পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৪০ কোটি নাগরিকের খাদ্য নিরাপত্তার রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে চীন
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন, দিনে দিনে সকল রকমের খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা নিয়ে উৎকন্ঠা বাড়ছে দেশটিতে। এজন্য শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে দেশটি। গেল বছর রেকর্ড পরিমাণ মাংস, ভুট্টা এবং সয়াবিন আমদানির পরই এ পরিকল্পনা নিল চীন সরকার।
এর আওতায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আছে: শুধুমাত্র বৃহৎ আকারের কৃষিকাজের জন্য সুনির্দিষ্ট অঞ্চল নির্ধারণ, কৃষকদের প্রণোদনা দিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি। চীনের সাম্প্রতিক পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় রয়েছে এমন সুপারিশ, যার মেয়াদ ২০২৫ সাল। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দেশটির প্রধান নীতি-নির্দেশক; অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো এর মাধ্যমেই ঠিক করা হয়।
চীনে বেড়েছে সম্পন্ন শ্রেণি সংখ্যা, শহুরে মধ্যবিত্তদের ভিড়ে অনেকেই যোগ দিচ্ছেন নতুন করে। তাই মাংসভোজের মাত্রাটাও বেড়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি চীনে খামারের শুকরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লু জন্ম দিয়েছে আতঙ্কের। মেরে ফেলা হয়েছে অনেক অনেক শুকর। আগামীতে মাংসের প্রধান উৎসে এমন মহামারির হুমকি দেখা দিলে, বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দেবে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া, গেল বছরের করোনাভাইরাস মহামারির কালে বিঘ্নিত হয় বিশ্ব বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি। অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া জীবাণুও আমদানি নির্ভর চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দেয় না। আবার, গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাপক বন্যাও দেখা দেয় চীনে। এসব কারণে খাদ্য নিরাপত্তা উঠে এসেছে সরকারের প্রধান এজেন্ডার শীর্ষে।
২০২০ সালে চীনের মাংস এবং দানাদার শস্য আমদানির মাত্রা বাড়ার কারণেই খাদ্য পণ্যের বৈশ্বিক দরে স্ফীতি দেখা দেয়। চীনা সরকারও দীর্ঘদিন ধরে উপলদ্ধি করছে যে, ১৪০ কোটি জনতার চাহিদা আগামীদিনে শুধুমাত্র আমদানির উপর ভরসা করে পূরণ করা যাবে না।
আজ শুক্রবার (৫ মার্চ) ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেছেন, "জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বীজ এবং শস্যক্ষেত্র রক্ষা করাটা তাই চীনের জাতীয় এ লক্ষ্য পূরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।"
নতুন রোডম্যাপে বার্ষিক ৬৫ কোটি টন দানাদার শস্য উৎপাদন ধরে রাখতে চায় এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিটি। যদিও বিগত ৬ বছরে এর চাইতে বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবু একটি স্থায়ী লক্ষ্যের মূল উদ্দেশ্য হলো; শস্যের ফলন মূল লক্ষ্যমাত্রার চাইতে যেন কমে না যায়। লক্ষ্যমাত্রায় তাই স্থানীয় চাহিদা, উৎপাদন সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক বাজার অবস্থানের নানা পরিবর্তনকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে এমন 'উচ্চমানের' কৃষি অঞ্চল তৈরি করা হবে, যেখানে খরা বা অত্যধিক বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখেও অব্যাহত রাখা যাবে নিয়মিত মাত্রায় ফলন।
পঞ্চবার্ষিকী কৃষি পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পাওয়া অন্যান্য দিক সমূহ:
• আবাসন বা শিল্পখাতের অধিগ্রহণ থেকে ফলনশীল কৃষি ভূমি কঠোরভাবে সংরক্ষণ, অনাবাদি জমিতে চাষাবাদে সরকারি সহায়তা, একরপ্রতি উৎপাদন স্থিতিশীল রাখা এবং ইউনিট এরিয়া প্রতি ফলন বৃদ্ধি
• গম ও চালের ন্যূনতম ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি, পাশপাশি ভুট্টা এবং সয়াবিন উৎপাদকদের ভর্তুকি দেওয়ার নীতি সংস্কার ও জোরদারকরণ
• ভূট্টা চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, সয়াবিন উৎপাদন স্থিতিশীল রাখা, সর্ষে-সহ বাদাম এবং অন্যান্য তেল বীজ ধরনের শস্য উৎপাদনে সহায়তা এবং তুলা ও আখ চাষের জন্য নির্ধারিত জমির পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা
• ক্ষতি কাটিয়ে উঠে শুকরপালের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং একইসাথে গরু ও ছাগলের মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি
• প্রধান প্রধান কৃষিপণ্যের আমদানি উৎসের বৈচিত্র্যকরণ, বহুজাতিক কৃষি বাণিজ্য সংস্থা শক্তিশালীকরণ এবং বিদেশি উৎস থেকে দানাদার শস্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ চক্রের উন্নয়ন
• বীজের মতো মূল কৃষি উপকরণ ও সীমিত জমিতে অধিক ফলন সহযোগী প্রধান প্রধান প্রযুক্তির উন্নয়নে গবেষণার মাত্রা বৃদ্ধি
• দেশব্যাপী প্রধান খাদ্য পণ্য সরবরাহ সম্পূর্ণ নিশ্চিত করা এবং বার্লি, ওটস, রাইয়ের মতো সিরিয়াল জাতীয় শস্যে প্রাথমিক পর্যায়ের স্ব-নির্ভরতা অর্জন