অস্ট্রেলিয়ার পথে হাঁটবে কানাডাও, ফেসবুককে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করার অঙ্গীকার
ফেসবুকের বিরুদ্ধে লড়াইতে অস্ট্রেলিয়ার পাশে থাকবে কানাডা। এই টেক-জায়ান্টের বিপরীতে সবাইকে এক হওয়ার আহবান জানিয়েছে দেশটি; এমনকি ফেসবুক যদি অস্ট্রেলিয়ার মত নিউজ কনটেন্ট বন্ধ করে দেয়, তাহলেও তারা পিছু হটবে না ।
প্রসঙ্গত, একটি আইনকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়াতে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের নিউজ কনটেন্ট দেখা বা শেয়ারের অপশনটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই আইন অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ প্রকাশ করার জন্য দেশটির গণমাধ্যমকে অর্থ প্রদান করতে হবে ফেসবুক ও গুগলকে। এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার নিউজ কনটেন্টের জন্য ফেসবুককে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করার অঙ্গীকার করেছে কানাডাও।
কানাডার মন্ত্রী স্টিভেন গিলবিউল্ট ফেসবুকের গতকালের গৃহীত পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে কানাডাও আসছে মাসগুলোতে এমন আইন কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে এবং অটোয়া এসব অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবে না।
সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আমরা এ লড়াইতে একেবারে সামনের সারিতে আছি… আমরা বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি যারা এটি করছে।"
গত বছর কানাডিয়ান মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের হস্তক্ষেপ ব্যতীত সম্ভাব্য বাজার ব্যর্থতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। তাদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার এই পদ্ধতিতে প্রকাশকেরা বছরে ৬২০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার উঠিয়ে আনতে পারবে। আর সরকারের উদ্যোগ ছাড়া, কানাডার তিন হাজার প্রিন্ট সাংবাদিকের ভেতর অন্তত ৭০০ জন চাকরি হারাবে বলে তাদের আশঙ্কা।
গিলবিউল্ট বলেন, প্রয়োজনে কানাডা অস্ট্রেলিয়ান মডেলটি গ্রহণ করবে যেখানে ফেসবুক এবং গুগলকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে নিউজ কনটেন্ট প্রকাশের জন্য নিউজ আউটলেটগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে যেতে হবে।
আরেকটি বিকল্প হলো, ফ্রান্সের পন্থা অনুসরণ করা; যেখানে আইন পাস না হলেও নিউজ কনটেন্ট প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের সাথে পারিশ্রমিক নিয়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর খোলাখুলি আলোচনার সুযোগ বহাল থাকবে।
গত সপ্তাহেই ফরাসি, অস্ট্রেলিয়ান, জার্মান এবং ফিনিশীয় দূতদের সাথে নিউজ কন্টেন্টের জন্য ন্যায্য মূল্য পরিশোধের ব্যাপারে কথা বলেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, "কোন মডেলটি সবচাইতে উপযুক্ত আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।"
"আমার তো মনে হয়, শীঘ্রই আমাদের সাথে ৫, ১০, ১৫টি করে দেশ যোগ দেবে এই আইন প্রনয়ণে... তখন ফেসবুক কী করবে? তারা কি জার্মানি, ফ্রান্স সবার সাথে যোগাযোগ নষ্ট করবে?"
তিনি আরও বলেন যে, ফেসবুকের এই উদ্যোগ 'পুরোপুরি অস্থিতিশীল।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর অধ্যাপক মেগান বোলার মনে করছেন, ফেসবুকের পদক্ষেপ এমন একটি মোড়ে উপনীত হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।
রয়টার্সকে দেওয়া টেলিফোন ইন্টারভিউতে তিনি জানান, "এই একচেটিয়া জোটের বিরুদ্ধে আমরা হয়তো একটি শক্তিশালী ঐক্যফ্রন্ট দেখতে পাব।"
এ সপ্তাহে ফেসবুক জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মে ৪ শতাংশেরও কম নিউজ কন্টেন্ট থাকে। তবু গত বছর এসব কন্টেন্ট থেকে প্রকাশকেরা ৪০৭ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার আয় করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গুগল গত তিন বছরে বিশ্বজুড়ে প্রকাশকদের সাথে একশ কোটি ডলারের প্রায় ৫০০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে; এর সবই তাদের নতুন নিউজ শোকেজ সার্ভিসের জন্য, কানাডার কোম্পানিগুলোর সাথেও গুগলের আলোচনা চলছে।
তবে গিলবিউল্ট বলেছেন, এরপরেও গুগলকে নতুন কানাডীয় আইনটির সামনে নতি স্বীকার করতে হবে। কেননা, অটোয়া সব সময় এমন একটি পদ্ধতি চেয়েছে যা ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং অনুমানযোগ্য হবে।
কানাডাতে গুগলের একজন মুখপাত্র ল'রেন স্কেলী অবশ্য গিলবিউল্টের এই মন্তব্যের বিপরীতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান আইনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন না।
- সূত্র: রয়টার্স