'জান ও জবানের স্বাধীনতার' দাবিতে শাহবাগে নাগরিক সমাবেশ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর, সংগঠিত হচ্ছে বিতর্কিত এই আইন বিলুপ্তির দাবিতে আন্দোলন।
তারই ধারাবাহিতায় আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলুপ্তিসহ- এই আইনে গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তি এবং এই আইনের বিরোধিতাকারী আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে নাগরিক সমাবেশ।
শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ'সহ সমাজের নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বেলা ৫ টায় আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে দমনমূলক আইন আখ্যা দিয়ে কার্টুনিস্ট কিশোর-সহ এর আওতায় গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তির দাবি জানান। একই সাথে, তারা এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় গ্রেফতারকৃত সকল আন্দোলনকারীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি তোলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা মেঘমল্লার বসুর সঞ্চালনায় 'জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই' শীর্ষক এই নাগরিক সমাবেশে সবার শুরুতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন।
তিনি বলেন, ২৬ তারিখ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া শ্রমিক নেতা রুহুল আমীনসহ সকল আন্দোলন কর্মীদের যদি অবিলম্বে মুক্তি না দেওয়া হয়- তবে সব আন্দোলন কর্মীসহ এই দেশের সকল গণতন্ত্র সচেতন মানুষকেই গ্রেফতার করা হোক। কারণ, এদেশের সকল গণতন্ত্রচেতা মানুষই এ আইনের বিরোধী।
এরপর বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, "আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিছু হলে স্বজন হারানোর মায়াকান্না করেন, অথচ তিনিই একের পর এক দমনমূলক নীতির মাধ্যমে মানুষের বুক থেকে তাঁদের স্বজনদের কেড়ে নিচ্ছেন, এমন দমনমূলক নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যেতে পারে না।"
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, মৃত মানুষটি মোশতাকের বদলে আমার সঙ্গী শহিদুল আলম'ও হতে পারতো। কারণ, তাকেও একই আইনে গ্রেফতার হয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি মূলত এখানে এসেছি আমার বিবেকের তাড়নায়, এইখানে উপস্থিত সকলের পরিস্থিতিই রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের শিকার লেখক মুশতাকের মতো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও এই শাসনের অধীনে আমাদের সকলের জীবন ও স্বাধীনতা মৃতপ্রায়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কথা সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, চলচিত্র নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন, ড. হারুন আর রশীদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক হাসনাত কাইয়ূম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এবং হাসনাত কাইয়ূম আদর্শিক ভেদ ভুলে সকলকে এই আইনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, "এই সরকারের সংশ্লিষ্টদের মুখেই আমরা শুনেছি, এই আইন তৈরি করা হয়েছে এমপি-মন্ত্রীদের ইজ্জৎ রক্ষার স্বার্থে। যাদের ইজ্জৎ রক্ষার জন্য এই আইন তৈরি করা হয়েছে, তাদের কেউ এখন মানব পাচারকারী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায়, বিদেশে জেল খাটছেন। দেশীয় গণমাধ্যমের উপর অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায়; তাদের লাগামহীন দুর্নীতির সংবাদ প্রায়ই আমরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেখতে পাই। মূলত, সেসব দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার জন্যই এই আইন, যাতে জীবন দিয়ে বলি হতে হচ্ছে লেখক মুশতাক আহমেদের মতো সচেতন মানুষদের।"
তিনি আরো বলেন, কিছু হলেই সরকার সারা বছর উন্নয়নের বুলি ফোটায়, পদ্মা সেতুর উদাহরণ দেখায়। অথচ সরকারি হিসেবেই সারা বছরে যেই পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তা দিয়ে ৪ টি পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে পাচারের যে চিত্র আমরা দেখতে পাই তা দিয়ে বছরে ১২ টি পদ্মাসেতু অনায়াসে নির্মাণ করা সম্ভব। মূলত এই সব দুর্নীতি ও ক্ষমতার দুর্বিত্তায়নের বিরুদ্ধে জনগণ যেন কথা বলতে না পারে সে জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই আইন।
সন্ধ্যায় সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত যায়।
যেখানে ছাত্রনেতারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবীতে সোমবার সকাল ১১ টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও এর উদ্দেশ্যে সবাইকে শাহবাগ সমবেত হবার আহ্বান জানান।