সেই কালের চিঠি
চিঠি এখন এমনিতেই সেকেলে ব্যাপার। একালে কেউ এখন আর চিঠি লিখে না, লিখার দরকার হয় না। চিরকুটও নেই। চিঠি সমাহিত হয়ে গেছে। কেমন ছিল সেকালের চিঠি, তা স্মরণ করতে কটা চিঠি সংক্ষিপ্ত কিছু টীকাসহ উপস্থাপন করা হলো। চিঠিগুলো স্বব্যাখ্যাত।
চিঠিতে ডেপুটি বাবুর জন্য বঙ্কিমের আয়োজন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ২৬ জুন ১৮৩৮ মুত্যু ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) নিজেও ডেপুটি ছিলেন, কাজেই সহকর্মী অপর এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদার বসু তার পিতৃভূমিতে সফরে যাবেন। তার সফর যাতে নির্বিঘ্ন হয় সেই আয়োজনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে ভ্রাতুষ্পুত্র জ্যোতিষচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখতে হল। তবে পরে উদ্ধারকৃত এ চিঠিতে বিভিন্ন নির্দেশের কথা থাকলেও চিঠিতে কোনো তারিখ নেই। চিঠিটি ১৮৮৫-র শেষভাগে বা ১৮৮৬-এর জানুয়ারিতে লিখিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিম বঙ্গ সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত বঙ্কিম রচনাবলী দ্বিতীয় খন্ড থেকে পত্রটি নেওয়া হয়েছে।
প্রাণাধিকেষু,
বারাসতের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদার বসু রবিবার দিন প্রাতে কাঁঠালপাড়ায় যাইবেন ও বৈঠকখানায় দুইদিন বাস করিবেন। বৈঠকখানাটি ঝাঁট দিয়া সাফ করাইয়া টেবিল চৌকি পাতিয়া রাখিবা। শয়নের জন্য একখানি তক্তপোষ পাতিয়া দিবা। রন্ধনের জন্য কোন চাল সাফ সরাইয়া রাখিবা, রাত্রিতে শয়নের জন্য আমার যেরূপ বিছানা দাও, সেইরূপ দিবা। কেদারবাবু বড় ভদ্রলোক, পরম বৈষ্ণব ও শুদ্ধাচার। তাঁহাকে আনাইবার জন্য স্টেশনে ৮টার ট্রেনে লোক উপস্থিত থাকিলে ভাল হয়।
কর্ত্তার সপিন্ড সময়ে সমাজ খাওয়ানো হয় নাই, আগামী বুধবার উদ্যোগ করার ইচ্ছা আছে, আম্র দধি ইত্যাদির বন্দোবস্ত রাখিবা। ভাল গ্লাস দেওয়ার জন্য কুম্ভকার ঠিক করিবা। কেদার বাবুকে আনিতে স্টেশনে তুমি নিজে গেলে ভাল হয়।
আং শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বেগম রোকেয়ার চিঠি
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল
৮৬-এ লোয়ার সার্কুলার রোড, কলিকাতা
৮ সেপ্টেম্বর ১৯১৫
স্নেহাস্পদা মরিয়ম,
তোমার ১ শে আগস্টের প্রাণ জুড়ানো চিঠিখানা পাইয়া পরম সুখী হইয়াছি। আমার মত জ্বলাপোড়া মরুভূমি তোমার মধুর স্নেহের যোগ্য নহে। তাই দেখ না, তোমার সরস চিঠিখানা মরুভূমি একেবারে শুষিয়া লইয়াছিল।
চিঠি না লিখাবার একমাত্র কারণ সময়ভাব। বুঝিতে পার এখন খোদার ফজলে পাঁচটি ক্লাস এবং ৭০টি ছোট-বড় মেয়ে, দুখানা গাড়ী, দুই জোড়া ঘোড়া, সহিস কোচম্যান ইত্যাদি ইত্যাদি সব দিকে একা আমাকে দৃষ্টি রাখিতে হয়। রোজ সন্ধ্যাবেলা সহিসেরা ঠিকমত ঘোড়া সামলাল কি না তাও আমাকে দেখিতে হয়।
