ক্যাপিটলে হামলা যুক্তরাষ্ট্রের 'দ্য নাইট অব ব্রোকেন গ্লাস': শোয়ার্জনেগার
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলাকে জার্মানিতে নাৎসিদের প্ররোচিত ক্রিস্টালনাচের সহিংসতার সাথে তুলনা করেছেন বিখ্যাত অভিনেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। ১৯৩৮ সালের এ ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা সিনাগগে হামলা চালায় এবং ইহুদিদের মালিকানাধীন বাড়ি ও দোকান-পাট ভাংচুর করে।
রোববার টুইটারে এ ভিডিও বার্তা পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ১০ কোটি ২ লাখ ভিউ হয়। প্রায় ৮ মিনিট দীর্ঘ এ ভিডিও বার্তার শুরুতেই তিনি 'দ্য নাইট অব ব্রোকেন গ্লাস' নামে পরিচিত ক্রিস্টালনাচের সহিংসতার ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। সে রাতে ইহুদিদের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা, ইহুদিদের লাইন বেঁধে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো, হত্যা; এসব ঘটনা পরবর্তী সময়ে নিজের দুঃসহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
"গত বুধবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের 'দ্য নাইট অব ব্রোকেন গ্লাস," বলেন শোয়ার্জনেগার। "ইউরোপ থেকে আসায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কী হতে পারে তা আমি সরাসরি দেখেছি।"
শোয়ার্জনেগার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার দুই বছর পর অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। নাৎসিদের কর্মকান্ডে অংশ নেয়া জনতার মধ্যেই বড় হয়েছেন তিনি।
"ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস সরকারের ঘৃণ্য কর্মকান্ডে অংশ নেয়া জনতার মধ্যে বেড়ে ওঠার সময়ে আমি দেখেছি, তারা মদ্যপান করে অপরাধবোধ ভুলে থাকতে চাইতেন। তাদের সকলেই ইহুদি বিরোধী ছিলেন এমনও নয়, কিন্তু তারা সকলেই সে রাতে ঘৃণ্য হামলায় অংশ নিয়েছিলেন,"
শোয়ার্জনেগার কয়েক দশক পর জানতে পারেন তার বাবা ছিলেন নাৎসি পার্টির সদস্য। যুদ্ধের পর তার বাবার পরিবারের সাথে আচরণ, ক্রোধ, পরিবারের সদস্যদের সাথেও সহিংস আচরণ; শৈশবের এসব অভিজ্ঞতার কথা বলেন তিনি। তার প্রতিবেশিরাও এমনটাই ছিল, একারণে তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এটিই স্বাভাবিক।
"তাদের সবাইকে মিথ্যা দিয়ে প্ররোচিত করা হয়। এবং এসব মিথ্যা পরিস্থিতিকে কোনদিকে নিয়ে যেতে পারে তা আমি দেখেছি,"
"ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যর্থ নেতা, ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবেই তার নাম লেখা থাকবে।" বলেন তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক এ গভর্নর রিপাবলিকান সমর্থক হলেও, বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় ট্রাম্পের সমর্থনে থাকা রিপাবলিকান পার্টির সদস্যের নিন্দা জানান তিনি।
ক্যাপিটলে হামলার কয়েক ঘন্টা পরেই আবার অধিবেশন শুরু হওয়ার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি একে 'গণতন্ত্রের অপূর্ব নিদর্শন; আখ্যা দেন।
ভিডিও বার্তার শেষের দিকে ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত 'কোনান দ্য বারবারিয়ান' চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করে ডেস্ক থেকে একটি তলোয়ার বের করে বলেন, 'এটিই সেই কোনান তলোয়ার'। "হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে, গরম করে ঠান্ডা হওয়ার পরই তলোয়ার আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে,"
"আমাদের গণতন্ত্র এ তলোয়ারের ইস্পাতের মতোই। যতো আঘাত করা হবে, আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।" বলেন তিনি।