কর বহির্ভূত অর্থ সাদা করেছেন ৩,৩৫৮ জন
মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বাড়ানো হয়। সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে গত ২৯ নভেম্বর নাগাদ ৩,৩৫৮ জন তাদের কালো টাকা সাদা করিয়েছেন।
ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করেছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কর। কিন্তু, কী পরিমাণ কর বহির্ভূত অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে সংক্রান্ত তথ্য সংস্থার কাছে নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে টাকা সাদা করা হয়েছে তার পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া হাতেগোণা কিছু মধ্যবিত্ত তাদের কর বহির্ভূত আয় পুঁজিবাজার আর আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছে।
বড় মাছেরা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার এই সুযোগ গ্রহণ করেনি বলেই তারা জানাচ্ছেন।
নীতি গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ''আগে থেকেই আমরা এই অনুমান করেছিলাম। কারণ, আমাদের জানাই ছিল সামান্য পরিমাণ কালো টাকাই বিনিয়োগ করা হবে।''
ধনীরা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিচ্ছেন না, বলেই তিনি যোগ করেন।
কালো টাকা বৈধ করার জন্য এই সুযোগটি নিরর্থক হয়ে উঠেছে, যা শেষ পর্যন্ত ভালো করদাতাকে কর প্রদান থেকে নিরুৎসাহিত করবে।
চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সরকার ১০ শতাংশ কর দিলেই পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও অন্যান্য সিক্যুইরিটি-সহ ব্যাংকে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়।
এছাড়া, গোপন অস্থাবর সম্পত্তির স্থান ও দরের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে কর দিয়েও তা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়।
এনবিআর সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছর প্রায় ১৩৮জন তাদের কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাদা করেছেন। অন্যদিকে ৩,২২০জন আবাসন ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু উদ্যোগগুলির বেশিরভাগই ধনী কালো টাকার মালিকদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাড়ে ৪শ' কোটি টাকা সম-পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা হয়। কিন্তু, তারপর থেকে এই ব্যাপারে কোনো তথ্য রাখা হয়নি।
তবে এনবিআর জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৯ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়। আর ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ ৪৪ বছরে এভাবে মোট ১৩,৩৭২ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের আয় হয় ১,৪৫৪ কোটি টাকা।
দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ কালো টাকা আছে তার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানও নেই। এর আগে ২০১০ সালে অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এর পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ বলে জানানো হয়।
এই অর্থের সিংহভাগই চলে যেতে পারে দেশের বাইরে। এমন কথাই জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদন। সংস্থাটির মতে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ শুধু দশ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাদের অনুমান প্রতিবছর এদেশ থেকে পাচার হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৮ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বার্ষিক ৫-৭ লক্ষ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ লেনদেন করা হচ্ছে।