অস্ট্রেলিয়ার নতুন আইন প্রয়োগে সংবাদমাধ্যম কীভাবে উপকৃত হবে?
অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুক কর্তৃক ব্লক করে দেওয়া নিউজ ওয়েবসাইটগুলো পুনরায় ফিরেছে। ব্যবহারকারীরা এখন সহজেই সাইটগুলোতে প্রবেশ করে সংবাদের কনটেন্ট শেয়ার করতে পারছেন।
তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সংবাদ মাধ্যমের দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটল বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং, বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধ্যম এবং আইনপ্রণেতারা এখন নতুন করে সজাগ হচ্ছেন।
সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ফেসবুকসহ গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের এখন নতুন করে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে।
গত বুধবার অস্ট্রেলিয়ায় আইনসভা 'দ্য নিউজ মিডিয়া বারগেইনিং কোড' নামের নতুন এক আইনের অনুমোদন প্রদান করে। নতুন এই আইন অনুসারে, ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রযুক্তিখাতের শীর্ষ প্ল্যাটফর্মগুলো এখন থেকে সংবাদ কনটেন্ট প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকবে।
মাসখানেক ধরেই নতুন ধারার এই আইন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ফেসবুক এবং গুগল শুরু থেকেই আইনটির বিরোধিতা করে আসছে। এই আইনের কারণে গণমাধ্যম এবং মিডিয়া হাউজগুলো এখন একক কিংবা দলবদ্ধভাবে সার্চ ইঞ্জিন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে তাদের ন্যায্য হিস্যা দাবি করতে পারবে। এমনকি, নিজেদের মধ্যে সমাধানে আসা সম্ভব না হলে- প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি সালিশের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে হতে পারে।
প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতা করে গত সপ্তাহে ফেসবুক অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ-মাধ্যমের ফেসবুক পেজগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। তবে, দেশটি নির্ধারিত বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন আনায় পেজগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার ফেসবুকের একজন মুখপাত্র সিএনএন বিজনেসকে জানান যে, সরিয়ে নেওয়া কনটেন্টগুলোকে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম এবং প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দুই পক্ষের জন্যই এ এক স্মরণীয় মুহূর্ত। প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক রড সিমস আইনটি রচয়িতা। তিনি, গুগল এবং ফেসবুকের বাজার দখল ও একক ক্ষমতার বিরুদ্ধে সরব হওয়া হিসেবে বিষয়টির উদযাপন করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বাইরেও কেন বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ?
প্রকাশকরা দীর্ঘদিন ধরেই বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলেন। তাদের দাবি, গুগল এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশই সাবাড় করে ফেলছে। অথচ এই বিজ্ঞাপনই সংবাদমাধ্যমগুলোর আয়ের মূল উৎস। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রযুক্তি কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান দুটি জানায়, তারা সমগ্র বিশ্বকে যুক্ত করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তবে, দ্বিপাক্ষিক এই অন্তঃদ্বন্দ্বের সাথে আমাদের সকলের ভবিষ্যতই জড়িয়ে আছে। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে মাধ্যমগুলোর সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে বিঘ্ন আসতে পারে। ফলস্বরূপ; তা গণতন্ত্রকেও সংকটের মুখে ফেলবে।
সবকিছু বিবেচনায় রেখেই অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর আইনপ্রণেতারা ফেসবুক ও গুগল থেকে সংবাদ মাধ্যমের আর্থিক অংশীদারিত্বের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চিন্তা করছেন।
নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংবাদ মাধ্যমের ভাল-মন্দ বিবেচনা না করেই তাদের উৎপাদিত কনটেন্ট ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রযুক্তিখাতের নির্বাহীরা বলছেন যে, সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলো ফ্রিতেই সার্চ ইঞ্জিন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কনটেন্ট প্রচার করে আসছে। ফেসবুক এবং গুগল উভয় প্রতিষ্ঠানের দাবি, তারা সংবাদমাধ্যমগুলোর সাথে আর্থিক সম্পর্কভিত্তিক অংশীদারিত্বে জড়াতে চায়। তবে, দুটি প্রতিষ্ঠানই অস্ট্রেলিয়ায় প্রণীত আইনটির নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলে।
তবে শেষ কথা হল, অন্যান্য দেশগুলোও এখন অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন চুক্তিতে উপকৃত হবেন কারা?
আইনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল রুপার্ট মারডকের প্রতিষ্ঠান- নিউজ কর্পোরেশন। বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক তদবির করে আসছে। গত সপ্তাহে গুগলের সাথে নিউজ করপোরেশনের চুক্তি হয়।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বৃহৎ মিডিয়া হাউজগুলোও এখন নিয়মিতভাবে ফেসবুকের কাছ থেকে অর্থ পাবে। তবে বাকিদের কী হবে?
"আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমগুলো সম্ভবত এই সুবিধা পাবে না," জানায় নিয়ামক সংস্থা- অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।
বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন আইনপ্রণেতাও তাদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। মারডকের মতো মিডিয়া মোঘলদের পকেটে পয়সা ঢুকলেও, বৃহৎ পরিসরে সাধারণ সংবাদমাধ্যমগুলো বঞ্চিত হবে।
অন্য দেশগুলো কী করবে?
কানাডাসহ অন্যান্য দেশের কর্মকর্তারা জানান, তারাও নিজেদের মতো করে এই ধারার আইন প্রণয়ন করবেন। তবে তা কবে নাগাদ হবে, কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
ফেসবুকের নির্বাহী নিক ক্লেগ এক ব্লগ পোস্টে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সংবাদ প্রকাশকদের অংশীদার হিসেবে পেতে আগ্রহী। তিনি আরও জানান, ফেসবুক আগামী তিন বছরে্র মধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলোকে এক বিলিয়নের বেশি অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে, গুগলও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
- সূত্র: সিএনএন