ভগিনীরে। এই যে, হাড়ভাঙ্গা গাধার খাটুনি ইহার বিনিময় কি জানিস। বিনিময় হইতেছে "ভাঁড় লিপকে হাত ঝালা " অর্থাৎ উনুন লেপন করলে উনুন বেশ পরিস্কার হয়। কিন্তু যে লেপন করে তাহারই হাত কালিতে কালো হইয়া যায়। আমার হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পরিবর্তে সমাজ বিস্ফারিত নেত্রে আমার খুঁটিনটি ভুলভ্রান্তির ছিদ্র অন্বেষণ করিতে বদ্ধ পরিকর। ... আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা কেয়ামতের পরদিন দেওয়া হইবে। এখন পড়া তৈরী করিতেছি।
তোমার স্নেহের ভগিনী
রোকেয়া
বেগম রোকেয়া মরিয়মকে প্রাণধিকা মেরী, কল্যাণীয়া মেরী, স্নেহাস্পদা মেরী সম্মোধন করে লিখেছেন। ৫ জানুয়ারি ১৯২৬ সালে মেরীকে লিখেছেন, 'আমি যদি কিছু টাকা পাইতাম (ধর মাত্র দুই লক্ষ) তবে কিছু একটা করিয়া দেখাইতে পারিতাম। কিন্তু খোদা আমাকে কোন টাকা দেন নাই।'
১৯ আগস্ট ১৯২৬ লিখেছেন :'দাঙ্গায় আমরা প্রত্যক্ষ সহীদ হই নাই বটে কিন্তু পরোক্ষে অনেক ক্ষতি সহ্য করিতেছি। তন্মধ্যে প্রধান দুইটি এই: অনেক লোক কলিকাতা ত্যাগ করায় স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা কমিয়াছে, সহিস, কোচম্যান দারওয়ান প্রভৃতি চাকর পাওয়া যায় না।
২৪ মার্চ ১৯৩০ লিখেছেন : 'কিন্তু বোন গ্রীম্মাবকাশে আমার ত কোথাও যাবার যো নেই। এই যে স্কুল সংক্রান্ত রাশীকৃত office work এগুলো করবে কে? সুতরাং বেহেশতের নিমন্ত্রণ পেলেও তো স্কুল ছেড়ে যেতে পারবো না।
জীবনানন্দের মৃত্যু সংবাদে
১৯৫৪-র ১৪ অক্টোবর কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভেনিউতে ট্রাম চাপা পড়লেন জীবনানন্দ দাশ, মৃত্যুবরণ করলেন ২২ অক্টোবর। ২৫ ডিসেম্বর বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৬) বুদ্ধদেব বসুকে (১৯০৮-১৯৭৪) লিখলেন:
প্রিয়বরেষু,
কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু সংবাদে মর্মাহত হয়েছি- এ রকম নিদারুণ দুর্ঘটনার কোনো মানে পাওয়া যায় না। ওঁর কবিতার একটি ভারি আশ্চর্য রহস্যময় সুর ছিল, মনে হতো জীবনের বিচ্ছিন্ন বহু ঘটনার মূলে পৌঁছিয়ে তিনি সমস্তটাকে বলবার ভাষা তৈরি করেছেন। পড়তে পড়তে সেই একটি আকাঙ্খী সর্ববিধসঞ্চারী গাঢ় রঙ করা ভাষা আমরা তাঁর কবিতায় শুনতে পেয়েছি। আপাতবিরোধী উপমায়, মংগলপ্রত্যয়, ধ্বনির লাবণ্যে এবং নিগূঢ় অনির্দিষ্টতায় কতভাবে তিনি তাঁর বলবার ধ্বনি রেখে গেলেন। বাঙালির মনে বহুকাল ধরে সেই ধ্বনির মূর্তি জাগবে। ঘন জলের উপর দিয়ে ওড়া হাঁসের রেখা, কাঁচা ভিজে ধান, লোকজনের কথাবার্তা, এবং জল্পনার জটিল কারুজালে রচিত মূর্তি। ...যখনই জীবনানন্দের কবিতা পড়েছি মনে হয়েছে স্নিগ্ধ রোদ্দুরে আপ্লুত, স্মরণ প্রান্তের কোনো চেনা দিন ফিরে এসেছে, কোনো দিনই সেই দিনের মাধুর্য অবসান হবে না।
(আংশিক উদ্ধৃত) [উৎস: আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত 'জীবনানন্দ']
মাই ডিয়ার মিস্টার সান
কে হতে পারেন মিস্টার সান- অরুণ বাবু না সূর্য বাবু? ২৬ শ্রাবণ ১৩০৩ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখলেন:
My dear Mr. Sun
কাল রাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছি আপনি আমাদের বাড়িতে ঘরের লোকের মত গা এলিয়ে বসিয়া আছেন। আপনাকে কি গান গাহিতে বলিব তাহাই চিন্তা করিতেছি। আমি বলিতেছি আমাদের বাড়িতে থাকিতে থাকিতে আপনি লিখুন, আপনি বলিতেছেন এখানে ভারি গোলমাল, আমি বলিতেছি অনেক দূর মাঠে বেড়াইতে যাইব, সেইখানে বসিয়া লিখিবেন। ...কাশী ও দিল্লীতে যাইবার প্রস্তাব পাইতেছি।
