একই সঙ্গে আক্রমণ করতে সক্ষম করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/12/210311154712-01-brazil-covid-test-file-super-tease.jpg)
ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন দুটি কেস পেয়েছেন যেখানে করোনাভাইরাসের দুই ভ্যারিয়ান্ট একই সঙ্গে মানুষকে আক্রমণ করছে। নতুন একটি স্টাডিতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
দুটি কেসেই ত্রিশের কোঠায় থাকা নারীরা, যাদের হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ের ফ্লু এর মত লক্ষণ ছিল, তারা কেউই খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েননি কিংবা হাসপাতালেও নিতে হয়নি। একটি ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা গেছে যে সেই দুটি ভ্যারিয়ান্ট মহামারির শুরু থেকেই ব্রাজিলে ছড়াচ্ছে। অন্য একটি ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাইরাসের পুরনো দুটি স্ট্রেইন দ্বারাই একসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রিও ডি জেনিরোতে প্রথম চিহ্নিত P.2 ভ্যারিয়ান্ট।
ব্রাজিলের রিও গ্রান্ডে ডো সুল স্টেট থেকে নেয়া ৯২ টি স্যাম্পলের জিনোমিক সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ করে পাওয়া এসব তথ্য 'ভাইরাস রিসার্চ' নামের একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হবে।
এই গবেষণা অনুযায়ী বলা হচ্ছে, কো-ইনফেকশন এর ফলে ভাইরাসের বিভিন্ন প্রবাহের জিনোমগুলোর পুনরায় সমন্বয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হতে পারে।
গবেষণাপত্রে লেখকরা লিখেছেন, "যদিও পুনরায় ইনফেকশন হবার কেস খুবই কম, কিন্তু E484 এর দ্বারা কো-ইনফেকশন ঘটলে সেটি ইমিউন রেস্পন্স সিস্টেম এবং SARS-CoV-2 স্পাইক মিউটেশনের মধ্যে একটি জটিল মিথস্ক্রিয়ার ফ্যাক্টর তৈরি করে ফেলে।"
ব্রাজিলে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে দিয়েই এই নতুন খবর যোগ হলো। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে ২,২৩৩ জন নতুন করোনা রোগী পাওয়া গেছে এবং মহামারিতে এখনো পর্যন্ত মোট ২৭২,৮৮৯ জন মানুষ মারা গেছে।
ব্রাজিলে এখন কোভিড রোগীর সংখ্যা আইসিইউ এবং হাসপাতালের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে। গভর্নর, স্টেট হেলথ সেক্রেটারি এবং মেয়ররা ভাইরাস ছড়ানোর বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সবচেয়ে ধনী ও জনপ্রিয় রাজ্য সাও পাওলোর স্টেট গভর্নর হোয়াও ডোরিয়া রাজ্যে নতুন লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
একদিন আগেই ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডয়ার্ড পাজেলোর দেয়া আশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীতে এই লকডাউন কর্মসূচি। কর্মসূচি ঘোষণার প্রেস কনফারেন্সে আসার আগমুহূর্তে এক ভিডিওতে তিনি বলেন, 'ব্রাজিল এখন ভেঙে পড়েছে।'
বুধবার দেশের করোনা রোগী বেড়ে যাওয়া ও ভাইরাসের দুই নতুন ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে পাজেলো বলেছিলেন, "আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জানি, তবে এটি ভেঙ্গে পড়েনি।"
এছাড়া পাজেলো ব্রাজিলে ভ্যাক্সিন প্রাপ্যতা নিয়েও কম সংখ্যক ডোজের কথা বলেন। তিনি জানান ২২ থেকে ২৫ মিলিয়ন কোভিড ভ্যাক্সিন মার্চে সহজলভ্য হবে। আর আগে ফেব্রুয়ারিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪৬ মিলিয়ন ডোজ দেয়ার কথা জানিয়েছিলো।
এরই মধ্যে দেশে মহামারি পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামলাতে না পারা এবং লকডাউনকে অগ্রাহ্য করে অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার দায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী জাইর বলসোনারো।
বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও কনফারেন্সে বলসোনারো বলেন, "আর কতদিন আমরা আমাদের অর্থনীতিকে থামিয়ে রাখবো? অর্থনীতি চরমভাবে ভেঙে পড়লে সেটি হবে অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। সেই সাথে শুরু হবে সুপারমার্কেট দখল, বাসে আগুন, ধর্মঘট, কর্মবিরতি ও নানা সংঘাত।"