রানির প্রাসাদে 'ভদ্রলোক' চোর!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/01/05/buckingham_3.jpg)
ব্রিটিশ রানির এক কর্মচারীকে রাজস্মারক চুরির দায়ে সোমবার জেলে পাঠানো হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেস থেকে প্রায় এক লাখ পাউন্ড সমমূল্যের স্মারক তিনি চুরি করেন।
এডামো ক্যান্টো (৩৭) নামের ওই কর্মচারী প্রায় এক ডজন সামগ্রী সরিয়েছেন প্রাসাদ থেকে, যার মধ্যে প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেড মিডলটনের স্বাক্ষর করা ছবি থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজভোজের ছবিও রয়েছে ।
প্রাসাদের ক্যাটারিং সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ওই ব্যক্তি চোরাই এসব রাজকীয় সামগ্রী হাট-বাজারে নয়, নিলামের অনলাইন সাইট ই-বে'তে বিক্রয়ের জন্য দিতেন!
অনলাইন নিলাম সাইটটিতে ৩৭টিরও বেশি রাজকীয় সামগ্রী বিক্রয় করে তার আয় দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭০০ পাউন্ডেরও বেশি। এসবের মাঝে রানির মাস্টার অব দ্য হাউজহোল্ড, নেভির অবসরপ্রাপ্ত ভাইস এডমিরাল স্যার এন্টনি জনস্টোন বার্টের একটি মেডেলও রয়েছে।
নর্থ ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা ওই কর্মচারী তাঁর তিনটি চুরির ঘটনা স্বীকার করেন এবং সোমবার তাকে আট মাসের সাজা দেওয়া হয়।
ক্যান্টো নভেম্বর ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২০-এর মধ্যকার সময়ে কীভাবে এত সামগ্রী চুরি করলেন, তা ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বাকিংহাম প্যালেসের হেঁশেলে ২০১৫ সাল থেকে কর্মরত ছিলেন তিনি।
বাকিংহাম প্যালেসে ক্যান্টোর আবাসস্থলে তল্লাশিকালে প্রাসাদ থেকে চুরি যাওয়া 'উল্লেখযোগ্য পরিমাণ' সামগ্রী খুঁজে পায় পুলিশ। ৭৭টির মতো সামগ্রী রাজবাড়ির দোকান থেকে চুরি করা হয়। বাকিগুলো ক্যান্টো সংগ্রহ করেন স্টাফদের লকার, লিনেন রুম, টিকিট অফিসের রাজ সংগ্রহশালা, রানির গ্যালারি শপ এবং ডিউক অব ইয়র্কের স্টোররুম থেকে।
চুরি যাওয়া সামগ্রীর ভেতরে ছিল ব্রোচ, দুটি স্বর্ণের পকেট ওয়াচ নেকলেস এবং একটি বাকিংহাম প্রাসাদের লিমিটেড এডিশন পকেট ঘড়ি।
এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার মেজর জেনারেল ম্যাথিউ সাইকসের একটি রয়াল ভিক্টোরিয়ান অর্ডার কমান্ডারও তিনি হাতসাফাই করে বদলে দিয়েছেন।
চুরির তালিকা এখানেই থেমে নেই! টিফানির একেবারে নিখাদ কলম, সিল্কের পায়জামা, কাফলিং, ডিউক অব ইয়র্কের জন্য ফরমায়েশ করা স্যামসাং কোম্পানির একটি বিশেষ মোবাইল ফোনও চুরির তালিকা থেকে বাদ যায়নি।
'বিশ্বের প্রথম ভাঁজকৃত (ফোল্ডিং) মোবাইল ফোন' শীর্ষক ওই ফোন মার্কিন এক ক্রেতার কাছে তিনি ৬০০ পাউন্ডেরও কমে বেচে দেন তিনি।
বিচারক ডেভিড টমলিনসন জানতে পারেন, চুরি যাওয়া আইটেমের প্রত্যেকটিই একটি অন্যটি থেকে আলাদা ছিল এবং সেগুলোকে সত্যিকার মূল্যমানের কাছাকাছি দামেই বিক্রয় করা হয়েছিল। এগুলোর সামগ্রিক মূল্যমান ১০ লাখ পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবার কথা।
তবে ক্যান্টোকে বিচারক বলেন, 'আর্থিক দুরবস্থার দরুন হয়তো এটিই ছিল আপনার জন্য একমাত্র উপায়।'
'এ মুহূর্তে কারাদণ্ডের মতো শাস্তি আপনার জন্য অত্যন্ত দুর্বহ হবে এবং আমি নিশ্চিত আপনার কর্মফলের ভয়াবহতা সম্পর্কে আপনি অবগত ছিলেন না।'
'আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে আপনাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসাই হয় ন্যায়সঙ্গত,' বলেন বিচারক।
ক্যান্টোর আইনজীবী হাওয়ার্ড কোহেন তার পক্ষ সমর্থন করে, ক্যান্টোকে লঘু সাজা দেবার অনুরোধ করেন; তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন ক্যান্টোর অতীতের কৃতকর্মের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে।
নর্থ ইয়র্কশায়ারে স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের (ডিমেনশিয়া) একটি কেয়ার হোম ছিল তার প্রাক্তন কর্মস্থল এবং সেখানকার প্রাক্তন সহকর্মীদের প্রত্যেকেই তাকে নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/01/05/37586238-9111653-image-m-84_1609779119368.jpg)
কোহেন বলেন, 'আদালত আজ ৩৭ বছর বয়সের এমন একজনকে বিচারের দ্বারপ্রান্তে এনেছেন, যার পূর্বের সব ঘটনাই তার অনবদ্য চরিত্রের সাক্ষী বহন করে।'
'ইয়র্কশায়ারের স্কারবোরোয় বেড়ে ওঠা এই মানুষটির কর্মজীবনের শুরুটাই হয় সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সেবার মাধ্যমে।'
নর্থ ইয়র্কশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কেয়ার হোমে তিনি ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মুখ্য প্রযুক্তিবিদের ভূমিকা পালন করেন। সেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো।
'পূর্বের কর্মস্থলের নিয়োগকর্তারা তার পেশাদারি কর্মদক্ষতা, সততা এবং বিশ্বস্ততার পক্ষে কথা বলেছেন,' আদালতকে জানান ক্যান্টের আইনজীবী।
ক্যান্টো ২০১৫ সালে লন্ডনে আসেন এবং বাকিংহাম প্যালেসের হেঁশেলে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সহসাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
'লন্ডনে আসার পরপর নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই তার জন্য মুশকিল হয়ে পড়েছিল,' যোগ করেন কোহেন।
'প্রাসাদে তিনি ন্যূনতম বেতন পেতেন এবং জীবন নিয়ে তার যে উচ্চাশা ছিল, সেখানে তিনি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।'
'অভাব ও সংগ্রামের দিনগুলোতে অবশ্য তার উচিত ছিল স্কারবোরোতে বন্ধু ও পরিবারের সামনে নিজেকে মেলে ধরা,' মন্তব্য কোহেনের।
চুরির প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'এটি কোনো পেশাদারি চুরি ছিল না। তিনি নিলামের ওয়েবসাইটটিতে নিজের নাম ও ঠিকানাই ব্যবহার করেছিলেন। ফলে তাকে খুঁজে বের করা পুলিশের জন্য কঠিন ছিল না।'
'তিনি দুঃসময়ে তার ঋণের বোঝা লাঘবের জন্য এমন হীন একটি কর্মপন্থা অবলম্বন করেন, যে কাজের জন্য এখন দুঃখ ও ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই।'
কোহেন আরও বলেন, ক্যান্টো এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮০০ পাউন্ডের মতো ঋণ শোধ করেছেন। তার সেই মোবাইল ফোনের মার্কিন ক্রেতা বুঝেছিলেন, ওই পণ্য বিশেষ; কিন্তু সেটি যে এত দুর্লভ, তা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি।
ওই ক্রেতার ধারণাতেও ছিল না যে, এই ফোন আসলে ডিউক অব ইয়র্কের জন্য ছিল।'
ক্যান্টোর আইনজীবীর মতে, এই লোক এতটাই নিষ্পাপ, তার জন্য কারাগারে থাকাটাও হবে সংগ্রামের!
বিচারকের রায় আসার পর নীরবে কাঠগড়ায় মাথা ঠেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যান্টো।
সূত্র: মেইল অনলাইন