প্রভাতকুমার ২৯ চৈত্র ১৩০৯ তাকে লিখেছিলেন:
প্রিয় সোনার তরী বাবু,
বড় মুস্কিল হইয়াছে। অনেকদিন হইতে আমি আপনার পত্র পাই না। আমি তাহার কারণ ঠিক করিয়াছি। আমার দুইখানি পত্র যাহা আমি আপনাকে লিখিয়াছিলাম- দুইখানাই ডাকে মারা গিয়া থাকিবে। অথবা তাহার উত্তর দুইখানিও মারা গিয়া থাকিতে পারে। অথবা আপনার একখানা আমার একখানা মারা গিয়া থাকিবে।
সোনার তরী: যে তাকে অবজ্ঞা করেননি, তা তিনি নিশ্চিত; অন্তত বিশ্বাস করতে নারাজ। মাস দেড়েক আগে প্রভাতকুমার ১৭ ফাল্গুন ১৩০৯ তাকে সম্বোধন করলেন, প্রিয় টেগোর মহাশয়। আরো মাস খানেক আগে ১১ মাঘ ১৩০৯ লিখলেন:
প্রিয় রবীন্দ্রবাবু,
সম্বোধন ক্ষমা করিবেন। অনেক দূর হইতে 'মহাশয়'বলা ভাল লাগিল না, কাছে যাই ভাই রবি বলিতে সাহস হইল না। সুতরাং মহারাজা হরিশাস্ত্রের ন্যায় এই অসুখময় মধ্যপথেই রহিলাম।
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় এর শ্রেষ্ঠ কীর্তি!
১৩০১-এর মাঘের চিঠিতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে জানিয়েছিলেন অসুস্থতার কারণে গতবার পরীক্ষা দিতে পারেননি, তার আগেরবার অনুত্তীর্ণ হয়েছেন, এবার আবার পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন।
[উৎস পুলিনবিহারী সেন সংকলিত 'প্রভাত রবি' দেশ সাহিত্য সংখ্যা ১৩৭৫)
শতায়ু হবার ইচ্ছা নেই
১৪ জানুয়ারি ১৯৫৯ গুণমুগ্ধ সৈয়দ মুজতবা আলী রাজশেখর বসুকে ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে চিঠি লিখলেন, রাজশেখের বসু যেভাবে বঙ্গসাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি ও পাঠকের আনন্দ বর্ধন করছেন, তার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর শাতায়ু, সহস্রায়ু কামনা করেছেন।
৭২ বকুলবাগান রোড, কলিকাতা ২৫,
রাজশেখের বসু শ্রীযুক্ত সৈয়দ মুজতবা আলীকে লিখলেন:
আপনার ১৪/১-এর চিঠি পেয়ে আনন্দিত হলাম। আগামী ১৮ মার্চ আমার ৮০তম জন্মদিন। আপনার শুভেচ্ছা ২ মাস আগে পেয়েছি, তা ভালই, কারণ এর মধ্যে কি ঘটে যায় বলা যায় না।
ক. দৃষ্টি অতি ক্ষীণ, সেজন্য পড়া খুব কমাতে হয়েছে, কিন্তু আপনার রচনা পেলে চক্ষুপীড়ন করেও পড়ি। আপনার বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বিচিত্র ভাষায় আপনি আরো লিখুন, এই প্রার্থনা করি।
খ. আমার বয়স এমন ভয়ংকর রূপে বেড়ে যাচ্ছে তা সব সময় মনে থাকে না। শতায়ু হবার ইচ্ছা নেই। অন্ধ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বেঁচে থাকা জীবন্ত নরকভোগ। এর আগেই যাতে নিষ্কৃতি পাই সেই শুভেচ্ছা করুন।
আপনার একান্ত অন্তরঙ্গ
রাজশেখর বসু।
এমেরিটাস প্রফেসর
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বয়স তখন ৮৩ বছর। ১২ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্যকে লিখছেন:
