বিসিবির নতুন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তৃতীয় নির্বাচক হিসেবে আব্দুর রাজ্জাক ও শাহরিয়ার নাফিসের নাম শোনা যাচ্ছিল বেশ আগে থেকে। অবশেষে তৃতীয় নির্বাচক চূড়ান্ত করেছে বিসিবি। পদটির জন্য সাবেক স্পিনার রাজ্জাককে বেছে নিয়েছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ১০ মাস পর বুধবার অনুষ্ঠিত বিসিবির বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে বিসিবি। এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রাজ্জাককে নির্বাচক প্যানেল যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় নির্বাচক হিসেবে কাজ করবে সে।'
আব্দুর রাজ্জাকও জানালেন নির্বাচক পদে দায়িত্ব পাওয়ার কথা। দেশের ক্রিকেটের সফলতম এই স্পিনার বলেন, 'সন্ধ্যায় খবরটি পেয়েছি। অনেক দিন আগে মৌখিক প্রস্তাব পেয়েছি। সেটাও প্রায় এক বছর আগে। খুব ভালো লাগছে। আমি ক্রিকেটের মানুষ, আজীবন ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে চাই। নির্বাচকের দায়িত্ব পাওয়া অনেক বড় সম্মান। আমার প্রতি আস্থা রাখায় বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা।'
বিসিবির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন হাবিবুল বাশার সুমন। নির্বাচক ছিলেন সাজ্জাদ আহমেদ শিপনও। দেশের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলা সাবেক এই ক্রিকেটারকে ২০১৭ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই পদটি ফাঁকা। অবশেষে রাজ্জাককে দিয়ে শূন্যস্থান পূর্ণ করলো বিসিবি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এখনও অবসর নেননি রাজ্জাক। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি নিয়মিত পারফর্মার। করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছেন রাজ্জাক। নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেও খেলে যেতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তিনি।
রাজ্জাক বলেন, 'খেলা চালিয়ে যাব নাকি ছাড়ব, এখনও জানি না। কারণ বোর্ড থেকে এটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি এখনও। আমিও সেভাবে ভাবিনি। কোভিডের কারণে অনেক দিন ধরে আমরা খেলতে পারছি না, এর মধ্যেই নির্বাচক হওয়ার সুযোগ এসেছে। আমি রাজি হয়েছি। কিন্তু খেলা ছাড়া নিয়ে কোনো কিছু ভাবিনি। দেখা যাক, একটু ভেবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।'
দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে জানিয়ে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেন, 'আমি আমার মতোই চেষ্টা করব। যতটা পারি নিজের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব। সর্বোচ্চ সৎ থেকে কাজটি করার চেষ্টা করব। আমার কথাতেই সব হবে, এমন তো নয়। আমার যতটুকু সুযোগ থাকবে, অবদান রাখার চেষ্টা করব। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে যোগ্যরা যেন সুযোগ পায়, উপপুক্ত কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার।'
বাংলাদেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট, ১৫৩ ওয়ানডে ও ৩৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ওয়ানডেতে তার শিকার ২০৭ উইকেট। যা বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। দেশের বমোত্র স্পিনার হিসেবে ২০০'র বেশি ওয়ানডে উইকেটের মালিক রাজ্জাক। টি-টোয়েন্টিতেও তৃতীয় ও স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক তিনি। এই ফরম্যাটে তার শিকার ৪৪ উইকেট। অথচ ২০১৪ সালের পর কোনো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়নি তার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজ্জাকের বোলিং রীতিমতো বিস্ময় জাগানিয়া। বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে ৬০০'র বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১২৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে বাঁহাতি অভিজ্ঞ এই স্পিনারের শিকার ৬৩৪ উইকেট। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটেও রাজ্জাকের বোলিং রেকর্ড ঝলমলে। ২৮০টি ম্যাচে নিয়েছেন ৪১২ উইকেট। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার তিনি। সর্বোচ্চ ৪২১ উইকেটের মালিক ওয়ানডের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।