মিডিয়া সম্পদ নিষ্পত্তি করতে আলিবাবাকে বেইজিংয়ের নির্দেশ
আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেডকে নিজেদের মিডিয়া সম্পদসমূহ নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে চীন সরকার। দেশের জনসাধারণের মতামতের ওপর এই টেক জায়ান্টের খুব বেশি প্রভাব পড়তে পারে ভেবে সরকার উদ্বিগ্ন, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বছরের শুরুতেই চীনা নিয়ন্ত্রকেরা হ্যাংঝুভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া সম্পত্তির পরিমাণ রিভিউ করে। অনলাইন রিটেইলই আলিবাবার মূল ব্যবসা। নিয়ন্ত্রকেরা গণমাধ্যমে এই কোম্পানির প্রসার ও প্রচার দেখে দারুণ বিস্মিত হন এবং তাদের নির্দেশ দেন, নিজেদের মিডিয়া হোল্ডিংগুলো গুটিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা করতে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন কোন সম্পদ ভারমুক্ত করতে হবে, তা জানায়নি সরকার।
বিগত বছরগুলোতে বিলিওনিয়ার জ্যাক মা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি আলিবাবা এক দুর্দান্ত রকমের মিডিয়া সম্পত্তির পোর্টফোলিও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রিন্ট, ব্রডকাস্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে ডিজিটাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিজ্ঞাপন পর্যন্ত রয়েছে তাদের প্রচার। টুইটারের 'ওয়েইবো' প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন চীনা ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তারা ব্যাপক জনপ্রিয়।
আলিবাবার মিডিয়া সম্পত্তির পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল সূত্র জানায়, পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিগুলোতে আলিবাবার হোল্ডিংয়ের সমন্বিত বাজারমূল্য ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় একটি অর্জন হলো 'দ্য পোস্ট', যা হংকংয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ সময়ের ভিত্তি অনুসন্ধান করে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং ঝেনজিয়াং ও সিচুয়ান প্রদেশের স্থানীয় সরকার পরিচালিত সংবাদপত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গেও আলিবাবার যৌথ উদ্যোগ রয়েছে।
গণমাধ্যমে আলিবাবার এমন সরব উপস্থিতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের প্রোপাগান্ডা প্রচারের পক্ষে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়েই দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে চীনের জনগণ।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পার্টির প্রোপাগান্ডা বিভাগে একটি ফ্যাক্স করা হলেও তার কোনো উত্তর আসেনি।
এদিকে সরকারি ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে বৈঠক নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আলিবাবা। তবে প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, আলিবাবা মিডিয়া সম্পদের ক্ষেত্রে একটি নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী। এটি কোম্পানিগুলোকে প্রসারের জন্য ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। কোম্পানিগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তে আলিবাবার কোনো হাত নেই বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বেইজিং এবং চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্যোক্তা জ্যাক মার মধ্যে চলমান সংকটে সর্বশেষ সংযোজন এই সম্পদ-নিষ্পত্তি। গত বছর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্যক্তিগতভাবেই আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপকে আক্রমণ করেন। জিনপিংয়ের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করায় জ্যাক মার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রকেরা আলিবাবাকে রেকর্ড ৯৭৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করারও পরিকল্পনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে জার্নালে রিপোর্ট করা হয়। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলোয় নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে না বলে আলিবাবার যে নিয়ম ছিল, সেটিও বন্ধ করতে হবে বলে নিয়ন্ত্রকরা জানায়।
মিডিয়া ও অনলাইন ছাড়াও আলিবাবার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনোদন বিভাগ রয়েছে, যা হংকং ও চীন- দুই স্থানেই অবস্থিত। কর্তৃপক্ষ আলিবাবার বিনোদন পোর্টফোলিও-ও রিভিউ করেছে। তবে এই বিভাগে সরাসরি সম্পদ নিষ্পত্তির প্রয়োজন নাও হতে পারে বলে তারা জানান।
অবশ্য আলিবাবা এর সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন, আলিবাবার যেকোনো পরিকল্পনাই আগে চীনের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়ে আসতে হবে।
আলিবাবার মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ওপর চীনের আমলাতন্ত্রের জোর খাটানো নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই কোম্পানিগুলো প্রসার ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সরকারি নীতি পুনর্গঠন করতে প্রভাব ফেলছে বলে সরকার চিন্তিত।
গত বছর আলিবাবার এক সিনিয়র এক্সিকিউটিভের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপারে ওয়েইবো'র পোস্টগুলো ডিলিট করে দেওয়ার ঘটনার পর এই উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পায়।
- সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল