মেহেদী রাঙা দিনে মুস্তাফিজ ঝলক ও ব্রাথওয়েট প্রতিরোধ
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা কার? অনেকেই বলে দেবেন সেঞ্চুরিয়ান মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। কেউ হয়তো উল্লেখ করবেন মুস্তাফিজুর রহমানের কথা। দিনের শেষভাগের লড়াইয়ের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের নামটিও চলে আসতে পারে বিবেচনায়। তবে দ্বিতীয় দিনটি যে বাংলাদেশের, তা বলাই যায়।
প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রান তোলার পর ২৪ রানের মধ্যেই ক্যারিবীয়দের দুই উইকেট তুলে নিয়ে শাসন করার আভাসই দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দলের দুঃসময়ে আলোক বর্তিকা হাতে ছুটে চলা ব্রাথওয়েটর প্রতিরোধে নিজেদের অনেকটাই সামলে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৭৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ভরসা হয়ে টিকে আছেন অধিনায়ক ব্রাথওয়েট। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৯ রানে অপরাজিত আছেন। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে কক্ষপথে ফেরাতে ধৈর্যর পরিচয় দিয়েছেন এনক্রুমাহ বোনার। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার অপরাজিত আছেন ১৭ রানে। এই দুজন দ্বিতীয় দিনের শেষ ১৭ ওভার ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে দিলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবশ্য স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই।
ফলোঅন এড়াতে তাদের করতে হবে ২৩০ রান। এ পথে আরও সফরকারীদের আরও ১৫৫ রান তুলতে হবে। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনও ৩৫৫ রানে পিছিয়ে। মুস্তাফিজ, মিরাজ, সাকিব, তাইজুলদের বোলিংয়ের বিপক্ষে এই রান তোলা যে সহজ কাজ নয়, সেটা ভালো করেই মাথায় রাখতে হচ্ছে ক্যারিবীয়দের।
তৃতীয় দিনের শুরুতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য হুমকির কারণ হতে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের তোপে দিশোহারা হয়ে ওঠার দশা হয়েছিল তাদের। দলীয় ১১ রানেই উইন্ডিজ ওপেনার জন ক্যাম্পবেলকে ফেরান মুস্তাফিজ। আগুন ঝরানো বোলিংয়ে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতেও সময় নেননি তিনি। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শেন মোজলেকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন মুস্তাফিজ।
প্রথম দিনে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছিল অনেক আক্ষেপ। ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতির মিছিলে মুমিনুলদের ড্রেসিংরুম হয়ে উঠেছিল বিবর্ণ। তবু শেষভাগে স্বস্তি মিলেছিল সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাসের ব্যাটিংয়ে। এই দুই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছিলেন।
সাকিব-লিটনের ব্যাটে দারুণ শুরুর আশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এদিনের শুরুতেও ছিল হতাশা। স্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে উইকেট বেলান লিটন। ৩৮ রান করে থামেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর সাকিবের যোগ দেন বাংলাদেশের ইনিংসের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজন মিলে গড়ে তোলে ৬৭ রানের জুটি।
তাদের ব্যাটে দারুণ ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। সাকিবের অনাহুত এক শটে ভাঙে এই জুটি। উইন্ডিজ স্পিনার রাকি কর্নওয়ালের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ব্রাথওয়েটের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। ২৬ মাস পর হাফ সেঞ্চুরি করার ইনিংসে ১৫০ বলে ৬৮ রান করে থামতে হয় সাকিবকে।
মিরাজ তখন ৩৮ রানে ব্যাটিং করছেন। ২৪ রানে একবার জীবন পাওয়া মিরাজ এখান থেকে যেন নতুন শুরু করেন। পরের সবাই বোলার হওয়ায় ডানহাতি এই অলরাউন্ডার হয়তো সব দায়িত্ব কোঁধে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যদিও তাকে অনেকটা সময় সঙ্গ দেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তবে রান তোলার দায়িত্বে নেতৃত্ব দেন মিরাজই।
দলের স্কোরকার্ড সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দারুণ সব শটে চার বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। যদিও আক্ষেপে পুড়তে পারতেন ২৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। ব্যক্তিগত ৮৫ রানে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু রাকিম কর্নওয়াল ক্যাচটি নিতে পারেননি। দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ পেয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান মিরাজ।
১৬৮ বলে ১৩টি চারে শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। আট নম্বরে বা এর পরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করার দিক থেকে মিরাজ বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের হয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে এটা তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ২০১৩ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যুব টেস্টে অভিষেক হয় বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডারের। সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৫ বছর বয়সী মিরাজ।
এরপর কেটে গেছে আট বছর, আর সেঞ্চুরির দেখা মেলেনি। দীর্ঘ এই সময়ে ৩টি যুব টেস্ট ও ৫৬টি যুব ওয়ানডে খেলেছেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্ট বাদে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ২২টি টেস্ট, ৪৪টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি। এ ছাড়া ৪০টি প্রথম শ্রেণি, ৯৩টি লিস্ট 'এ' ও ৭৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি, কোথাও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। অবশেষে ২৪৭ ইনিংস পর তিন অঙ্কের রান করলেন মিরাজ।
মিরাজের দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরানোর ম্যাচে বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে রান তোলার কাজ করেছেন আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান। ওপেনার সাদমান ইসলাম ৫৯, নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫, অধিনায়ক মুমিনুল হক ২৬, মুশফিকুর রহিম ৩৮, তাইজুল ১৮ ও নাঈম ২৪ রান করেন। ক্যারিবীয় স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। কর্নওয়াল পান ২টি উইকেট। এ ছাড়া কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও এনক্রুমাহ বোনার একটি করে উইকেট নেন।