তিন মাসে বিচার বহির্ভূত ও কারা হেফাজতে ২৮ জনের মৃত্যু
গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে এবং কারা হেফাজতে ২৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত ও 'ক্রসফায়ারে' ১৪ জন এবং কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ১৪ জন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) -এর জানুয়ারি-মার্চ' ২০২১ এর সংখ্যাগত প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য উঠে এসছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সংখ্যাগত প্রতিবেদনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসক-এর নিজস্ব উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
আসক থেকে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যকীয়। অন্যথায় বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। করোনার এ সংকটকালীন সময়ে আসক সরকারের কাছে নাগরিকের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১৬৬ টি:
আসক এর তথ্যমতে, গত তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৬৬টি। এতে বিভিন্ন সময় সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪১০ জন।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ/গুমের শিকার হন ২ জন।
ধর্ষণের শিকার ২৩৮ জন:
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৩৮ জন, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ১৯৩ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ৪৫ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৪ নারী।
এছাড়া গত তিন মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২২ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারনে ৩ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ নারী এবং ৩ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
এ সময়কালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০৭ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ৭৬ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৩ নারী।
এছাড়া এ সময়কালে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৫ নারী, ৫ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৪ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১ জন গৃহকর্মী। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৮ নারী।
হত্যা করা হয়েছে ১৪৪ শিশু:
গত তিন মাসে ৭৭ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয় এবং হত্যার শিকার হয়েছে ১৪৪ শিশু। এছাড়া ১৫৫ শিশু ধর্ষণ ও ১০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।
৬৫ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার:
আসক এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত তিন মাসে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ৬৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিবেদন অনুযায়ী গত তিন মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসস্থানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৯৪টি, ৩৮টি প্রতিমা, পারিবারিক মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা করা হয়েছে।
ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে ৩ জন এবং বিএসএফ-এর ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে ১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ১ জন।
এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৫ জন।