দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই ‘মুসলিম ব্যান’ বাতিলসহ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরাবেন বাইডেন
নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই ট্রাম্প আমলের কালো ছায়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন। জয়ের পর এবার তা পূরণের পালা। আর দৃঢ় সংকল্পের জন্য পরিচিত এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনগুলোতে সেসব পালনেই ব্যস্ত সময় কাটাবেন এমন ইঙ্গিত মিলছে।
আগামী ২০ জানুয়ারি তার আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ। সেদিন থেকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর পদটি লাভ করবেন তিনি।
বাইডেন ইতোপূর্বে বলেছেন, ওভাল অফিসে প্রবেশ করা মাত্রই রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ বলে ট্রাম্প আমলের একাধিক নীতিমালা বাতিল করবেন। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র চলবে বিজ্ঞানের পথে, সমৃদ্ধির দিকে। শপথ করেন বিশেষ কিছু প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যাপারেও।
তার মধ্যে অন্যতম ছিল; মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা, মুসলিম প্রধান কিছু দেশ থেকে ট্রাম্প আমলে জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত।
এসব পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী শুনতে হলেও, ক্ষমতাগ্রহণের প্রথমদিনেই এসংক্রান্ত বেশকিছু নির্বাহী নির্দেশ জারি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন লিখিত এক কর্মতালিকায় এসব কথা জানিয়েছেন। ফলে বোঝাই যায়, কট্টর ট্রাম্প সমর্থকদের হতাশার বোঝা বাইডেন প্রথম দিন থেকেই বাড়িয়ে তুলবেন।
রন ক্লেইন যেন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিলেন ট্রাম্প শিবিরের দিকে।
২০১৭ সালে ট্রাম্প ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা দেন, তা 'মুসলিম ব্যান' নামেই কুখ্যাতি অর্জন করে। ডেমোক্রেট শিবির এবং মার্কিন বুদ্ধিজীবী সমাজও এ পদক্ষেপকে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণ বলে নিন্দা জানায়। জো বাইডেন এটি তার ক্ষমতাবলে রদ করার আদেশ দেবেন।
ট্রাম্পের শাসনামলেই নিষেধাজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন এলেও তা বাতিল করা হয়নি। এমনকি আদালতের আইনী লড়াইয়েও তা রক্ষা পায়। কিন্তু, বাইডেন তার অবসান ঘটাতে দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আদেশ হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় যোগদান নিয়ে। ওভাল অফিসে ঢুকে তার প্রথম নির্দেশ হবে এটাই।
২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোসহ পরিবেশ সহায়ক অন্যান্য নীতি বাস্তবায়নের বৈশ্বিক অঙ্গীকার করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতি ও গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তির এভাবে চুক্তিত্যাগ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল সেসময়। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল বিশ্বনেতাই এর তীব্র নিন্দা জানান।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী রাজনীতিকরা এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন একে "স্রেফ মুর্খতা" বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ক্লেইন লিখিত মেমোটি বার্তা সংস্থা সিএনএনের হাতে এসেছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, "নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বাইডেন তার দেওয়া জরুরি অঙ্গীকারগুলো পূরণের মাধ্যমে চলমান সঙ্কট সুরাহায় অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্তব্যে কোন ছাড় না দিয়ে তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। মন্ত্রী পরিষদ নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর প্রতি দেওয়া এসব নির্দেশনা হবে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেরই প্রতিফলন।"
অন্য আরেক নির্বাহী আদেশে মহামারীর মধ্যে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ করবেন তিনি। ছাত্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রাখার ঘোষণার পাশপাশি থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত সকল স্থাপনায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নিয়ম।
শুরু থেকেই অভিবাসন নীতি সংস্কার এবং এক লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের করোনাভাইরাস প্রনোদনা বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছেন বাইডেন। সঙ্গে মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রমুখী শরণার্থীদের দুর্দশা প্রথম দিন থেকেই লাঘব করার ইঙ্গিত দেন তিনি।
- সূত্র: ডেইলি মেইল