আমি গত ১লা এপ্রিল বাংলা একাডেমী হইতে অবসর পাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Emeritus Professor-এর পদ স্বীকার করিয়াছি। আমি বাংলা একাডেমীতে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে ১৩৩২ টাকা মাসিক বেতন পাইতেছিলাম। সেখানে আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান সম্পাদনা শেষ করিয়াছি।...আমার দ্বিতীয় কার্য ইসলামী বিশ্বকোষও শেষ হইয়াছে।...বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ৫০০/-সৌজন্যমূলক ভাতা দিবেন। কোন কাজের নির্দেশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরা দিবার কোন আদেশ নাই। ইহা যাবজ্জীবনের জন্য।
পূর্ব পাকিস্তানে আমারই জন্য সর্বপ্রথম এই পদ সৃষ্টি করা হইল।
মেয়েকে বুদ্ধদেব বসুর চিঠি
কলকাতা ৪৭
১৫/১০/৬৮
রুমি
আমার আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় লুফথান্সায় যাত্রা করার কথা। কিন্তু এখনো পি ফর্ম হয়নি। সরকারি নিমন্ত্রণে যাচ্ছি বলে ব্যাপারটা অন্যান্য বারের চেয়ে জটিল মনে হচ্ছে। জার্মান কনস্যুলেট বা জার্মান এয়ার লাইনে আমেরিকান ক্রক্সপ্রেসের মতো ক্ষিপ্রতা বা দক্ষতার পরিচয় পাচ্ছি না- মোটের উপর আমি এখনই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। দু-মাস আগে ভেবেছি 'আহা যদি একবার বিদেশ বেড়িয়ে আসতে পারি।' কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই নাকতলার বাড়িতে বসে শান্ত মনে ধীরে ধীরে নিজের কাজ করার মতো সুখ আর নেই। তিন সপ্তাহ আগে যুরোপের নানাস্থালে বন্ধুবান্ধবীদের চিঠি লিখেছিলাম এ পর্যন্ত তার একটারও জবাব না পেয়ে অত্যন্ত নিরাশ বোধ করছি। আমার ইচ্ছে প্যারিস রোম ইস্তাম্বুল তেহরান বেড়িয়ে ফেরা কিন্তু তাতেও বহু বিঘ্ন ঘটবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। মোটের উপর এখন আমার মনের ভাব এই যে 'পি'ফর্মের হাঙ্গামা যদি চুকে যায় তাহলে বেশি কিছু আশা না নিয়ে জার্মানি ভ্রমণ ১লা নভেম্বরই শেষ হচ্ছে, যদি তারপর ডাইনে-বাঁয়ে না-তাকিয়ে সোজা কলকাতায় ফিরতে হয় তা হলেও অবাক হবো না।
তোর মাকে চিঠি লিখিস নিয়মিত। ভালো থাকিস।
বাবা
রুমি: বুদ্ধদেব বসুর মেয়ে
রুমির মা: প্রতিভা বসু
ব্রাত্যজনের চিঠি
একজন রবীন্দ্রসঙ্গীতের দিকপাল, দেবব্রত বিশ্বাস, অন্যজন হেমাঙ্গ বিশ্বাস লোক ও গণসঙ্গীতের দেবপুত্রের আত্মজীবনীর নাম 'ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত'। ব্রাত্য ভাষায় হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে লেখা চিঠির ভাষ্য:
অহন আসল কথায় আইতাছি।
কয়েক বছর আগে তুমি আমার ঘরে আইয়া কইছিলা যে নির্মলেন্দু চৌধুরী তুমার লুকসংগীতের বারোটা বাজাইয়া দিতাছে। তুমার নিশ্চয়েই মনে আছে যে তোমারে কইছিলাম নির্মলেন্দু ঠিক করতাছে। তার তো গান হুনাইয়া পেট চালানি লাগব- সিলেটের লুকসংগীত হুনাইয়া সুবিধা হইত না- হেই লাইগ্যা তারে লোকোজাজ, ফোকোরক, ফোকোপপ বানাইয়া স্রোতারারে খুশি কইরা পেট চালানি লাগব। তুমি যে লুকসংগীত গাও হেইডা যে অরিজিনাল ও বিশুদ্ধ তার কুনু গ্যারান্টি দিতায় পার্বায়? দুইশ বছর আগে তুমার দেশের লুকসংগীত কিভায় গাওয়া অইত তার কুনু রেকর্ড বা স্বরলিপি তোমার কি আছে?
