স্বল্প সুদে ৫০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিলের অনুমোদন
নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ৫০০ কোটি টাকা স্টার্টআপ তহবিলের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪১২তম বোর্ড সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।
এই পুন:অর্থায়ন তহবিলের অধীনে নতুন উদ্যোগ শুরু করার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে। ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। ২১ বছরের বেশি বয়সী একজন উদ্যোক্তা নতুন ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য এ তহবিলের আওতায় ঋণ পাবেন। একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিলের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফা থেকে ১ শতাংশ অর্থ নিয়ে নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল করতে হবে। এই তহবিল গঠনের শুরুর বছর হিসেবে ২০২০ সালকে ধরতে হবে। আগামী ৫ বছর এই তহবিল গঠন করবে ব্যাংকগুলো। নিজস্ব তহবিল থেকে যে ঋণ দিবে ব্যাংক সেটির সুদহারও হবে ৪ শতাংশ।
স্টার্টআপ তহবিল থেকে একজন উদ্যোক্তা যে কোনো একটি উদ্যোগে একবারের বেশি ঋণ নিতে পারবেন না। উদ্যোক্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কারিগরি অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত, সামাজিক ও গ্রুপ গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।
উদ্যোক্তা মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। অন্যদিকে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা বিদ্যমান নিয়মে খেলাপি হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হবে কম।
নতুন তহবিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি আলমাস কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই ধরনের তহবিল ইনোভেশন কালচারকে উৎসাহী করবে। তিনি জানান, গত সাত আট বছর ধরে দেশে স্টার্ট আপ চালু হলেও চার পাঁচ বছর ধরে সফলতা পাওয়া শুরু হয়েছে।
অনেক বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। এখন পর্যন্ত ৩শ মিলিয়ন বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে বলে তিনি জানান। এমন বাস্তবতায় নিজেদের অর্থে গঠিত তহবিল নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের আরো বেশি উৎসাহী করবে।
তবে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা যাতে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,
এন্ট্রাপ্রেনার সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) নামে ২% সুদে একটি উদ্যাক্তা সহায়তা তহবিল থাকলেও নানা জটিলতার জন্য এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে উৎসাহী হন না নতুন উদ্যোক্তারা।
আলমাস কবীর জানান, দেশে কোন ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি গাইড লাইন নাই। নতুন তহবিল করার পাশাপাশি এই গাইড লাইন তৈরির পরামর্শও দেন তিনি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন স্টার্টআপ উদ্যোক্তার সম্পদ হচ্ছে তার মেধা। সে একটি সফটওয়্যার তৈরি করলো, কিন্তু তার দাম কত ধরা হবে সেই গাইড লাইন নাই।
যদি এটা থাকে তাহলে ওই উদ্যোক্তা তার সফটওয়্যারের সোর্স কোড ব্যাংকে জমা রেখে ঋণ পেতে পারেন। এটিই তার ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে কাজ করবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, একজন সাধারণ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে জামানত দিয়ে ঋণ পাওয়া যত সহজ, নতুন চিন্তা বা উদ্ভাবনের বিপরীতে সেটা তত সহজ নয়। নতুন তহবিল এই ঘাটতি কাটিয়ে দিবে।
এতে নতুন উদ্যোক্তা যেমন তৈরি হবে, তেমনি কর্মসংস্থানও বাড়বে। এই তহবিল থেকে দেয়া ঋণ কিছুটা ঝুঁকিতে থাকলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় সুফল পাওয়া যাবে।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে গাইড লাইন ঠিক করা যাতে সহজে ঋণ পাওয়া যায়, ভালো ব্যাংকগুলোকে এই কার্যক্রমে যুক্ত করা এবং ঋণ বিতরণ ও ব্যবহারকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরামর্শ তার।