এবার পেঁয়াজের বীজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/12/03/onion_seeds.jpg)
পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার মুখে দুই দফা তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয় বাংলাদেশ। সেই শিক্ষা নিয়েই চার বছরের মধ্যে দেশকে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু, সেই লক্ষ্যমাত্রা পড়তে চলেছে আরেকদফা বাঁধার মুখে।
দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশটি এবার পেঁয়াজের বীজ রপ্তানিতেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে বীজ সঙ্কটে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ উৎপাদনের সরকারি পরিকল্পনা সফল হবে কিনা- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ইতোপূর্বে, সবজি জাতীয় ফলসটিতে স্বনির্ভরতা অর্জনে চার বছর মেয়াদি এক কর্মপরিকল্পনার আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও পেঁয়াজের বীজ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুম থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হবে। তবে ওই মৌসুম অনুসারে দেশে জলাবদ্ধতা সহযোগী পেঁয়াজ বীজের কোনো মজুত নেই বললেই চলে।
অপরপক্ষে, ভারত হচ্ছে এই ধরনের বীজের প্রধান উৎস, কারণ দেশটির অধিকাংশ পেঁয়াজ আবাদ গ্রীষ্মকালেই হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রায় একইরকম জলবায়ুর কারণে ভারতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ কোনো রকম পরীক্ষা- নিরীক্ষা ছাড়াই বাংলাদেশে একই মৌসুমে রোপণ করা সম্ভব। কিন্তু, জলবায়ুগত মিল না থাকায় তা অন্যদেশ থেকে তা আমদানি করে পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি উৎপাদনে গেলে ব্যর্থতার ঝুঁকিই বেশি।
গত ২৯ অক্টোবর ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে পেঁয়াজের বীজ রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অবশ্য অবরোধটি তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে ভারত সরকারকে একটি চিঠিও দিয়েছে।
বাংলাদেশে এতদিন প্রচলিত পদ্ধতিতে শুধু রবি (শীতকালীন) শস্য হিসাবেই পেঁয়াজের আবাদ হতো। ফলে গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় তীব্র পেঁয়াজের সঙ্কট। বাজারমূল্য লাভ করে আগুনগতি। এই অবস্থা নিরসনেই পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রণালয় গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ চাষাবাদের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মন্ত্রণালয় আগামী গ্রীষ্মে প্রথমবারের মতো ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সে লক্ষ্যে দেশে ৩.৫ টন বীজ প্রয়োজন। তবে এ মৌসুমে এটি চাষের উপযোগী বীজ মজুত আছে মাত্র ২ টন।
দুটি সরকারি গবেষণা ইনস্টিটিউট গ্রীষ্মকালীন চাষের উপযোগী দুটি জাতের পেঁয়াজ - বারি পেঁয়াজ -৫ এবং বিনা পেঁয়াজ -১ উদ্ভাবন করেছে।
তবে, এই জাতগুলি থেকে বীজ উত্পাদন করতে এবং কৃষকদের পর্যায়ে বিতরণ করতে ২-৩ বছর সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই, বীজ সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে গত সপ্তাহে বেসরকারি বীজ বিপণনকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কৃষি সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম।
তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে তারা বীজ আমদানি করতে পারবে না।
এঅবস্থায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই-কমিশনার বিশ্বজিৎ দে'র সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সাক্ষাৎ করেন কৃষি সচিব। এসময় সচিব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশে ৩৩.৫ টন পেঁয়াজের বীজ পাঠানোর অনুরোধ করেন।
এব্যাপারে কৃষি সচিবের প্রতিক্রিয়া জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু, তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এশিয়া সিডের ব্যবসা পরিচালক সুধীর চন্দ্র নাথ বলেন, ''গত বছর আমরা সরকারকে ২০টন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেই অনুসারে দুটি প্রজাতির নমুনা এনে তা মাদারিপুরে পরীক্ষামূলক চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় আমরা আর আমদানি করতে পারছি না।''
তিনি আরো জানান, ''অন্যান্য বীজ ব্যবসায়ী সংস্থা এদেশে গ্রীষ্মকালে আবাদ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত এজাতের বীজ আমদানি করেনি। ভারত নিষেধাজ্ঞা উঠালে আমরা ৫-১০ টন বা তার বেশি বীজ আমদানি করে সরকারের কাছে সরবরাহ করব। এছাড়া, আমরা ফিলিপাইন ও মিয়ানমার থেকেই আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।''
লাল তীর সিড লিমিটেড-এর জেনারেল ম্যানেজার এমএ রশিদ জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে বারি ও বিনা বীজ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাতে ২-৩ বছর লেগে যেতে পারে।
সময়মতো ভারত তার বীজের বাজার রপ্তানির জন্য উন্মুক্ত না করলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের সময় বীজ সঙ্কট দূর হবে না, বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।