স্মরণসভায় সভাপতির ভাষণ দিতে গিয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাস জর্জদাকে (দেবব্রত বিশ্বাস) এক হাত নিলেন: (১) জর্জদা খুব সিনিক (২) ভাবাও যায় না যে এই লোকটা মোটরসাইকেলে দৌড়িয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়ে প্রমাণ করতে চাইত যে রবীন্দ্রসঙ্গীত লোকে বোঝে, শ্রমিকরাও বোঝে এবং ভালোবাসে (৩) যে লোকটা আজ গণনাট্যের নাম শুনলেই ক্ষেপে উঠে।
দেবব্রত বিশ্বাস আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে একই পত্রের জবাব দিলেন, 'তুমি অ্যাংরেজি ভাষা ক্যামনি হিকছ আমি জানি না।' প্রকারান্তরে তিনি বললেন, হেমাঙ্গ বিশ্বাস সিনিক মানেটাই বুঝেননি।
আমার নিজের দুষ ছাড়া অন্য কুনু মাইনষের দুষ ধরনের লইগ্যা আমি লেকচার দেই না। সুতরাং তুমি যে ক্যারে আমারে দুষলা- বুঝলাম না।
দেবব্রত একই ভাষায় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সবগুলো অভিযোগই খন্ডন করেছেন, তারপরও দুজন সুহৃদই ছিলেন। এই ব্রাত্যজন যে ভাষায় চিঠি লিখেছেন, কথা বলতেন ঠিক একই ভাষায়, গান গাইতেন অসাধারণ শুদ্ধ উচ্চারণে।
[উৎস: দেবাশিষ দাসগুপ্তের 'উদাসী বাউল:হিসেবী বৈরাগ্য']
প্রাণের পাগলী আমার
কবি, নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও কথাশিল্পী আ.ন.ম. বজলুর রশীদ (জন্ম ৮মে ১৯১১-মৃত্যু ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৬) স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে কখনো সম্বোধন করেছেন প্রাণের পাগলী, কখনো শরতের শ্বেত করবী গো, কখনো প্রাণের হাসি আমার। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে প্রথম স্ত্রী রিজিয়া খানম তিন বছরের দাম্পত্য জীবন ও একটি পুত্র সন্তান রেখে প্রয়াত হলে আ.ন.ম. বজলুর রশীদ ১৯৩৬ সালে বেগম হাসমত হককে বিয়ে করেন। বেগম হাসমত তখন মাত্র ষোল, স্বামীর সান্নিধ্যে এসে স্বল্পশিক্ষিত এই তরুণী সাগ্রহে পড়াশোনা করতে থাকেন এবং এক সময় গল্পও লিখতে শুরু করেন। গল্পের বইও বেরিয়েছে, তিনি সেতার বাজাতে পারতেন। বিয়ের তৃতীয় বছর আ.ন.ম. বজলুর রশীদ ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুলের শিক্ষক এবং স্কুলের ডাফরিন মুসলিম হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট। শিক্ষকতার জন্য বেতন ৫০ টাকা এবং হোস্টেল তত্ত্বাবধানের জন্য ২০ টাকা। ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সেখান থেকে স্ত্রীকে লিখেছেন:
প্রাণের হাসি আমার,
তোমার চিঠি পেয়েছি দেরীতে। প্রতীক্ষায় প্রতিদিন পথ চেয়েছিলাম। পাষাণী তোমার চিঠি না পেয়ে মন ভেঙ্গে যেতো। ...অস্তায়মান রবির দিকে তাকিয়ে তোমার ম্লান রাঙা মুখখানি মনে করতাম। রাণী আমার এতদিন তোমাকে দিয়েছি আঘাত, এখন শুরু হলো তোমার পালা। বেশ প্রিয়া। তুমি যদি আমাকে আঘাত দিয়ে সুখী হও, তাই দিও পাষাণী। তুমি আমার প্রেম কোনদিন অনুভব করতে পারবে না। পারলে আমাকে ছেড়ে যেতে এত উন্মুখ হতে না।...
