চীনে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি ৪ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার স্থগিত
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া জীবন্ত কাঁকড়া ও কুঁচিয়াতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে চীন। এ কারণে গত অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ থেকে এ দুটি পণ্য আমদানি স্থগিত রেখেছে দেশটি।
চীনের বাজারে নতুন করে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি চালু করতে তৎপরতা শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য চীনের দেওয়া শর্ত মেনে মান নিশ্চিত করে রপ্তানি করতে পাঁচটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত অক্টোবরে রপ্তানি হওয়া একটি জীবন্ত কুঁচিয়ার কনসাইনমেন্টে মাত্রাতিরিক্ত এস্ট্রাডিয়ল এবং তিনটি জীবন্ত কাঁকড়ার কনসাইনমেন্টে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম পায় চীন। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ অক্টোবর থেকে এ দুটি পণ্য আমদানি স্থগিত করেছে জেনারাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাস্টমস অব চায়না।
একই কারণে গত জুনেও বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া আমদানি স্থগিত রেখেছিল চীন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সমন্বিত উদ্যোগে গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আবার চালু হয়।
ক্ষতিকর উপাদানের কারণে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চীনের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া আমদানি বন্ধ করার ঘটনাটিকে খুবই অনভিপ্রেত এবং এতে দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা মূল্যমানের চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চিংড়ি। এরপরেই কাঁকড়ার অবস্থান। গত অর্থবছর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যার বড় অংশ গেছে চীনে।
খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাঁকড়া চাষ হয়। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করে জীবন্ত রপ্তানি করেন ব্যবসায়ীরা। অধিক পরিমাণ কাঁকড়া ও কুঁচিয়া একসঙ্গে প্যাকেট করায় তাতে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সচিব বলেন, চীনে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি জটিলতার বিষয়টি রপ্তানিকারকরা আগে থেকেই জানতেন। তারপরেও এমন ক্ষতিকর উপাদানের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি করা অনভিপ্রেত।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ জানান, অধিদপ্তরের ল্যাবে অক্টোবরে এস্ট্রডিয়ল পরীক্ষার সুবিধা ছিল না। তাই রপ্তানির মৎস্য পণ্যে এতদিন এস্ট্রডিয়লের পরিমাণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন এস্ট্রডিয়ল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাই পরীক্ষা করে চীনে কাঁকড়া, কুঁচিয়া রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনে আবারও কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি চালু করতে জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাস্টমস অব চায়না রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেল্ফ ইন্সপেকশন ও সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একাধিকবার প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং তাদের নিয়ে কর্মশালারও আয়োজন করেছে।
চীনে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানির কমপ্লায়েন্স মেনে যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রপ্তানি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, তাদের সঙ্গে গত ৩০ নভেম্বর সভা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে চীন নির্ধারিত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করবে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিদর্শন দল। চীনে জীবন্ত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানির জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
পাঁচ প্রতিষ্ঠানের একটি, এসআর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চীন রপ্তানি স্থগিত করার পর সেপ্টেম্বর মাসে তার প্রতিষ্ঠান থেকেই পরীক্ষামুলকভাবে প্রথম কুঁচিয়া রপ্তানি হয়। মোট সাতটি কনসাইনমেন্টের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৩৯৫ কেজি কুঁচিয়া সে সময় তিনি রপ্তানি করেন, যার সবগুলোই গুণগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চল থেকে সংগৃহীত কুঁচিয়ায় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি কম থাকে। তাছাড়া গুণগত মান ঠিক রাখতে প্যাকেটে সঠিক পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করতে হয়।
আরাফ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি শুধু জীবন্ত কাঁকড়া রপ্তানি করেন। তার প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা কাঁকড়া কখনো বিদেশ থেকে ফেরত আসেনি। চীনের নতুন নিয়ম-কানুন মেনে তিনি রপ্তানি করতে সক্ষম।