২০ বছর পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে চালু হতে যাচ্ছে ফেরি চলাচল
নাব্যতা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় ২০ বছর পর আবার চালু হতে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের আরিচার সঙ্গে পাবনার কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি চলাচল। এরই মধ্যে দুই পাড়ের নতুন দুটি ফেরিঘাট নির্মানসহ নদীর নাব্যতা সংকট রোধে ৫টি ড্রেজার দিয়ে দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে চ্যানেল খননের কাজ।
বছর দুয়েক আগেও এই নৌরুটে ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। তবে বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে সফলতার আলো দেখেনি ফেরি চলাচলের উদ্যোগ। কিন্তু পুনরায় ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয়রা স্বাগত জানালেও কতৃপক্ষের এই প্রচেষ্ঠা কতটুকু সফলতা পাবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
পদ্মা-যমুনার নাব্যতা সংকট ও দূরত্ব কমানোর জন্য ২০০১ সালের ২২ ফেরুয়ারি আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয় ফেরি সার্ভিস। এরপর থেকে জৌলুস হারাতে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী আরিচা-কাজিরহাট ফেরিঘাট। বন্ধ হয়ে যায় হাজারো মানুষের ছোট বড় প্রায় মিলে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে আবার প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে এই ঘাট। চালু হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি চলাচল। এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন দুই বন্দরের ট্রার্মিনালসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ। ফেরিঘাট চালুর খবরে খুশি দুই প্রান্তের লাখো মানুষ। ফেরি চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে ফের ব্যবসা বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ের উন্নয়ন হবে হবে ধারণা এলাকাবাসীর।
আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করতে যমুনা নদীতে নতুন করে চ্যানেল তৈরিতে ১২ লাখ ঘন-মিটার বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে। দুইপারের ঘাট-পন্টুন নির্মান, বিকন বাতি, মার্কি বাতিসহ আনুসাঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।
সম্প্রতি পরীক্ষামুলকভাবে চালানো হয়েছে একটি ফেরি। প্রথমে চারটি ফেরির মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহন, সাধারণ যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার শুরু করা হবে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়লে ফেরির সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে বলে দাবি ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের।
আরিচা লঞ্চঘাট এলাকায় আলাপ হলে পাবনা এলাকার একাধিক যাত্রী বলেন, বর্তমানে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ ও স্পীডবোট চলাচল করে। তবে রাত হলে সেগুলো বন্ধ থাকে। কিন্তু ফেরি চলাচল করলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা অনায়াসে যাতায়াত করা যাবে। এটা নিঃসন্দেহে একটি খুশির খবর। তবে এর আগেও একবার ফেরি চলাচলের খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত হওয়ার পর পরে আর ফেরি চলাচল করেনি। তাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ যাত্রীরা।
আরিচা ঘাট বনিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২'শ দোকান-পাট রয়েছে। এক সময়ে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জমজমাট বিকিকিনি হলেও এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই নাজুক। কোন রকমে টিকে রয়েছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে আরিচায় ফেরি চলাচল শুরু হলে ফের এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিকিকিনি বাড়বে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের (মেরিন বিভাগ) এজিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসেই এই নৌরুটে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
ফেরি চলাচল শুরু বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি'র চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল বলে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে বছর দুয়েক আগে ফেরি চলাচল চালু করার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবার তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুর্বের মত আর বন্ধ হবে হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নাকোচ করে দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, আগে ডেজিং সক্ষমতা ভাল না থাকায় ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিআইডব্লিউটিএ এর এখন ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। এখন ড্রেজিং সক্ষমতা ভালো। কাজেই নাব্যতা সংকটের অজুহাতে এখন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালের ৩১ই মার্চ কর্ণফুলী নামের একটি ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। এরপর ওই নৌরুটে যুক্ত হয়েছিলো ছোট বড় মিলে ২৮টি ফেরি। ১৯৯৭ সালে যমুনা সেতু উদ্বোধনের পর গুরুত্ব কমতে থাকে আরিচা ঘাটের।
পদ্মা-যমুনার নাব্যতা সংকট ও দুরুত্ব কমানোর জন্য ২০০১ সালের ২২ ফেরুয়ারি আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয় ফেরি সার্ভিস। সর্বশেষ ২০০২ সালের ১৫ নভেম্বর আরিচা ঘাট থেকে শেষ দুটি প্লাটুন পাটুরিয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি চলাচল।