সড়ক প্রশস্তকরণের নামে কাটা হচ্ছে দু’হাজার গাছ
রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে আমনুরা পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের সবুজের সারি চোখ জুড়িয়ে দেয়। অনেক দূর থেকে মানুষ আসেন এই পথের শীতল বাতাস ও চোখজুড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
অথচ সড়কটি প্রশস্তকরণের নামে এর দু’ধারের হাজার দুয়েকেরও বেশি অর্ধশতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
সাত কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে গাছ কাটা চলছে, সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তরের শ্রমিকরাই কাটছেন। এর মধ্যে বাবলা, কড়ই আর আম গাছের সংখ্যা বেশি।
ঘটনাটি এলাকাবাসীর মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। অনেক গাছ অকারণে কেটে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে সড়কের কিছু জায়গা ৫.৫ মিটার ও কোথাও কোথাও ৩.৭ মিটার চওড়া। যেখানে ৩.৭ মিটার চওড়া, সে অংশগুলো ৫.৫ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। অথচ অভিযোগ উঠেছে, বাকি স্থানগুলোতেও গাছ কাটা চলছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে দামকুড়া হাট সড়কের বিন্দারামপুরে একদল শ্রমিক গাছ কাটছেন। সেখানে সড়কটি চওড়ায় ৫.৫ মিটার। এর কোণা থেকে আরও এক মিটার দূরে রয়েছে ৮৭ নম্বর গাছটি। সেটিও কাটা হচ্ছে। একইভাবে ৮৮,৮৯,৯০ ও ৯১ নম্বর গাছগুলো সড়ক থেকে দূরে থাকলেও সেগুলো ধ্বংস হচ্ছে কাটাকাটির যজ্ঞে।
এই এলাকায় বেড়ে ওঠা মানুষজনের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পথ, এর বৃক্ষরাজি।
বিন্দারামপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী দুজন আবদুর রশিদ ও হাসান আলী। ওঁরা জানান, “এইসব গাছের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। কোনো কোনো গাছের বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি। আমাদের বুঝশক্তি হওয়ার পর থেকেই গাছগুলো দেখছি।”
এদিকে, এত বিপুলসংখ্যক গাছ একসঙ্গে কেটে ফেলায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফ’-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “এর আগে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে। একদিকে গাছ রেখে আরেকদিকে যদি সড়ক প্রশস্ত করা যেত তাহলে ভালো হত। আমরা অনেক আন্দোলনও করেছি, কিন্তু খুব একটা কাজ হয় না।”
রাজশাহীর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা জানালেন, সড়ক মজবুত ও ঢালু করতে হলে অতিরিক্ত জায়গা দরকার হয়। তাই সড়কের দু’পাশের প্রায় দু’হাজারের বেশি গাছ কাটা হচ্ছে।
“গাছ রাখার সুযোগ থাকলে অবশ্যই রাখতাম। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আবার পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হবে।
রাজশাহী সড়ক ও যোগাযোগ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে আমনুরা পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করতে ৯২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিনটি কন্ট্রাকটর কোম্পানিকে এই প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়।
রাস্তার কাজ শুরু হবার আগেই বিক্রি করা হয় গাছগুলো। অভিযোগ রয়েছে যে, সাত বছর আগে নির্ধারিত দামে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
কিন্তু রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক্সিকিউটিভ হর্টিকালচারিস্ট ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানালেন, তাদের ৬৬৩টি গাছের সরকারি মূল্য সর্বনিম্ন ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৪ টাকা। উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে গাছগুলো ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে নির্ধারিত দামে গাছ বিক্রি হলেও, উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে এখন প্রায় তিনগুণ বেশি দাম পাওয়া গেছে।
সড়কটিতে বিএমডিএ (বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), বন বিভাগ, জেলা পরিষদ ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাছ রয়েছে। সবাইকে চিঠি দিয়ে গাছগুলো কেটে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ জানালেন, তাদের ৭৯০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকায়।
এদিকে গাছ কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলে জানান অধিদফতরের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ।
শ্রমিকরা জানান, ৩৩ দিন ধরে গাছ কাটছেন তারা। এ ক’দিনে সাত থেকে আট কিলোমিটার পথের গাছ কাটা হয়েছে।