সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাড়ছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরিধি
দ্রুততম সময় ও স্বল্প খরচে অধিক সংখ্যক মানুষকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনতে প্রথমবারের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
শনিবার থেকে সরকারী ১৯৪টি পরীক্ষাগারের পাশাপাশি ব্র্যাকের ঢাকায় ১৫টি এবং চট্টগ্রামে ১টি বুথ নিয়ে সর্বমোট ১৬টি বুথের মাধ্যমে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার এই কার্যক্রম আরো গতি পেল। এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্র্যাকের এই বুথগুলোতে ১০৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১২ জন করোনা পজেটিভ হন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শনিবার সরকারী ১৯৪টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ২৫৪টি এবং এখন পর্যন্ত দেশে সর্বমোট অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৪৩টি।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখান থেকে এক মাস আগেও (২৪ এপ্রিল) ৭৩টি পরীক্ষাগারে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছিল ৫৯১টি। তখন মোট পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬৬৪টি। গত এক মাসে সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়েছে।
সরকারী তথ্য মতে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মত গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও সিলেট এই দশটি জেলা শহরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু হয়েছিল।
পর্যায়ক্রমে সরকারীভাবে এই উদ্যোগ বাড়ানো হলেও এতোদিন বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার অনুমতি ছিল না।
এদিকে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের মধ্যে বেশি রোগী শনাক্ত করতে জনস্বাস্থ্যবিদরা সরকারকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিল। এই অবস্থায় সরকার ব্র্যাককে পরীক্ষা শুরুর অনুমতি দিয়েছে।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা কর্মসূচীর টেকনিক্যাল ম্যানেজার ড. মিনারা জামান বলেন, 'স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আমরা পিসিআর কোভিড টেস্ট নিয়ে মহামারির শুরু থেকে কাজ করছিলাম। সেই আস্থা থেকে অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়ে কাজ শুরু করেছি'।
'যেহেতু এখন সংক্রমণ বেশি, তাই সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ (শনিবার) থেকে কার্যক্রম শুরু করলাম। অন্যদিকে কম খরচে দ্রুত সময়ে ফল পাওয়া যায় বলে সরকারও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে চাচ্ছে।
সবমিলিয়ে সরকারকে সহায়তা করার জন্য আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আমরা আরো বুথ বসাতে পারব। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে'।
তিনি বলেন, 'সরকারের তরফ থেকেও আমাদের যত বেশি সম্ভব রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে কিটসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়েও সরকারের প্রস্তুতি আছে।
উপসর্গ দেখা দেয়ার সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে এই পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ ফলাফল ঠিক আসে। সুতরাং আমরা আশা করছি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দ্রুত রোগী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে'।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, 'ঢাকায় এখন করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য অধিক রোগীর চাপ রয়েছে। প্রতিদিন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ এবং ব্র্যাকের নমুনা সংগ্রহ বুথে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
জ্বর নিয়ে কয়েক ঘন্টার ওপর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের। যদি এই জায়গাগুলোতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হয় তবে অল্প সময়ে আরও বেশি লোকের পরীক্ষা করা যেতে পারে। পরীক্ষার যেমন চাহিদা রয়েছে, তাতে অনেক বেশি সংখ্যক অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষ করে ঢাকার তীব্র সংক্রমিত এলাকাগুলোতে।
তাছাড়া আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মতো অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবস্থা বা দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ জনবল রয়েছে'।
ডা. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, 'অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য কোন কিট সংকট নেই। এমনকি যদি সংকট দেখাও দেয়, এসব কিট সহজেই আমদানি করা সম্ভব'।
ব্র্যাক বলছে, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে এবং প্রতিটি বুথে প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি করে নমুনা পরীক্ষা হবে। তবে পর্যায়ক্রমে ঢাকায় ৩২টি এবং চট্টগ্রামে ৪টি এবং অধিক সংক্রমিত এলাকায় কার্যক্রমটি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্র্যাকের।
এ বিষয়ে এক অনলাইন বার্তায় ব্রাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচীর পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, 'করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কাটা এসেছে খুব দ্রুতগতিতে। এই পরিস্থিতিতে বেশি বেশি পরীক্ষা হওয়া জরুরী।
এজন্য সরকারের চলমান করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে আমাদের এই উদ্যোগ। এতে পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে তা ৩০ মিনিটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং পজিটিভ ফলাফল ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে'।
'পিসিআর টেস্ট পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ফল পেতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় লাগে। সুতরাং এর ফলে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে। এই কার্যক্রমের সুফল দেশের সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এখন কাজ হলো সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে আলাদা করে আইসোলেশনে নেওয়া', যোগ করেন মোর্শেদা।
উল্লেখ্য, ব্র্যাক গত বছর মার্চ মাসের ১১ তারিখ থেকে বুথের মাধ্যমে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও পিসিআর কোভিড টেস্ট করে আসছিল। এবার তারা অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও শুরু করল।