সংক্রমণ বাড়ছে, কমছে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। গত দুইদিন ধরে টানা দৈনিক নতুন রোগী শনাক্ত ১৭০০ এর বেশি ও ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ২৬। সংক্রমণ যখন বাড়ছে ঠিক তখনই কমতে শুরু করেছে ভ্যাকসিন গ্রহীতার হার। প্রথম দিকে দৈনিক ভ্যাকসিন নেয়ার হার দুই লাখ ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা ১ লাখের নিচে নেমে এসেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট এবং করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভ্যাকসিন কাজ করেনা এমন গুজব, ভ্যাকসিন নিলে রক্ত জমাট বাঁধে বা ভ্যাকসিন নেয়ার পরও মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে সেসব জেনে মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না'।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এখন বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। ভ্যাকসিন নেয়ার সাথে রক্ত জমাট বাঁধার কোন সম্পর্ক নেই, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্যাকসিন নিলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ সেটি মানুষকে বোঝাতে হবে। বাংলাদেশ যে ভ্যাকসিন পাচ্ছে তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে, কোন ভ্যাকসিন যাতে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সতর্ক থাকতে হবে'।
৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়। ভ্যাকসিনেশন শুরুর প্রথম সপ্তাহে দিনে গড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে ভ্যাকসিন নেয়ার হার বাড়ে। ভ্যাকসিনেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ।
তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার হার কমতে থাকে। চতুর্থ সপ্তাহের শেষের দিকে দৈনিক ভ্যাকসিন নেয়ার সংখ্যা একলাখের নিচে নেমে আসে। গত ১৩ মার্চ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৮৬ হাজার জন।
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ২% এর নিচে নেমে থাকলেও মার্চে তা বাড়তে শুরু করেছে। এখন দৈনিক সংক্রমণ ৮% এর বেশি। প্রতিদিনিই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
নিবন্ধন করার পর ভ্যাকসিন নেয়ার মেসেজ এলেও ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না রাজধানীর রায়েরবাজারের বাসিন্দা আহসান হাবিব। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ভ্যাকসিন নেয়ার পরও অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশ বয়কট করছে। তাই এখনি ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছিনা, আরো কিছুদিন পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভ্যাকসিন নেব'।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে তা না হলে মৃত্যু কমানো যাবেনা। এখনো বাংলাদেশ ৩% মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে পারেনি। ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে'।
তবে গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনিয়ন পর্যায়ে মোবাইল টিমের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি টিবিএসকে বলেন, 'শহর অঞ্চলে ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহের ঘাটতি না থাকলেও গ্রামের মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে না। তাই গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা সেন্টার স্থানান্তর করা হবে। ইউনিয়ন মেডিকেল সেন্টারে রেজিস্ট্রেশন করে আমাদের মোবাইল টিম গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসবে। যেসব এলাকা থেকে কম মানুষ ভ্যাকসিন নেয়, হাসপাতাল থেকে দূরে সেসব ইউনিয়নে মোবাইল টিম যাবে ভ্যাকসিন দিতে'।
লকডাউন হবে না, তবে জনসমাগম পরিহারের আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার বাড়লেওলকডাউন চালু করতে নির্দেশ দেয়নি সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম একথা জানিয়েছেন।
"তবে রেস্তোরা, গণপরিবহন এবং পর্যটন স্থলের মতো জায়গায় ভিড় সীমিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে," মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বলেন তিনি ।
আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবধানতা অবলম্বন করে কীভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইন কঠোরভাবে পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে'।
ঢাকায় আইসিইউ সংকট থাকলেও ঢাকার বাইরে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড ও আইসিইউ বেড খালি আছে তাই যে যেখানে থাকে তাকে সেই শহরেই চিকিৎসা নেয়ার আহবান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
শনাক্ত ১,৭১৯ জন, ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৭১৯ জনের শরীরে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৭।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায়ও ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ নিয়ে দেশে কোভিডজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৫৯৭।