আরো দু'বছর আগের একটি চিঠি; হাসমত তখন 'তুই'। ১ শ্রাবণ ১৩৪৪ তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় স্ত্রীকে লিখলেন:
প্রাণের পাগলী,
তোর কাছে শুধু বসে বসে চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে। তোর কথাই কেবল ঘুরে ফিরে মনে পড়ে। কতদিন পর তোর সোনামুখখানি দেখব... তুই আমার কতখানি তা'এ কবি ভাষা খুঁজে পায় না বলতে।...
[উৎস: সুকুমার বিশ্বাসের 'আ.ন.ম. বজলুর রশীদ', বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালা, ১৯৯০]
জিয়া হায়দারের চিঠি
স্নেহের খোকন...
অনেক দিন তোর কাছ থেকে কোনো খবর পাইনি। ২/৩ দিন আগে দুলাল জানালো যে, তুই ওর ওখানে ফোন করেছিলি এবং বলেছিল যে তোর শরীর আগের চেয়ে ভালো। দুলাল এ-ও জানালো যে তুই ধূমপানি ছাড়িসনি। এতে আমি বিষ্মিত হয়েছি এবং ক্ষুদ্ধ ও। মদ ও সিগ্রেট পান দুই-ই ছেড়েছিস এ সংবাদ আমি চাই। ভালো থাকিস।
সোনাভাই
আদর ও শাসনের অধিকারের মিশেল এই চিঠিতে। এই চিঠির দুলাল হচ্ছেন রশীদ হায়দার। খোকন আর কেউ নন, দাউদ হায়দার, আর সোনাভাই তাদেরই সবার বড় ভাই জিয়া হায়দার। এই চিঠিটি লিখেছেন প্রবাসী দাউদ হায়দারকে ৫ জুন ১৯৯৬।
৮ জানুয়ারি ১৯৯৮-র আর একটি চিঠি :
খোকন,
আরার কাছ থেকে জানলাম তুই আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিস প্রচন্ড ভাবেই করেছিস। শুনে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। যখনই মনে পড়ছে কষ্ট পাচ্ছি। সোনাভাই।
এই আরা হচ্ছে মেজবোনের বড় মেয়ে।
জিয়া হায়দার কবি নাট্যকার ও শিক্ষক সেই সোনাভাই যদি কবিতা না লিখতেন ভাইরা কি সাহিত্য করতেন? দাউদ হায়দার সেই সোনাভাইকে নিয়ে লিখছেন:
রোগটা ছোঁয়াচে সংক্রমিত আমাদের মধ্যেও। সাহিত্যের বাতাস পাবনার দোহারপাড়ার বাড়িতে না আসলে ক্ষতি ছিল না। জিয়া হায়দার আমাদের কাছে সোনাভাই-ই। গুরুজনও। তারচেয়েও বেশি। তিনি আমাদের পিতৃতুল্য। আমরা তার সন্তানতুল্য। সমস্ত টাকা পয়সা ব্যয় করেছেন আমাদের জন্যই। ভাইবোনদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখান। ভালোবাসাতেন যাকে ছেড়ে যান তিনি। বড় বেশি একা নিঃসঙ্গ, তখন থেকেই।... বিয়ে করেছিলেন তাও টেকেনি বেশিদিন। নিঃসন্তান বলেই আমাদের আগলে রাখতো সন্তানের মতো। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে।
(সোনাভাই, দাউদ হায়দার)
নজরুলের চিঠি
ফজিলাতুন্নেসার প্রত্যাখ্যান, নজরুলের প্রতিক্রিয়া কাজী মোতাহার হোসেনকে লিখা ৮ মার্চ ১৯২৮-এর চিঠিটি বেদনার স্থায়ী দলিল হয়ে আছে:
ফজিলাতুন্নেসা
১৫ জুলিয়াটোলা স্ট্রিট, কলিকাতা
৮/৩/২৮, সন্ধ্যা
প্রিয় মতিহার,
পরশু বিকালে এসেছি কলকাতা। উপরের ঠিকানায় আছি। ওর আগেই আসবার কথা ছিলো, অসুখ বেড়ে ওঠায় আসতে পারেনি। দু চার দিন এখানেই আছি। মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে। কোথায় যাই ঠিক করতে পারছিনে। হঠাৎ কোনোদিন এক জায়গায় চলে যাবো। অবশ্য দু দশ দিনের জন্য। যেখানেই যাই আর কেউ না পাক তুমি খবর পাবে।
