পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে অনেকের পক্ষেই আর এই ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে কর্মহীন হয়ে পড়তে পারেন বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ শিল্পী।
ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: জাকির হোসেন দাবি করেন করোনার আগে বছরে এন্ট্রিক গোল্ড প্লেট গহনা এবং সোনার রেডিমেড নাকফুল বেচা-কেনা হতো প্রায় ৬ কোটি টাকা। করোনার গত ৭ মাসে মোট ৩ কোটি টাকার ব্যবসাও করতে পারেনি এই বাজারের ব্যবসায়ীরা।
"করোনা আগে ভারত থেকে আসা তামা প্রতি কেজি বেচা-কেনা হতো ৭শ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা দরে আর এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৫০টাকা এই দামও স্থিতিশীল না, কখনো কখনো আরও বেশি দামেও কিনতে হয়। আর আগে এক কেজি পিতল ৮শ টাকাতেই পাওয়া যেত, কিন্তু এখন কিনতে হচ্ছে কমপক্ষে ৯শ টাকায়,' বললেন মো: জাকির হোসেন। বিয়েসহ নানা ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান করোনায় সীমিত হয়ে পড়ায় সোনার নাকফুলের চাহিদাও কমেছে, দাবি ব্যবসায়ীদের।
প্রায় ১৬ বছর আগে বগুড়া শহরতলীর ধরমপুর এলাকায় অ্যান্টিক গোল্ড প্লেটিং গহনা তৈরি শুরু করেন কয়েকজন স্বর্ণশিল্পী। কিন্তু এখন শিতাহার, শাড়ীমালা, কান্দামালা, পায়েল, চুর, জড়োয়া, নূপুর ও টিকলীসহ অন্তত ১৫০ ধরনের অলংকার তৈরি করে ১৩ হাজার নারী ও পুরুষ কর্মী। গহনা এবং কাজ ভেদে দামের কিছুটা পার্থক্য থাকলেও হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় দৃষ্টিনন্দন নানা গহনা।
যশোর, খুলনা, চট্রোগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় এখান থেকে গোল্ড প্লেট গহনা যায়। করোনায় গহনার অর্ডার প্রায় মূন্যে নেমে একসছিল।
মো: জীবন দীর্ঘদিন স্বর্ন শিল্পীর কাজ করেন গাজিপুর টঙ্গিবাজারে। একমাস আগে তিনি অঅবার দোকান চালু করেছেন। আশা করছেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যান্টিক গোল্ড প্লেট গহনার ব্যবসা আবার চাঙ্গা হবে। "ধীরে ধীরে বাজার খুলছে, স্বাভাবিক হয়ে আসছে পরিস্থিতি, ক্রেতাও আসছেন। ব্যবসা ভাল হওয়ার কথা,' জানালেন মো: জীবন।
ধরমপুর বাজারে ২৩৮ টি গহনার দোকার রয়েছে। বাজার মালিক-শ্রমিক মিলে রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন। তবে এই গহনার বেশিরভাগ কারিগর রয়েছে পাড়া মহল্লায়। দোকান মালিক সমিতির হিসাবে, ধরমপুর বাজারের সঙ্গে বাড়িতে বসেই এসব গহনা তৈরির কাজ করেন অন্তত ১০ হাজার নারী ও পুরুষ কর্মি।
এই বাজারের শফিক গোল্ড অ্যান্ড অ্যান্টিক জুয়েলার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম। বাজারে ব্যবসা করেন ১৫ বছর ধরে। তিনি সাধারণত পণ্যগুলো পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। তার কাছ থেকে সারা দেশের ক্রেতারা এসে গহনা কেনে। শফিকুল বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা কমে গেছে। তারপরও যশোর, বরিশাল ও রংপুরে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পণ্য বিক্রি করেন।
ধরমপুরের পাশের শহরতলীর মাটিডালি গ্রাম। এই এলাকার নারী-পুরুষ মিলে আগে বিড়ির কারখানায় কাজ করতেন। এখন তারা গহনা তৈরি করেন। তাদের মধ্যে একজন হলে শাহীন আলী। তিনি বলেন, তার কারখানায় প্রায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ১২ জন নারী। অধিকাংশ নারী এখানে কাজ করেই সংসার চালানা। তিনিও প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন।
শাহীর আলীর কারখানায় কাজ করেন রূপালি বেগম। দুই বছর ধরে গহনার কাজ শুরু করে এখন তিনি সংসারের হাল ধরেছেন। এখানে কাজ করে প্রতিমাসে তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। শাহীনের ভাষ্যমতে, রূপালীর আয়ের টাকা দিয়ে এখন তাদের সংসার ভালোই চলছে।
শফিক গোল্ড অ্যান্ড এন্টিক জুয়েলার্সের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম। এই দোকানেই তিনি ১৫ বছর ধরে কারিগরের কাজ করছেন। শহিদুল বলেন, এখানে কাজ করে মাসে গড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ের টাকা দিয়ে তিনি তার দুই সন্তানকে স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সংস্থা ( বিসিক) জানায়, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদনের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের প্রনোদনা দেয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু বগুড়া অ্যান্টিক গোল্ড প্লেট গহনা এবং রডিমেড নাকফুল তৈরির সাথে সংশ্লিষ্টদের কেউ বিসিক অফিসে আবেদন করেননি। বগুড়া বিসিকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: জাহেদুল ইসলাম জানান তাদের কাছে আবেদন এলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: জাকির হোসেন জানান তাদের জানা না থাকায় সরকারি এ সুযোগ নেয়ার জন্য কোন আবেদন করা হয়নি। "মাননীয় প্রধানমন্ত্রি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রনোদনার যে ব্যবস্থা করেছে আইন আনুযায়ী তা পেতে আমার আবেদন করবো," বললেন মো: জাকির হোসেন