অসহায়দের সেবায় চট্টগ্রামে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিটের’ যাত্রা
গায়ে পুলিশের পোশাক। হাতে লাঠি কিংবা অস্ত্র থাকার কথা। কিন্তু না, তাদের হাতে ছিলো প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রীর বাক্স।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল জরুরি বিভাগের পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে অসহায়দের এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আসছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একদল সদস্য।
বিষয়টি এতোদিন অজানা থাকলেও সম্প্রতি সিএমপি মানবিক পুলিশ ইউনিট গঠনের ঘোষণার পর এসব সদস্যদের কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে আসে।
এই উদ্যোগটি মূলত চট্টগ্রামের দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনের। ২০০৫ সালে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন শওকত। পাঁচ বছর পর ঢাকা থেকে বদলি হন চট্টগ্রামে। নার্সিং ও প্যারামেডিক ডিপ্লোমাধারী শওকত দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত।
মূলত শওকতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১১ সালে এ কাজে শামিল হয়েছেন কনস্টেবল মো. হান্নান, মো. মাঈনুদ্দীন, মো. মাহবুবুল আলম, মো. ইয়াছিন আরাফাত, মো. রবিউল হোসেন, মো. এমরান হোসেন। এতোদিন পরিচয় গোপন করে নিজেদের টাকায় তারা এ সেবা দিতেন। এই টিম প্রায় ৪০ জন অসহায়কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।
বিষয়টি নগর পুলিশের কর্মকর্তাদেরও নজরে ছিল না। বৃহস্পতিবার সিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় এই সাত মানবিক পুলিশ সদস্যের কাজের বিষয়টি উঠে আসে।
এ বিষয়ে মো. শওকত হোসেন বলেন, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের চমেক হাসপাতালে আনা নেওয়া করতে হতো তাঁকে। সেই সুবাদে হাসপাতাল এলাকায় অনেক অসহায় মানুষকে পথের ধারে পড়ে থাকতে দেখতেন যাদের বেশিরভাগই অভিভাবকহীন এবং প্রতিবন্ধী।
“এরপর থেকে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। পাশাপাশি বিষয়টি আমার সহকর্মীদের জানালে তারা এই কাজে শরিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা মূলত কোনো রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। কাজ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জনকে আমরা সেবা দিয়েছি। এদের মধ্যে প্রায় ২০ জনের ছোটখাটো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়েছিল।”
এদিকে এসব মানবিক পুলিশের সদস্যদের কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সিএমপি। এজন্য ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, “তারা সবার অজান্তে যে মানবিক কাজগুলো করেছে সেটি জেনে পুলিশ কর্মকর্তারা অভিভূত। এই কাজটা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ গঠন করবে সিএমপি।”