বন্ধু, তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে সেদিন অন্তত তোমার বুক বিঁধে উঠবে। তোমার ঐ ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মতো জড়িয়ে শুয়েছিলে অন্তত এইটুকু শান্তনা নিয়ে যেতে পারবো। এই কি কম সৌভাগ্য আমার ! কেন এ কথা বলছি শুনবে? বন্ধু আমি পেয়েছি, যার সাক্ষাত আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে উঠেনি কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লেখা তোমার কাছে লিখে গেলাম।
আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দিপ্তি চোখের জলকণার মতো ঝিলমিল করবে, মনে করো সেই তারাটি আমি। আমার নামেই তার নামকরণ করো। কেমন? মৃত্যু এতো করে মনে করছি কেন জানো? ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে। মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরলে সে আমায় বরণ করে নেবে।
সমস্ত বুকটা ব্যথায় দিনরাত টনটন করছে। মনে হচ্ছে সমস্ত বুকটা যেন ঐখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যদি মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো। কিন্তু কি হবে কে জানে? তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি - কতো কথা, কতো কি, তার কি কূল-কিনারা আছে? ভাবছি আমার ব্যথার রক্তকে রঙ্গীন খেলা বলে উপহাস যে করেন তিনি হয়তো দেবতা। আমার ব্যথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে। কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবো না। ফুল ধুলায় ঝরে পড়ে, পায়ে পিষ্ট হয়, তাই বলে কি ফুল এতো অনাদরের? ভুল করে সে ফুল যদি কারুর কবরীতেই খসে পড়ে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রব বলে মনে করেন, তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে এক্ষুণি কারুর পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা।
সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারি না বন্ধু, তাই এতো জ্বালা। ভিক্ষে যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে অদৃষ্টের বিড়ম্বনায়, তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিও না। আঘাত করবার একটা সীমা আছে। সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে। আর তক্ষুণি তার নাম হয় অবমাননা।
ছেলেবেলা থেকে পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে যে প্রেমে বুক ভরে ওঠে কাঁনায় কাঁনায় তা কখনো কোথাও পাই নি আমি। এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরী হয়ে গেলো। না জানি কতো উদ্বিগ্ন হয়েছো। কি করি বন্ধু, শরীরটা এতো বেশী বেয়াড়া আর হয়নি কখনো। অষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয়না।
আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিশুতি রাতের তারা। তুমি হয়তো অবাক হবে, আমি আকাশের প্রায় সব তারাগুলোকে চিনি। তাদের সত্যিকারের নাম জানিনে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নামকরণ করেছি আমার ইচ্ছেমতো। সেই কতোরকম মিষ্টি মিষ্টি নাম, শুনলে তুমি হাসবে। কোন তারা কোন ঋতুতে কোন দিকে উদয় হয় সব বলে দিতে পারি। জেলের ভেতর যখন সলিটারি সেলে বন্ধ ছিলাম তখন গরমে ঘুম হতো না। সারারাত জেগে কেবল