৩৩ ভাগ জনবলে চলছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক ল্যাব, দুর্ভোগ আমদানিকারকদের
দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক ল্যাবের কার্যক্রম চলছে ৩৩ ভাগ জনবল দিয়ে। কাস্টমসের এই শাখায় ১৫ জনের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৫ জন। সীমিত জনবল দিয়ে ল্যাবে প্রতিদিন প্রায় ২০০ নমুনা পরীক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয় ল্যাবের কর্মকর্তাদের।
স্বাভাবিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের নমুনা পরীক্ষা শেষে ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে প্রতিবেদন পেতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ দিন। এতে পণ্য খালাস পেতে হয়রানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারকরা।
দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানি পণ্যের চালানে সন্দেহ হলে সেই চালানের নমুনা পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক ল্যাবে পাঠায় কাস্টমসের শুল্কায়ন বিভাগ।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, রাসায়নিক ল্যাবে ১৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। এরমধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষকের ২টি এবং উপপ্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের ৬টি পদের বিপরীতে শূন্য আছে ৫টি।
বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ৪ দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা আকারের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ইউএস ডলার ভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই আকারের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
সময়মতো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আমদানিকারককে একদিকে বন্দরের ভাড়া এবং অন্যদিকে পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
চট্টগ্রামের কাঁচা পণ্য (পেঁয়াজ, রসুন, আদা) আমদানিকারক আল মদিনা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ নাজিম উদ্দিন বলেন, ঠিক সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আটকে থাকে। যার ফলে কাস্টমসের এই ব্যর্থতার মাসুল গুনতে আমাদের। বিলম্বে প্রতিবেদন পাওয়ার কারণে একদিকে পণ্যের ওপর ডেমারেজ চার্জ যোগ হয়; অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্য পচে গিয়েও বড় লোকসান গুনতে হয়।
এছাড়া অনেক সময় যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে না পারায় বাজারে পণ্যের দর কমে গিয়েও লোকসানে পড়তে হয় আমদানিকারকদের। এই ক্ষতিও বিলম্বে কাস্টমসের প্রতিবেদন পাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ন সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু দ্য বিজনেস স্ট্যন্ডার্ডকে বলেন, 'রাসায়নিক ল্যাবের প্রতিবেদন পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বন্দরের ইয়ার্ডে ৪ দিনের বেশি পণ্য থাকলে তার জরিমানা গুনতে হয় আমদানিকারকদের। এভাবে দিনের পর দিন প্রতিবেদন আটকে থাকার কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়গুলো নিয়ে কাস্টম কমিশনারের সঙ্গে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। কিন্তু এখনো কোনো সুফল পাইনি।'
এদিকে, কাস্টম রাসায়নিক ল্যাবে জনবল বৃদ্ধি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহম্মদ ফখরুল আলম। গত বছরের ১১ অক্টোবর দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মাত্র দুজন পরীক্ষক অধিক সংখ্যক পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করায় কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে চালান খালাসেও বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে যে দুজন পরীক্ষক কর্মরত রয়েছেন, তাদের অবসরে যাওয়ার সময়ও অতি নিকটে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আগত বিভিন্ন নমুনার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য সনাক্ত হয়। পরীক্ষাগারে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা গেলে মিথ্যা ঘোষণার আনা পণ্য শনাক্তের হার বাড়বে।
কাস্টম রাসায়নিক ল্যাবের প্রধান পরীক্ষক মোঃ আবদুল হান্নান বলেন, 'প্রতিদিন এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য ১০০ ফলের নমুনাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ২০০ নমুনা আসে। নমুনা গ্রহণের দিন ফল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া গেলেও অন্যান্য পণ্যের নমুনার ৬০ ভাগ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়। প্রতিদিন এভাবে বাড়তি নমুনার চাপে পণ্যের প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হয়।'
জনবল সংকটে পরীক্ষার প্রতিবেদন দিতে দিনক্ষেপন হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম। রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জনবল নিয়োগ করার বিষয়ে এনবিআরকে অবহিত করা হয়েছে।