লোকসান বাড়তে থাকায় স্মার্টফোন ব্যবসা গুটিয়ে নিল এলজি
স্মার্টফোনের ব্যবসায় লোকসান কাটানোই গেল না। সোমবার তাই দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট এলজি এ ব্যবসা গুটিয়ে নেবার ঘোষণা দিল।
জানুয়ারিতে কোম্পানিটি জানিয়েছিল, গত ছয় বছরে এলজি'র স্মার্টফোন ব্যবসায় প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে, তবে তারা ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য বিকল্প সব পন্থা গ্রহণ করবে।
একসময় এলজির স্মার্টফোনগুলোতে নিত্যনতুন অনেক ফিচার যোগ করা হত। যেমন আল্ট্রা-ওয়াইড এঙ্গেল ক্যামেরা, টি-আকৃতির উইং, বড় স্ক্রিন ইত্যাদি। ফলে ২০১৩ সালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক ছিল এলজি।
তবে এখন এর হর্তাকর্তারা বলছেন, মোবাইল ফোনের বাজার 'অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিযোগিতামূলক' হয়ে গেছে।
ধুঁকতে থাকায় এলজি ব্যবসায়ের কিছু অংশ বিক্রি করার জন্য আলোচনা করে, তবে সেখানেও কোন আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
এটি এখনও উত্তর আমেরিকার তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড কিন্তু অন্যান্য দেশে বাজেভাবে কোম্পানিটি বাজার হারিয়েছে। শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় বাজারে এখনও কিছুটা কদর ধরে রেখেছে এলজির ফোন।
এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, "অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিযোগিতামূলক মোবাইল ফোন খাত থেকে বেরিয়ে এলজি বৈদ্যুতিক গাড়ির উপাদান, সংযুক্ত ডিভাইস, স্মার্ট হোমস, রোবোটিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোতে মনোনিবেশের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে"।
গবেষণা সংস্থা কাউন্টারপয়েন্টের মতে, ২০২০ সালে এলজি ২৮ মিলিয়ন ফোন বাজারজাত করেছে অন্যদিকে স্যামসাং একই সময়ের ভেতর বিক্রি করেছে ২৫৬ মিলিয়ন ফোন!
এলজি'র ব্যবসায়ের পাঁচটি অঙ্গসংস্থানের ভেতর ফোনের অংশটিই সবচেয়ে ক্ষুদ্র, বলা যায় মোট আয়ের মাত্র ৭.৪%। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এর মোবাইল ফোনের শেয়ার মাত্র ২%।
তবে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় এখনও এলজি'র শক্তিশালী ভোক্তা শ্রেণী রয়েছে, বিশেষত হোম এপ্লায়েন্সেস এবং টেলিভিশনের বাজারে। স্যামসাংয়ের পরে এলজি'র টেলিভিশনের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
ডিসেম্বর মাসে এটি অটোমোটিভ সরবরাহকারী ম্যাগনা ইন্টারন্যাশনালের সাথে বৈদ্যুতিক গাড়ির মূল উপাদান তৈরির একটি যৌথ চুক্তি গ্রহণ করে।
একজন মুখপাত্র বলেন, "সামনের দিনগুলোতে এলজি তার মোবাইলসংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জন এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে সিক্স-জি এর মত মোবিলিটি সর্ম্পকিত প্রযুক্তিগত বিকাশ অব্যাহত রাখবে।"
বিশ্লেষকদের অনুমান, এলজি'র এ প্রস্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এবং চীনা কোম্পানি অপ্পো, ভিভো ও শাওমির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
প্রসঙ্গত, মহামারীতে বেশিরভাগ দোকান, বাজার বন্ধ থাকায় স্মার্টফোন নির্মাতারা বেশ লোকসানের শিকার হয়। গত বছর বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশ বিক্রি হ্রাস পায় স্মার্টফোনের।
- সূত্র-বিবিসি