প্রগতির ডাবল কেবিন পিকআপ সংযোজন শুরু
দেশে প্রথমবারের মতো ডাবল কেবিন পিকআপের সংযোজন শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
প্রতিটি পিকআপ সংযোজনের মাধ্যমে তারা গাড়িপ্রতি আয় করবে প্রায় ৮ লাখ টাকা। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ যেখানে লোকসান গুণছে, সেখানে গাড়ি বিক্রি করে দ্বিগুণ মুনাফা আয় করতে পারবে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে ডাবল কেবিন পিকআপের চাহিদা রয়েছে বছরে প্রায় ৬ হাজার। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রগতি প্রথম মাসে তিনটি গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে সংযোজন করবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে তারা কাজ শুরু করবে ২০২০ সালে।
বিআরটিএ’র হিসাবে গত বছর দেশে সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন পিকআপ নিবন্ধন হয়েছে প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ডাবল কেবিন পিকআপের চাহিদা ছিল প্রায় ৬ হাজার। গত অর্থবছরেও জাপানের মিৎসুবিশি ব্র্যান্ডের ডাবল কেবিন পিকআপের ৭০০ ইউনিট (৭০০টি) বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতদিন এসব গাড়ি তারা সরাসরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (সিবিইউ-কমপ্লিট বিল্ট ইউনিট) এনে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিত। কিন্তু এবার নিজস্ব কারখানায় ডাবল কেবিন পিকআপ সংযোজন করতে যাচ্ছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
২০২০ সালের মার্চ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের আগে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলতি মাসের ১১ নভেম্বর থেকে মিৎসুবিশি এল-২০০ মডেলের ডাবন কেবিন পিকআপ পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ।
বছরে শত কোটি টাকার ব্যবসার হাতছানি থাকলেও এ জন্য প্রগতিকে গুনতে হবে মাত্র দেড় কোটি টাকা।
মিৎসুবিশি এল-২০০ মডেলের ডাবন কেবিন পিকআপগুলোর ইঞ্জিন বর্তমানে প্রগতিতে সংযোজিত পাজেরো কিউএক্স মডেলের জীপের মতোই। দুটি গাড়িরই ইঞ্জিন ২ হাজার ৪৭৭ সিসির। এ কারণে এল-২০০ মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ সংযোজন করতে প্রগতির তেমন বাড়তি খরচ লাগছে না। শুধু জাপান থেকে বাড়তি কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে। দুটিই কাছাকাছি মডেলের হওয়ায় সর্ব সাকুল্যে এক থেকে দেড় কোটি টাকার নতুন মেশিনারিজ সেটআপ করলেই হবে বলে জানিয়েছেন প্রগতির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে এল-২০০ মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপের দাম পড়ে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু প্রগতি সংযোজিত একই মডেলের গাড়ির দাম ৪০ লাখ টাকার মধ্যে থাকবে আশা করছেন প্রগতির কর্মকর্তারা। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন তারা।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল) গত অর্থবছরে গাড়ি বিক্রি বাবদ আয় করেছে ৭৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সরকারি কোষাগারে ৪৩২ কোটি টাকা দেওয়ার পরেও সব মিলিয়ে ১০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা নীট মুনাফা করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ যেখানে লোকসান গুণছে সেখানে গাড়ি বিক্রি এবং মুনাফা দ্বিগুণ করার হাতছানি এখন প্রগতির সামনে।
পিআইএল সূত্র জানায়, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে এই গাড়িগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদা বেশি থাকলেও দেশে সংযোজিত না হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে দরপত্রের মাধ্যমে গাড়ি কেনা হয়ে থাকে। এর খুব ছোট অংশই জোটে প্রগতির ভাগ্যে। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রগতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা তা শুধু প্রগতিতে সংযোজিত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে প্রগতি ডাবল কেবিন পিকআপ সংযোজনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে স্বাভাবিকভাবে দেশের চাহিদার বড় অংশই প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকেই মেটানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন পিআইএল কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে মিৎসুবিশি মোটরসের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে পিআইএলের। পরীক্ষামূলক সংযোজনের জন্য যে ১২ ইউনিট এল-২০০ মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ আনা হয়েছে, সেগুলোর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য মিৎসুবিশির ৪ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রামে এসেছে। পরীক্ষামূলক সংযোজন পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য গত ২৯ অক্টোবর আরও ২০ ইউনিট সিকেডি গাড়ির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। ১১ নভেম্বর থেকে আলাদা টিম প্রগতির প্রকৌশলীদের হাতে কলমে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেবে। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে প্রগতি। চুক্তি অনুযায়ী, ১ম বছরে সংযোজন করতে হবে এক হাজার ২০০ ইউনিট এল-২০০ পিকআপ আর ২য় বছরে দুই হাজার ইউনিট।
পিআইএলের উপপ্রধান প্রকৌশলী (কারখানা প্রধান) কায়কোবাদ আল মামুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘‘মিৎসুবিশি এল-২০০ মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়িটি সংযোজন কাজ গত সোমবার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে। জাপানসহ ১১ জনের একটি বিদেশি দলও আছে এ প্রক্রিয়ায়। প্রথম মাসে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি গাড়ি সংযোজন করা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে এই মডেলের সিবিইউ গাড়ির বাজারমূল্য ৪৮ থেকে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু আমরা সংযোজন করলে এই গাড়ির দাম ৪০ লাখের মধ্যে চলে আসবে। এতে সরকারি অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি প্রগতির ব্যবসা এবং মুনাফাও এতে করে দ্বিগুণ করা সম্ভব।’’