সিনথেটিক সুতায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্পিনিং মিল
বৈশ্বিকভাবে সিনথেটিক সুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের সুতাকল (স্পিনিং মিল) ব্যবসায়ীরা সিনথেটিক সুতার খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশ্ব বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে কটন সুতার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
এরই অংশ হিসেবে এনভয়, ডিবিএল গ্রুপের মাটিন স্পিনিং, ম্যাকসনস, স্কয়ার, সাশা ডেনিম প্রভৃতি প্রভাবশালী স্পিনিং মিল এখন পণ্যের বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনছে।
টেক্সটাইল ও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প পরিচালনার পেছনে অন্যতম উপখাত হলো স্পিনিং। কিন্তু বিগত চার থেকে পাঁচ বছর ধরেই আমদানিকৃত কাপড় এবং সুতার জন্য পিছিয়ে পড়ছে স্থানীয় কলগুলো।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে কটন সুতার চাহিদা ৩৫ শতাংশ কমে গেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
'বিগত বছরগুলোতে অধিকাংশ ক্রেতাই সিনথেটিক ও মিশ্র সুতার তৈরি বস্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। সেজন্যই আমরা এ ধরনের সুতা উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি,' বলেন তিনি।
বিটিএমএ বলছে, স্থানীয় সুতাকলগুলো রপ্তানিমুখী নিট সুতার ৮০ শতাংশ এবং ওভেন সুতার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তবে সিনথেটিক ও মিশ্র সুতার অধিকাংশই চীন থেকে আমদানি করা হয়।
শনিবার বিকালে ডিবিএল গ্রুপের অঙ্গসংস্থা মাটিন স্পিনিং মিলস সিনথেটিক সুতা উৎপাদনের জন্য বিশেষ ইউনিট স্থাপনে ১৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, 'বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতেই আমরা সিনথেটিক সুতার উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ করছি। বহুমুখী পণ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।'
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে মাটিন স্পিনিংয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই বিশেষ সুতার ইউনিট দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সক্ষম। এছাড়া এই ইউনিটে বার্ষিক টার্নওভার আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত উঠবে।
ডিবিএল গ্রুপের মতো এনভয় গ্রুপও সিনথেটিক সুতার ইউনিট খোলার জন্য ১২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। নতুন এই ইউনিট দৈনিক ১২ টন সুতা উৎপাদন করতে পারবে। অক্টোবরের মধ্যেই এই ইউনিটে কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দীন আহমেদ জানান, বিশ্বব্যাপী সিনথেটিক সুতার চাহিদা বাড়ছে। আর তাই কটন সুতার উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
'গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্ব বাজারে কাঁচা তুলার মূল্য স্থিতিশীল নয়। আর তাই কটন সুতার উৎপাদন খরচ বাড়ছে,' ব্যাখ্যা করেন তিনি।
'তাই আমরা কটন সুতা ব্যবহার করে লাভ করতে পারছি না,' বলেন তিনি।
দেশের শীর্ষ ১০ স্পিনিং মিলের মধ্যে অন্যতম ম্যাকসনস গ্রুপ মীরসরাই অর্থনৈতিক এলাকায় নতুন তিনটি স্পিনিং ইউনিটে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড একটি ইউনিটে ৩৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। অন্যদিকে, অন্য দুই ইউনিটে ম্যাকসনস যথাক্রমে ২৫৪ কোটি টাকা এবং ৩৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।
ম্যাকসনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোকন আরও বলেন, 'বাজারে টিকে থাকতে আমরা উচ্চমান সম্পন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্যে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চাচ্ছি।'
চলমান মহামারির মধ্যে এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হতে চলছে। এছাড়া, স্কয়ার টেক্সটাইল ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলও ইতোমধ্যে উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ বা বেপজার সঙ্গে সাশা ডেনিম ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় আটটি প্লট ইজারা নিতে চুক্তি করেছে।
মোহাম্মদ আলী খোকন আরও বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্পিনিং মিলগুলো ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছে। যে কারণে মহামারির আগে থেকেই মূলধন নির্ভর এই খাত সমস্যায় জর্জরিত।
এই মুহূর্তে মহামারির জন্য ব্যবসা ভালো না চললেও শিগগিরই পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
'পাশাপাশি, সুতার ধরনের এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের এখন বড় ক্রেতাদের ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত হতে হবে,' যোগ করেন তিনি।
মহামারি এই খাতে এক নতুন আঘাত হানে। ফলে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে, অবিক্রিত মজুদও বেড়ে যায়। এছাড়া নগদ প্রবাহেও বাধার সৃষ্টি হয়।
তবে অনেক টেক্সটাইল মিলই তাদের মজুদ খালি করে ফেলেছে। পোশাক প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে আসা নতুন অর্ডার নিয়েই তারা ব্যস্ত।