মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহবান
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সম্ভাব্য একটি বিবৃতির বিষয়ে আলোচনা করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা করা হয় এমন যেকোনো বিবৃতিতে চীন ভেটো দেবে।
গুতেরেস বলেন, নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়াটা 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' এবং সেনা অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বোঝা উচিত এভাবে দেশ শাসন করা যায় না।
গত সোমবার মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনা বাহিনী দখল নেয়। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ আটক রয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী।
সু চির বিরুদ্ধে গতকাল বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে থাকবেন সু চি।
আটক হওয়ার পর থেকে সু চি কিংবা পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সেনা অভ্যুত্থানের নেতা ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এর নেতৃত্বে অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তারা ১১ সদস্যের একটি সুপ্রিম কাউন্সিল গঠন করেছেন।
সামরিক বাহিনী এক বছর দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সামরিক সরকার দেশটিতে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগের এই প্ল্যাটফর্মটি "স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা" সৃষ্টি করছে।
"সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য"
জাতিসংঘের মহাসচিব মিয়ানমারে সাংবিধানিক নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন যে নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি মতৈক্য হবে।
তিনি বলেন, "এই সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সবকিছু করব।"
"নির্বাচনের ফল এবং জনগণের ইচ্ছা উল্টে দেয়াটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।"
মহাসচিব আরও বলেন, "আমার মনে হয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আমরা এটা বোঝাতে পারব যে, এটি একটি দেশকে শাসন করার কোন পদ্ধতি হতে পারে না এবং এভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।"
পশ্চিমা দেশগুলো ইতিমধ্যে কঠোরভাবে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে কিন্তু চীনের বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদে এ ব্যাপারে কোন একক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের মধ্যে একটি চীন। তাই চীনের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
বরাবরই আন্তর্জাতিক রোষের মুখ থেকে মিয়ানমারকে রক্ষায় ভূমিকা পালন করে আসছে বেইজিং। বেইজিং সতর্ক করে বলেছে যে, অভ্যুত্থানের কারণে দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা বা আন্তর্জাতিক চাপ পরিস্থিতিকে শুধু আরো খারাপের দিকেই নিয়ে যাবে।
মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতনের ঘটনায় নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও মিয়ানমারকে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা করে আসছে।
সু চি'র অবস্থান এখনো অস্পষ্ট
ধারণা করা হচ্ছে যে, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে রাজধানী নাইপিদোতে তার নিজ বাসভবনে আটক করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইন ভঙ্গ এবং যোগাযোগের অবৈধ ডিভাইসের মালিকানা থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বা এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়েছে; পরবর্তীতে তা আদালতে দায়ের করা হয়।
এ সম্পর্কিত নথিতে বলা হয় যে, তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে যেন "সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, প্রমাণ হাজিরের অনুরোধ করা এবং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আইনি পরামর্শ চাওয়া সম্ভব হয়।"
প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিরুদ্ধে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, তিনি সমর্থকদের সাথে দেখা করতে কোভিডের নির্দেশনা ভঙ্গ করে ২২০টি যানবাহনের একটি গাড়ির মহড়ায় অংশ নিয়েছিলেন।
আইন অমান্যের ডাক অ্যাক্টিভিস্টদের
মিয়ানমারে এখনো বড় ধরণের কোন বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ চোখে পড়েনি।
মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চালকরা এবং রান্নার হাড়ি-পাতিল বাজিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদে নেমে আসে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে নীরবতা বিরাজ করে আছে; বড় শহরগুলোতে সেনারা টহল দিচ্ছে এবং রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
তবে হাসপাতালগুলোতে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট চলছে। অনেক চিকিৎসক কাজে ইস্তফা দিয়েছেন।
অনেকেই নিজেদের পোশাকের ওপর নির্দিষ্ট প্রতীক সংযুক্ত করে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীরা সু চি-র মুক্তি দাবি করেছেন।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তারা কালো কিংবা লাল ফিতা পরেছেন এবং তিন আঙুল দিয়ে স্যালুটের ছবি তুলছেন। এই স্যালুট হাঙ্গার গেমস চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং গত বছর থাইল্যান্ডের বিক্ষোভকারীরাও এই চিহ্ন প্রদর্শন করে।
সু চির দলের প্রতি সমর্থন দেখাতে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাদের প্রোফাইলের ছবিটিও বদলে লাল রঙে করে নিয়েছেন।
- বিবিসি অবলম্বনে