বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রির জন্য ১০ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করবে বেক্সিমকো
দেশের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক বেক্সিমকো ফার্মাসিউট্যিক্যালস লি. বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ১০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা আমদানি করবে। সরকারিভাবে আনা ৩ কোটি ডোজের পাশাপাশি এই আমদানি করা হবে।
প্রথম পর্যায়েই আলোচিত সংখ্যক ডোজগুলো দেশের বাজারে আনবে বেক্সিমকো। এরপর তা দ্রুত বেসরকারি খাতের সম্মুখভাগের কর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হবে। প্রাথমিক মূল্য ১২শ' টাকার সঙ্গে সরকার নির্ধারিত অন্যান্য শুল্কও যুক্ত থাকবে।
এব্যাপারে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা জানান, 'ইতোমধ্যেই আমরা বাড়তি টিকা আমদানির লক্ষ্যে ক্রয়াদেশ দিয়েছি। আগামীতে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।'
সরকারি পর্যায়ে আমদানিকৃত ভ্যাকসিন ডোজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য কর্মী এবং ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, বেসরকারিখাতের সম্মুখভাগের কর্মীদের সুরক্ষার জন্যই অতিরিক্ত ডোজ আমদানি করা হচ্ছে।
তবে, কোন জনসমষ্টি অগ্রাধিকার পাবেন কোম্পানিটি এখনও সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
বেক্সিমকো ফার্মা সিওও রাব্বুর রেজা বলেন, 'সরকারি পর্যায়ের ফ্রন্টলাইনার্স না কিন্তু অর্থনীতি সচল রাখার জন্য গার্মেন্টস, ফার্মাইন্ডাস্ট্রি, ব্যাংক, করপোরেট হাইজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কিন্তু ফ্রন্টলাইনার্স। তারা কাজ করছে এবং সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। মূলত তাদের জন্য ও সাধারণ মানুষ যাদের সরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিন পেতে সময় লাগতে পারে তাদের জন্য এ ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে।'
সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার ৫ ডলারে Oxford/AstraZeneca Vaccine AZD 1222 ভ্যাকসিন কিনবে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে এ ভ্যাকসিন পেতে আট ডলারের বেশি ব্যয় করতে হবে।
রাব্বুর রেজা আরও বলেন, 'প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য আমরা অক্সফোর্ডকে ৮ ডলার করে দেব। এর সর্বোচ্চ খুচরামূল্য হবে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত না। এর সাথে ক্যারিং কষ্ট, ইন্সুরেন্স-সহ সরকারের আমদানি করা ভ্যাকসিন মূল্য নির্ধারণের যে পলিসি আছে সে অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হবে। ভ্যাকসিন যে সেন্টারে দেয়া হবে তারা হয়তো সরকার নির্ধারিত একটা নুন্যতম মূল্যও রাখবে।'
দেশে কবে আসবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন:
জানা গেছে, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পাওয়ার পর ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ভারতে নিয়ামক সংস্থার সম্মতি নিয়ে ওই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কাছে চূড়ান্ত স্বীকৃতির আবেদন করবে।
বেক্সিমকো ফার্মার এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, হু বা ইউরোপিয় ইউনিয়নের অনুমোদনের পর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনতে আমাদের ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনও নিতে হবে। আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী যেদিনই বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন সম্মতি দেবে তার এক মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসবে।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অনুমোদন প্রক্রিয়া জানুয়ারির বা ফ্রেব্রুয়ারির শেষে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানুয়ারির শেষে স্বীকৃতি পেলে ফেব্রুয়ারির শেষে টিকা পাওয়া যাবে। যেদিন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর- ডিজিডিএ'র সম্মতি পাওয়া যাবে সেদিন থেকে এক মাসের মধ্যে টিকা বাজারে পাওয়া যাবে। আমরা চেষ্টা করবো এক মাস দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালান আনতে।
তাই, হু'র অনুমোদনের আগেই ডিজিডিএর সবুজ সংকেত পেতে আবেদন করবে বেক্সিমকো।
রাব্বুর রেজা আরও জানান, শিগগিরই ৫টি দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ফল পাওয়া যাবে। আমরা সেই তথ্য ডিজিডিএ'কে দেওয়া শুরু করবো। সবকিছু যদি ঠিকঠাক হয়ে থাকে তাহলে হু'র অ্যাপ্রুভ্যাল পাওয়ার পর এখানেও অনুমোদন পাওয়া যাবে।
টিকা কেন্দ্র নির্ধারণ করবে সরকার:
বেসরকারি পর্যায়ে আসা টিকা ভ্যাকসিনেশনের কাজ ইপিআই এর তত্বাবধানে হবে।
এব্যাপারে বেক্সিমকো সিওও বলেন, সরকার নির্ধারণ করে দেবে কোন সেন্টারে ভ্যাকসিন দেয়া হবে, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারণ, সরকারকে এসব ডাটা রাখতে হবে। ভ্যাকসিনের অ্যাডভান্স রিঅ্যাকশন হচ্ছে কিনা, ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে কিনা সেগুলো সরকারকে মেইনটেইন করতে হবে। সবকিছু নিয়ন্ত্রিতভাবে করা হবে।
তিনি আরো জানান, সরকার যেভাবে টেস্টিং সেন্টার করেছিলো সেরকম কিছু সেন্টার করে দিতে পারলে- সেখানে আমরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করবো।
সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে বেক্সিকোর গুদামঘরে সম্পূর্ণ হিমচক্রে পরিবহন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি হিমচক্র বিধি মেনে যতগুলো নির্দিষ্ট গুদাম আছে, সেখানে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো।