প্রতিবেশীদের ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ করেছে ভারত, চাহিদা পূরণে চীনের প্রতিশ্রুতি
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় টিকাদানের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে নয়াদিল্লি, যেকারণে ভ্যাকসিন রপ্তানিও বন্ধ করা হয়। এই অবস্থায় নিজেদের জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিকে অচলাবস্থা থেকে রক্ষা করতে আরও বেশি চীনের মুখাপেক্ষী হচ্ছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো।
আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে তিনি বলেন, বেইজিং একটি বহুপাক্ষিক কাঠামোর মাধ্যমে এসব দেশে ভ্যাকসিনের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে আগ্রহী।
এই প্রস্তাব ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বহুল প্রচারিত ভ্যাকসিন কূটনীতির পূর্ব প্রচেষ্টার প্রতি বড় ধরনের আঘাত। মূলত, প্রতিবেশীদের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব হ্রাসেই চলতি বছরের শুরুতে ভ্যাকসিন কূটনীতিতে জোর দিয়েছিলেন মোদি, যার আওতায় এপর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে ভারত।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক উৎপাদন শিল্প থাকার পরও ভারত সংক্রমণের বৈশ্বিক রেকর্ডের মুখে টিকা রপ্তানি একেবারেই বন্ধ করে দেয়। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই দেশটিতে ভ্যাকসিন ডোজ সঙ্কটের ঘটনা গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হয়। মহামারির এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত্যু দেখছে দেশটি।
একমাত্র টিকা সরবরাহকারক দেশ হিসেবে ভারত প্রতিবেশী বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে, এই অবস্থায় ভারত রপ্তানি বন্ধ করে পূর্ব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে বলে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন।
ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও আগে থেকেই মূলত চীনা ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভরশীল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের (ভারতের) কাছে টিকা সরবরাহ চেয়ে যোগাযোগ করলেই তারা শুধু অপেক্ষা করতে বলছে। তাই আমরা এবার চীনের প্রতি যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুরোধ করেছি, সেখানে দেশটি ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে। অবশ্য এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা তারা দেয়নি।
দেশে ভ্যাকসিন সঙ্কটের সম্ভাবনা আমলে নিয়ে ইতোমধ্যেই রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক ফাইভ টিকার জরুরি ব্যবহার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ফলে আগামী মাস থেকেই এটি আমদানি করা যাবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান আজ মঙ্গলবার মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গকে টেলিফোনে জানান, বাংলাদেশ টিকার উৎস সম্প্রসারিত করবে এবং সরকার যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন আমদানির পরিকল্পনা করছে।
তবে চীনা টিকার কার্যকারিতা হার কম হওয়ায় চীন রপ্তানি করলেও খুব বেশি মানুষ এটি নিতে চাইবেন না বলে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।
এদিকে মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে ভারতে চলমান প্রলয়ঙ্করী সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিকে সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তাব দেন ওয়াং ই। সহায়তা দেওয়া নিয়ে ভারতের প্রতিও বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে বলে জানান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