তারার উদয়াস্ত দেখতাম। তাদের গতিপথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম, বন্ধু, ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু, আমার এই চোখের জলের পিচ্ছিল পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্তপারের পানে। আমি শুধু চুপটি করে দেখি। হাতে থাকতো হাতকড়া। দেয়ালের সঙ্গে বাধা চোখের জলের রেখা আঁকাই থাকতো মুখে, বুকে। আচ্ছা বন্ধু, ক'ফোটা রক্ত দিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয় তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে? এখন শুধু কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, যার উত্তর নেই, মিমাংসা নেই, সেইসব জিজ্ঞাসা।
যেদিন আমি ঐ দূরের তারার দেশে চলে যাবো, সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি দেখিয়ে, সে যেন দু'ফোটা অশ্রুর তর্পন দেয় শুধু আমার নামে। হয়তো আমি সেদিন খুশীতে উল্কা ফুল হয়ে তার নোটন খোঁপায় ঝরে পড়বো। তাকে বলো বন্ধু, তার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই। আমি পেয়েছি, তাকে পেয়েছি, আমার বুকের রক্তে, চোখের জলে। আমি তার উদ্দেশ্যে আমার শান্ত স্নিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ণ চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমস্কার রেখে গেলাম। আমি যেন শুনতে পাই, সে আমারে সর্বান্তকরণে ক্ষমা করেছে। ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের কথাই যেন সে মনে রাখে।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। কিন্তু আর লিখতে পারছি না ভাই। চোখের জল, কলমের কালি, দুই-ই শুকিয়ে গেলো। তোমরা কেমন আছো, জানিও। তার কিছু খবর দাও না কেন? না কি সেটুকুও মানা করেছে? ঠিক সময়মতো সে ওষুধ খায়তো? কেবলই কীটস্কে স্বপ্ন দেখছি, তার পাশে দাঁড়িয়ে ফেনি ব্রাউন পাথরের মতো। ভালবাসা নাও।
ইতি,
তোমার নজরুল
উপন্যাসের চিঠি: স্ত্রীর পত্র
কি লিখেছে মৃণাল:
রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলা সাহিত্যের অদ্বিতীয় একটি ছোট গল্পের নাম স্ত্রীর পত্র। সেই স্ত্রী মৃণাল, বারো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে, তারপর কেটে গেছে আরও পনেরটি বছর। মৃণাল লিখেছে :
'শ্রীচরণকমলেষু
আজ পনের বছর আমাদের বিবাহ হয়েছে আজ পর্যন্ত তোমাকে চিঠি লিখি নি। চিরদিন কাছেই পড়ে আছি। মুখের কথা অনেক শুনেছ আমিও শুনেছি। চিঠি লেখাবার মতো ফাঁকটুকু পাওয়া যায় নি।
বাড়ির মেজোবউ শিশু বয়সে তার ভাইটির সাথে সান্নিপাতিক জ্বরে ভুগছিল, ভাইটি মারা গেল। বেঁচে যাওয়ায় পাড়ার মেয়েরাই বলে বেড়াল 'মৃণাল মেয়ে কিনা তাই ও বাঁচল বেটা ছেলে হলে কি আর রক্ষা পেত।'
মৃণাল লিখছে :
'আমার একটা জিনিস তোমাদের ঘরকন্যার বাইরে ছিল সেটা তোমরা কেউ জান নি। আমি লুকিয়ে কবিতা লিখতুম। সে ছাইপাঁশ যাই হোক-না সেখানে তোমাদের অন্দরমহলের পাঁচিল ওঠে নি। সেইখানে আমার মুক্তি সেইখানে আমি। আমার মধ্যে যা কিছু তোমাদের মেজোবউকে ছাড়িয়ে রয়েছে সে তোমরা পছন্দ করনি। চিনতেও পার নি; আমি যে কবি সে এই পনেরো বছরেও তোমাদের কাছে ধরা পড়েনি।