এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে দেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ
বিগত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশকে গড় বৈশ্বিক সরবরাহ তিন শতাংশ কমে গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশেরও বেশি। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত- অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে যে হারে মূল্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা ঘটেনি। মূল্য হ্রাসের কারণে বাংলাদেশের প্রতি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ে তৈরি পোশাকের মূল্যে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল্য ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে, ২.৭৬ মার্কিন ডলারে এসে ঠেকেছে। তবে, মূল্য হ্রাসের এই হার বিগত দশকে প্রায় ৬ শতাংশেই স্থির আছে।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন- বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুক হক- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে। ভিয়েতনাম যেখানে একদিনের জন্যেও তাদের কারখানা বন্ধ করেনি, সেখানে বাংলাদেশে পুরো এক মাস কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও, রপ্তানি তেমন একটা কমেনি।"
"এছাড়া, মহামারির কারণে বাংলাদেশে পোশালের মূল্য হ্রাসের হারও ছিল কম, যেখানে চীনে তৈরি পোশাকের মূল্য প্রায় ৪১ শতাংশ কমেছে," যোগ করেন তিনি।
টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর সক্ষমতা এবং রপ্তানির মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে অর্ডার দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশ বান্ধব কারখানা নিয়ে; বাংলাদেশ এখন বিশ্বস্ত রপ্তানিকারকে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক রাকিব আরও জানান, চীনা প্রস্তুতকারকেরা তাদের পোশাকের মূল্য কমালেও, চীন থেকে ভালো সংখ্যক কাজের অর্ডারই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্থানান্তর করছে।
গত এক দশকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত ও পাকিস্তান ৯০ শতাংশের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, বিশ্বের সবথেকে বড় পোশাক সরবরাহকারী দেশ চীনের রপ্তানি ১৩ শতাংশ কমে এসেছে।
ইন্দোনেশিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও এল সালভেদর থেকেও বিগত দশকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হার কমেছে।
২০২০ সালে, বিগত বছরের তুলনায় সকল সরবরাহকারীদের কাছ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৬ শতাংশ কমে যায়।
গতবছর, ২০১৯ সালের তুলনায় কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান ছাড়া অন্যান্য সরবরাহকারী দেশের রপ্তানি ৪ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। যার বিপরীতে, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান থেকে রপ্তানি যথাক্রমে ৮ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ বাড়ে।
ওটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ দশ সরবরাহকারীর তালিকায় থাকা: হন্ডুরাস এবং এল সালভেদরে বিগত দশকে তৈরি পোশাকের দাম যথাক্রমে ২১ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে এক বছরেই এল সালভেদরের রপ্তানিকৃত পোশাকের দাম বাড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীনের পোশাকের মূল্য গত বছর প্রতি বর্গমিটারে ১.৭৯ ডলার কমেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মূল্য হ্রাসের হার ৪১ শতাংশ।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক সরবরাহকারী দেশ ভিয়েতনামের প্রতি বর্গমিটার তৈরি পোশাকের মূল্য কমেছে ৩.৩১ ডলার।
গত বছর, যুক্তরাষ্ট্রে সবথেকে বেশি দামে পোশাক রপ্তানি করেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির বাজারে প্রতি বর্গমিটার ইন্দোনেশিয় পোশাকের গড় মূল্য ছিল ৩.৮১ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ দশ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে একমাত্র কম্বোডিয়ার পণ্যে গত দশ বছরের মধ্যে মূল্য পরিবর্তন হয়নি। ২০১১ সাল থেকে দেশটির প্রতি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য ২.১ ডলারে স্থির আছে।