দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগানের গুলিতে নিহত হন ইরানি বিজ্ঞানী
ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ড ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তাপ চলছে। গত শুক্রবার পূর্ব তেহরানের আবসার্দ শহরে আততায়ীত হন তিনি।
কীভাবে তাকে মারা হলো, এ নিয়ে ইরানিয়ান সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্যে বেশ গরমিল রয়েছে।
ফার নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফখরিজাদেহ সেদিন তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল তিনটি নিরাপত্তা গাড়ি বহর। প্রায় ১৫০ মিটার দূরে থামানো অবস্থায় ছিল একটি নিশান কার। তিনি গাড়ি থেকে বের হতেই সেই নিশান কারে থাকা দূরনিয়ন্ত্রিত (রিমোট-কন্ট্রোলড) মেশিনগানের সাহায্যে তাকে তিনবার গুলি করা হয়।
অবশ্য এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এদিকে ইরানের ইংরেজিভাষী 'প্রেস টিভি' সোমবার জানিয়েছে, ইসরায়েলে তৈরি অস্ত্র দিয়ে ওই পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে।
'ওই সন্ত্রাসী কাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের গায়ে ইসরায়েলের সামরিক ইন্ডাস্ট্রির লোগো ও সুনির্দিষ্ট চিহ্ন রয়েছে', বলে অনুল্লেখিত সূত্রের মারফতে জানায় প্রেস টিভি।
সেমি-অফিশিয়াল ইরানিয়ান স্টুডেন্ট নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে ইরানিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি জানান, ওই পরমাণু বিজ্ঞানীকে একাধিকবার গুলি করা হয়। তিনি আরও জানান, সন্ত্রাসীরা প্রথমে গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। এরপর দেহরক্ষী ও সন্ত্রাসীদের মাঝে সংঘর্ষ হয়।
ইরানের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা প্রথমে তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়লেও পরে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। আইআরআইবি, ইরানিয়ান স্টেট টেলিভিশনেও একই কথা বলা হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ অন্য নেতারা এই ঘটনার জন্য সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করছেন।
ইরানের বৈদেশিক সম্পর্কের স্ট্রেটেজিক কাউন্সিলের প্রধান সাঈদ কামাল খররাজি এই ঘটনার সঙ্গে ইরানি সমরনায়ক ও ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর মেজর জেনারেল কাশেম সুলাইমান হত্যাকাণ্ডের মিল পেয়েছেন।
শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে নির্মমভাবে হত্যার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
নিঃসন্দেহে এই গুপ্তহত্যার উপযুক্ত জবাব দেবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দেশ ইরান, খররাজি এক বিবৃতিতে জানান।
দেশটির প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান এবং পারমাণবিক কর্মসূচির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ফখরিজাদেহ। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের আগে অনেকেই তার পরিচয় জানতেন না। তবে যারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজর রেখেছেন, ফখরিজাদেহের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের ভালোভাবেই জানা রয়েছে।
ওই আচমকা হামলার সময় তার সঙ্গে থাকা দেহরক্ষীর সংখ্যাই বলে দেয়, ইরানে তিনি শুধু একজন পরমাণু বিজ্ঞানীই নন, বরং রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।
শীর্ষ এই পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার ঘটনায় ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।
- সূত্র: সিএনএন ও রয়টার্স