দাবানলে পুড়ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম স্যান্ড আইল্যান্ড
ছয় সপ্তাহ ধরে দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা ফ্রেজার আইল্যান্ড। আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ইতিমধ্যেই দেশটির পূর্বাঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
দাবানলের কারণে ঐ অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে পর্যটন ও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সম্পর্কিত জিনিসপত্র, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে আশেপাশের বনাঞ্চল।
আগুন ছড়িয়ে পড়ায় মঙ্গলবার সকালে এক জরুরি নোটিশে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের পুর্বাঞ্চলে দ্বীপের অধিবাসীদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগুনের হলকা কমাবার জন্যে ইমার্জেন্সি ক্রু'রা ওয়াটার বম্ব ব্যবহার করলেও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা জানিয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কুইন্সল্যান্ড আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করলেও ঝড়ো বাতাসের কারণে আগুন আরও ছড়িয়ে যাচ্ছে, ফলে আগামী কয়েকদিনও এই হিটওয়েভ থাকবে।
সিএনএন এর খবর অনুযায়ী, ফ্রেজার আইল্যান্ডে অননুমোদিত এক ক্যাম্পফায়ারের আগুনের শিখা থেকে সৃষ্ট এ দাবানলে প্রায় ৭৬ হাজার হেক্টরের মত এলাকা পুড়ে গেছে।
স্থানীয়ভাবে কে'গরি নামে পরিচিত এই দ্বীপটি ১৯৯২ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর মর্যাদা পায় এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম বালি দ্বীপ যেখানে বালির উপর বিশালাকার রেইনফরেস্ট জন্মায়। এই দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার বাস্তুসংস্থানে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফ্রেজার আইল্যান্ডের গঠনাকৃতিই এই দ্বীপটিতে আগুন নেভানোর কাজটি কঠিন করে তুলেছে। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ক্ষয়ক্ষতি কমানোর। মূল কুইন্সল্যান্ড এলাকা ও নিউ সাউথ ওয়েলস এর দিকেও ডজন ডজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাজ করছেন।
উচ্চ তাপমাত্রার ফলে হতে পারে আরো একটি দাবানল!
অস্ট্রেলিয়ায় বসন্তকালীন তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ইতোমধ্যেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে উঠেছে। নিউ সাউথ ওয়েলস, নর্দার্ন ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রিরও বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে এবারের বসন্ত অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উষ্ণতম ছিল। সিডনিতে শনিবার রাতে ২৫.৩ ডিগ্রী এবং পরদিন রবিবার ৪০ ডিগ্রীরও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
দাবানল অস্ট্রেলিয়ায় একটি অতি পরিচিত ঘটনা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ক্রমেই শুষ্কতর হচ্ছে এবং একটি দীর্ঘ সময় ধরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রচন্ড অভাব দেখা দিয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৯, এই সাত বছরের মধ্যে গত বছরই ছিল অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।
২০১৯-২০২০ সালের দাবানল যা 'ব্ল্যাক সামার' নামে পরিচিত, সেটিই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল। এই দাবানলে ১২ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা পুড়ে যায় এবং কমপক্ষে ৩৩ জন মানুষ ও ১ বিলিয়ন প্রাণীর মৃত্যু হয়।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর ও সিএসআইআরও রিপোর্ট ২০২০ থেকে জানা যায় যে, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ায় যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে তাতে এরকম দাবানল বারবার হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্লাইমেট সায়েন্স অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউট এর ডিরেক্টর বিল হেয়ারের মতে এ ধরণের ভয়াবহ দাবানল যদি আবার হয় তাহলে তা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি ও জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত খারাপ প্রভা্ব বয়ে আনবে , যেহেতু পূর্বের দাবানলের ক্ষয়ক্ষতিই এসব অঞ্চলের মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।