মেট্রো রেল: দিয়াবাড়ি- আগারগাঁও প্রান্তে শেষ স্প্যানের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে আজ
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের গার্ডার স্থাপনের একেবারেই শেষ প্রান্ত- আগারগাঁওয়ে সর্বশেষ স্প্যানের একটি সেগমেন্ট স্থাপনের মাধ্যমে দৃশ্যমান হচ্ছে পুরো ১১.৭৩ কিলোমিটার লাইন। এর সাথে পূরণ হবে দীর্ঘদিনের লালিত একটি স্বপ্ন। ক্রমেই কমে আসবে ভোগান্তি।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১১টায় মেট্রো রেলের উত্তর অংশের শেষ সেগমেন্ট স্থাপন করা হবে। এ সময় মেট্রো রেলের মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থানা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক আগারগাঁও এলাকায় উপস্থিত থাকবেন। এ অংশটি স্থাপনের পর তিনি গনমাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন।
সূত্র জানায়, ঢাকায় যানজটমুক্ত কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) এর আওতায় জাপানের সহায়তায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্প (এমআরটি লাইন-৬) অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালে।
এ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের মধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রো রেল নির্মাণ করা হবে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর সামনে রেখে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশ আগেভাগেই চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মতিঝিল থেকে মেট্রোর এ লাইনটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে লাইনের দৈর্ঘ্য দাড়াবে ২১.৭০ কিলোমিটারে।
এ বিষয়ে এম এ এন সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করার নজির বাংলাদেশে একেবারেই কম। এ ধারা ভেঙ্গে উল্টো নির্ধারিত সময়ের আগেই মেট্রো রেলের কাজ গুটিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এর ফলে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কাও থাকছে না।
প্রকল্প কর্মকতারা জানান, দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রো রেলের ভৌত কাজ ৮০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। এ অংশে রেল ট্র্যাক বসানো হয়েছে প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়ে। ডিপো এলাকায় বসানো ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার।
মেট্রো ট্রেনের শক্তি যোগাতে কাজীপাড়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকায় বসানো হয়েছে ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তার। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের পর ৯টি অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। দ্রুত এগিয়ে চলছে অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ। সব মিলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ লাইনে ট্রেন চালানোর আশা দেখছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জনসাধারণের জন্য মেট্রো রেল পরিচালনা করতে চায় সরকার। তবে করোনার কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে কাজ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। এ্ররপরও লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
কর্মকর্তারা জানান, মেট্রো রেলের উত্তর প্রান্তের ৯টি স্টেশনের সবগুলোর সাব স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। চার স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। চারটি স্টেশনে এ সংক্রান্ত কাজ চলছে।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, স্টেশন ভবনে প্রায় ২২ ধরনের সেবা, ইউটিলিটি ও সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। এরপর এ সব সিস্টেম মূল সিস্টেমের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করতে হবে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের এ কাজটাকেই এখন তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন।
শেষ হচ্ছে ভোগান্তি
মাঠ পর্যায়ে মেট্রো রেলের সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই আগারগাঁও, তালতলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুরসহ প্রকল্প এলাকায় শুরু হয় ভোগান্তি। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হলে যানজটের সাথে প্রকট আকার ধারণ করে শব্দদূষন ও বায়ু দূষন। বেচাকেনা কমে আসে মূল সড়কের আশেপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
তবে মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে আসায় জনভোগান্তিও কমে আসছে, উল্টো এলাকাবাসী আশা দেখছে বাড়তি আয়ের।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মেট্রো রেল নির্মাণের কারণে যানজট, শব্দদূষন, বায়ু দূষনসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় প্রকল্প এলাকার ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
তবে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আয় বাড়বে বলে ৭৬ শতাংশ এলাকাবাসী দাবি করেছেন ওই সমীক্ষায়। এছাড়া যাতায়াত সহজ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ৬৭ শতাংশ বাসিন্দা।