নরওয়েতে ফাইজারের ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ২৩ জন বয়স্ক রোগীর মৃত্যু: অনুসন্ধান শুরু
বয়স্ক ও দুর্বল রোগীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নরওয়ের চিকিৎসকদের। ভ্যাকসিন গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই ২৩জনের মৃত্যুর পর এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
নরওয়েজিয়ান মেডিসিনস অ্যাজেন্সি'র মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্টেইনার ম্যাডসেন বলেন, "এটি কাকতালীয় ব্যাপারও হতে পারে, আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তাদের মৃত্যু ভ্যাকসিনের সাথে সম্পর্কিত এব্যাপারে এখনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।"
এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এমআরএনএ ভ্যাকসিনের জ্বর, বমিভাব ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গগুলো কিছু বয়স্ক ও দুর্বল রোগীদের গুরুতর পরিণতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
"যেসব সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তরুণ ও সুস্থসবল রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়; বয়স্কদের ক্ষেত্রে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রকোপে সুপ্তাবস্থায় থাকা অন্য রোগ ঝুঁকির কারণ হয়েছে, এমন আশঙ্কা রয়েছে," বলেন ম্যাডসেন।
"তবে আমরা এব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত নই, এধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু বয়স্ক ও গুরুতর রোগে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে," বলেন তিনি।
"আমরা চিকিৎসকদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি, তবে আগে থেকেই গুরুতর অসুস্থ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা আছে এমন রোগীদের ভ্যাকসিনের প্রদানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্যায়নের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।" যোগ করেন তিনি।
এ মূল্যায়নের মাধ্যমে এসব রোগীদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকির সম্ভাব্যতা পরিমাপের মাধ্যমে ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যাপারে তাদের পরিবার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
গত কয়েক সপ্তাহে নরওয়েতে ২০ হাজারের বেশি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, দেশটিতে সাধারণত প্রতি সপ্তাহে কেয়ার হোম বাসিন্দাদের ৪০০ জন মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে, ভ্যাকসিন দেয়ার পর ১০ জন রোগীর মৃত্যুর ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে জার্মানির পল এহরলিচ ইনস্টিটিউট।
ভ্যাকসিন দেয়ার মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি অ্যাজেন্সি (এমএইচআরএ) জানিয়েছে, অনুমোদিত সব কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের যেকোনো পার্শ্বপ্রক্রিয়ার ঘটনার রেকর্ড রাখা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে সংগৃহীত তথ্যের মূল্যায়নসহ এসব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে। বিদ্যমান তথ্যানুযায়ী, গুরুতর কোনো ঝুঁকির কথা জানা যায়নি বলে জানানো হয়।
ফাইজার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'ফাইজার ও বায়োএনটেক এ ঘটনার ব্যাপারে অবগত আছে, আমরা সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সংগ্রহ করে মূল্যায়নের জন্য নরওইয়েজিয়ান মেডিসিনস অ্যাজেন্সির সাথে কাজ করছি।'
বিবৃতিতে বলা হয়, 'নরওয়েজিয়ান কর্তৃপক্ষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নার্সিং হোমের বাসিন্দাদের ভ্যাকসিন দিচ্ছে। এসব রোগীর বেশিরভাগই বয়স্ক ও অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। এধরনের ঘটনার সংখ্যা এখনো উদ্বেগজনক নয় বলেই জানিয়েছে নরওয়েজিয়ান মেডিসিনস অ্যাজেন্সি। এসব মৃত্যু ভ্যাকসিনের সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নিশ্চিত হতে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাবে সংস্থাটি। রোগীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় ভ্যাকসিন প্রদানের নির্দেশনা পরিবর্তন করবে দেশটির সরকার। শোকার্ত পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা।'
- সূত্র: ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল