প্রণোদনা প্যাকেজে বড়দের জয়-জয়াকার, ছোটরা পিছিয়ে
কোভিড মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তাদের জন্য বরাদ্দ ঋণের প্রায় পুরোটাই তারা পেয়ে গেছেন।
এক্ষেত্রে, ব্যাংকগুলোকেও কোনো বেগ পোহাতে হয়নি। বড়রা চেয়েছেন, আর ব্যাংকগুলো দিয়েছে। কোন ওজর-আপত্তি ছিল না। তবে যত আপত্তি ছোটদের বেলায়। তাই ঋণ নেওয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে তারা। অর্থনৈতিক উত্তরণের দৌড়েও পিছিয়ে পড়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্যে এমন বৈষম্যমূলক আচরণের চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যে ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে- তা থেকে ৩,০৪৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) হিসেবে ২৫,৪১১ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।
তার উপর আবার, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের বেতন হিসেবে গেল বছরের জুনে মাসেই ঋণ দেয়া হয়েছে ২,২৬৩ কোটি টাকা এবং জুলাই মাসে দেয়া হয়েছে ২,৫৩৪ কোটি টাকা।
প্রয়োজনের তুলনায় এই অর্থ কম হওয়ায় ওই বছরের (২০২০) জুলাই মাসে বেতন-ভাতা বাবদ আরো ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বাড়ানো হয়েছিল।
তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানিখাতের জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইএফডি) নামে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের যে তহবিল ছিল; করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায়- তা বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়।
মাত্র ২ শতাংশ সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া যায়। গেল মাস (জানুয়ারি) শেষে এই তহবিলে থেকেও প্রায় পুরো অর্থই ছাড় করা হয়ে গেছে।
বড়দের ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) এর সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বড়দের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ এবং সম্পর্ক দুটোই উপরের দিকে।
"বড় শিল্পগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাকের মত শ্রমঘন শিল্পও আছে। তাই বড়দের ঋণ ছাড়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, মাঝারি ও ছোটদের ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে যে বিলম্ব হচ্ছে- তাতে তারা প্রয়োজনের সময় ঋণ পাচ্ছে না। তাই ছোটরা নিজেদের ক্ষতি কাটিয়েও উঠতে পারছে না। ফলে, আমরা অসম উত্তরণের প্রক্রিয়া দেখছি।"
দেশের কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। ব্যাংকগুলোকে বারবার তাগাদা দিয়েও সময়মতো ঋণ ছাড় করাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কয়েক দফা বাড়ানোর পর, সবশেষে আগামী মার্চ পর্যন্ত এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৭৮ হাজার ছোট উদ্যোক্তা প্যাকেজ থেকে ঋণ পেয়েছেন।
ছোটদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়া ছাড়াও; এখাতে ঋণের খরচ ও ঝুঁকি বেশি বলে দাবি করে আসছেন ব্যাংকাররা। খেলাপির সংখ্যাও বেড়ে যাওয়া এবং গ্রাহককে শনাক্ত করাও কষ্টকর বলছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সমস্যাকে মাথায় রেখেই এসএমই খাতের জন্য আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে সিপিডি। ওই প্যাকেজ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও এনজিও এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হলে পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে।
এসএমই'র বিপরীতে প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনেকটাই ভালো অবস্থানে আছে কৃষিখাত। করোনায় কৃষি পণ্যের সরবরাহের ব্যাঘাত হলেও; বন্যা পরবর্তী ধানের ভালো দাম পাওয়া এবং জমির উর্বরতা বাড়ায় উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা আগ্রহী হয়েছেন।
তবে ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, কৃষি ঋণ বিতরণ হয়ে থাকে মূলত সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে, ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদাণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে অনেক বেশি দক্ষ। পাশাপাশি, কৃষকদের মধ্যেও ইতিবাচক সাড়া ছিল বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্নখাতে ১,১৩৫ কোটি টাকার প্যাকেজ বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকলেও, এক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্যাকেজের বিপরীতে মাত্র ২১৪ টাকা ঋণ বিতরণের অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি ৯২১ কোটি টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি বিভাগ (বিআরপিডি) এর কাছে ফেরত পাঠিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ।