টিকাদান পরিকল্পনার সাফল্যে ৯.৩ শতাংশের উচ্চ-প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে চীন
চলতি বছরের জুন নাগাদ মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে চীন। সফলভাবে এই লক্ষ্য অর্জন হলে, তার সুফল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি হাতেনাতেই পাবে। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের আভাস, এতে করে ৯.৩ শতাংশের মতো বড় মাপের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ সুগম হতে পারে দেশটির সামনে।
সবচেয়ে বড় কথা; চীন আলোচিত এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে- বাড়বে দেশটিতে ব্যবসা করা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থা। ভোক্তারাও নির্ভাবনায় খরচের উৎসাহ পাবে। তবে সেজন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে হবে টিকাদানের গতি। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের হিসাব অনুসারে, লক্ষ্যপূরণে প্রতিদিন অন্তত ১ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে, যা বর্তমান হারের দ্বিগুণ। আর চীন যদি টিকাদানের এই গতি সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রান্তিকের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে- তাহলে দেশটি "হার্ড ইম্যিউনিটি" বা গোষ্ঠীবদ্ধ অনাক্রম্যতা অর্জন করে ফেলবে। কারণ ওই সময়েই টিকা পেয়ে যাবেন ৬০-৭০ শতাংশ চীনা নাগরিক।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের বর্তমান হিসাবমতে, দৈনিক ৫০-৬০ লাখ টিকার ডোজ দেওয়ার মাধ্যমে চীনা অর্থনীতি ৮.৯ শতাংশ বিকাশের পথে আছে। কিন্তু, তার উপর যদি টিকাদানের দ্বিগুণ গতি যোগ হয় তাহলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন আরও দশমিক ৪ শতাংশ যোগ হবে। এসব মিলিয়ে ৯.৩ শতাংশের উৎসাহজনক আভাসটি আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়।
সংস্থাটির মতে, চলতি বছর গৃহস্থালি পর্যায়ে ভোগ চাহিদা ২০১৯ সালের মহামারি পূর্ব অবস্থার চাইতেও ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। একইসঙ্গে, চলতি বছরের মাঝামাঝি নাগাদ পর্যটন খাতের রপ্তানি মহামারিতে হারানো ব্যবসার ৫০ শতাংশ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। এই খাতের আমদানিতে কাটিয়ে উঠবে ৭০ শতাংশ ক্ষতি। বিভিন্ন খাতের স্থায়ী বিনিয়োগেও উন্নতির আশা করছে অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থাটি।
তবে ভাবনার বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের তুলনায় পেছনে পড়েছে চীনের কোভিড টিকা কর্মসূচি। এপর্যন্ত টিকার আওতায় এসেছে ১০৭ মিলিয়ন বা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৮ শতাংশ নাগরিক। ইতোপূর্বে, কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে জীবাণু বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সফলতা পায় চীনা সরকার। তারপর থেকে একটু ধীরে-সুস্থে এবং সতর্কভাবে কোভিড টিকাদান চালানোর সুযোগ পাওয়া গেছে।
সবথেকে মন্দ পরিস্থিতি বা ধীরগতির টিকাদানের মাধ্যমে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা যাবে। টিকাদানের নানান রকম গতি অনুমান করে অক্সফোর্ড যে অর্থনৈতিক আভাস তৈরি করেছে, সেখানে বেজলাইন বা মূল স্তর হলো ৮.৭ শতাংশ- টিকাদানের হার ঢিমেতালে চললে এর চাইতেও ২ শতাংশ পয়েন্ট কম হবে প্রবৃদ্ধি।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ টমি উ বলেন, "সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারার কারণে চীনের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের মতো টিকাদানের গতির উপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। তবে স্থানীয় অর্থনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চগতির টিকাদান সম্পন্ন হলে চীন নিশ্চিন্তে নিজের সকল সীমান্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য খুলে দিতে পারবে।"
এদিকে ব্লুমবার্গ পোলে অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদরা অনুমান করছেন, চলতি বছর চীনা অর্থনীতি ৮.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