করোনা সংকটের ফলে বাড়ছে এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের সময়সীমা
২০১৯ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পাওয়ার পর দেড় বছরেও শুরু হয়নি ৩২.২৪ কিলোমিটার মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১-এর নির্মাণ কাজ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি মূল্যনির্ধারণ মিটিংয়ে প্রজেক্টটির অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রজেক্ট নিয়ে তাদের প্রাথমিক কার্যক্রমের সময়সীমা বাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছে জাইকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড তাদের এই দেরির কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারিকে দায়ী করেছে। তারা মূল নকশা ও বিস্তারিত নকশা, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি ও জমি প্রাপ্তি ইত্যাদি নির্মাণ-পূর্ববর্তী কাজকর্মের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রথম ধাপে জাইকার কাছ থেকে ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা ঋণের একটি চুক্তি লিখিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে ঋণের শর্তাবলি নিয়ে জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি মূল্যনির্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এম আরটি লাইন-১ প্রজেক্টে দুটি রুট রয়েছে, যার একটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে কমলাপুরকে সংযুক্ত করবে এবং অন্যটি পূর্বাচল ও নতুন বাজারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
যদিও ১৯.৮৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল (এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর) এবং ১১.৩৭ কিলোমিটার সমুচ্চ মেট্রোরেলের (পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার) প্রাথমিক নকশা সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত নকশার কাজ এখনো চলমান।
৫২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয় ধরা এই প্রকল্পে সরকার দিবে ১৩ হাজার ১১ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ৩৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিবে জাইকা।
মূল্যনির্ধারণী বৈঠকে জাইকা প্রজেক্টের সময়সূচি মেনে চলার গুরুত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। যদি তা মানা সম্ভব না হয়, তাহলে জাপান থেকে ঋণ আসতেও দেরি হতে পারে বলে তারা জানায়।
এছাড়াও উন্নতমানের অবকাঠামো নির্মাণ বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপরও জোর দিয়েছে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
করোনা পরিস্থিতির জন্যে প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা বলেন, প্রজেক্টের বিদেশি পরামর্শকরা কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালের এপ্রিলের দিকেই বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তারা বাসায় থেকে কাজ করলেও ২০১৮ সালে দেওয়া আসল সময়সূচি মেনে কাজ চালানো তখন কঠিন হয়ে পড়ে।
দুই প্রকল্পের বিলম্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এ ধরনের প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে বড় ধরনের সমীক্ষা দরকার। তা ছাড়া প্রাথমিক প্রস্ততিমূলক কিছু কাজ সম্পন্ন করার পরেই ভৌত কাজ শুরু করতে হয়।
'করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন ও বিদেশি পরামর্শকদের অনুপস্থিতির কারণে কাজের গতি পিছিয়েছে,' মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যায় সব ধরনের উন্নয়ন কাজের গতি কমেছে। মেট্রো রেলের বিষয়টি আলাদা কিছু নয়।
হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত দ্বিতীয় মেট্রোরেলের কাজটি আরও একটি মুখ্য বিষয়। একই দিনে অনুমোদন পাওয়া এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর) প্রজেক্টের কাজ আরও পিছিয়ে রয়েছে।
এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর) প্রজেক্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। তবে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর-১০, কচুক্ষেত, বনানী ও গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রাথমিক নকশা এখনো শেষ হয়নি।
ডিএমটিসিএল-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রজেক্টের জন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
ডিএমটিসিএল এম আরটি লাইন-১-এর জন্য একটি নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে, যেখানে আগামী বছরের শুরুতে ডিপো এলাকাগুলোতে কাজ আরম্ভ হবে এবং মূল লাইন ও ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলোর কাজ ২০২৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে শুরু হবে।
২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এমআরটি লাইন-১-এর নকশা শেষ করার কথা থাকলেও, নতুন সময়সূচিতে ডিএমটিসিএল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত নকশা শেষ করার সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে। এই ধাপ বেশ জটিল; কারণ কনট্রাক্ট প্যাকেজ, টেন্ডার ডকুমেন্টের প্রস্তুতি এবং জমি প্রাপ্তির মতো অন্যান্য প্রাথমিক কাজগুলোও চূড়ান্ত নকশার ওপর ভিত্তি করে।
প্রস্তাবিত এমআরটি লাইন-১-এর যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে প্রতি ঘণ্টায় প্রতি ডিরেকশনে ৩৪ হাজার ৭৪০ জন। অর্থাৎ, এই লাইনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত আসা-যাওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে বহন করা সম্ভব হবে।
এই প্রজেক্টের কাজ শেষ হলে শহরের মধ্যে প্রতিদিন ১৩.৬৬ লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে, যা চলমান এমআরটি লাইন-৬ প্রজেক্টের তুলনায় ২.৮৩ গুণ বেশি।