ভোগান্তির শেষ নেই, তিনবার গাড়ি বদলে, পায়ে হেঁটে ঘাটের দেখা
ঈদের বাকী আর মাত্র ৫ দিন। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ রয়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া-ফেরিঘাট এলাকায়। এসব যাত্রীদের সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে বিজিবি।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার কয়েক লক্ষ মানুষের যাতায়াত। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের প্রতিটি ঘাট হয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার যান পারাপার হয়।
ঈদসহ যেকোন উৎসবে এই যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন।
জেলাভিত্তিক যান চলাচল স্বাভাবিক থাকায় নানান প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে ঘাটমুখী মানুষের স্রোত রয়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। এসব যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বিজিবি ও পুলিশি চেক পোস্ট।
তবে মানবিক কারণে বেশির ভাগ যাত্রীই রেহাই পাচ্ছে এসব চেক পোস্ট থেকে। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে একই কারণে নৌরুট পারাপারের সুযোগ পাচ্ছে এসব যাত্রী।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বারবারিয়া ব্রিজ এবং সিংগাইর উপজেলার ধল্ল্যা ব্রিজ এলাকায় পুলিশ এবং বিজিবির চেকপোস্ট রয়েছে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া সাধারণ যাত্রীদের এসব চেক পোস্ট পাড়ি দিয়ে ঘাট অভিমুখে যাত্রা করার সুযোগ নেই।
তবে একদিকে প্রখর রোদ, অন্যদিকে রোজা। ফলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চেক পোস্ট পাড়ি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বেশিরভাগ যাত্রী। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা চেক পোস্ট থেকে রেহাই পাচ্ছেন দ্রুত।
রোববার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবারিয়া চেক পোষ্ট এলাকায় সরেজমিনে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের চেক পোস্ট দেখা যায়। এর একটু পরেই রয়েছে বিজিবির চেক পোস্ট। কিন্তু এতসব নিরাপত্তার পরও কিছুতেই থামছে না ঘাটমুখী মানুষের স্রোত।
নানা অজুহাতে ঘাটে যাচ্ছেন যাত্রীরা। দীর্ঘ সময় ফেরিঘাট এলাকায় অপেক্ষার পর নৌরুট পারাপারের সুযোগ পাচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।
মহাসড়কের বারবারিয়া এলাকায় আলাপ হলে যশোরমুখী যাত্রী আলফাজ মিয়া বলেন, ঈদের ছুটি গ্রামে উদযাপন করতে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। ঢাকা থেকে নবীনগর পর্যন্ত আসতে তিনটি গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। এরপর নবীনগর থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।
আসমাউল হুসনা নামের এক যাত্রী বলেন, প্রতি বছরই কষ্ট করে ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তাই কষ্ট হবে জেনেও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তিনি।
চেক পোস্ট এলাকায় আলাপ হলে মোখলেছুর রহমান নামের এক প্রাইভেট কার চালক বলেন, সব প্রাইভেট কার চালকেরা সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানেরা ছাড়াও বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছে। কাজেই বাধ্য হয়ে কাজে বের হতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বারবারিয়া এলাকায় আলাপ হলে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, রোববার সকাল থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের টিম। ঢাকা জেলার কোন যাত্রীবাহী বাসের সরাসরি মানিকগঞ্জ প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।
বারবারিয়া ব্রীজের ধামরাই অংশে ঘাটমুখী যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর পাঁয়ে হেঁটে কিছুদূর যাওয়ার পর নয়াডিঙ্গি বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফের ঘাটে বা মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে যাত্রীরা।
গোলড়া এলাকায় আলাপ হলে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এক প্লাটুন বিজিবি নিয়ে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন।
যাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের বিষয়টি কঠোরভাবে খেয়াল করা হচ্ছে। বেখেয়ালি যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্পোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, জরুরী সেবার জন্য ফেরিঘাট এলাকায় ২/৩টি ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর ওই ফেরিগুলো নৌরুটে চলাচল করছে।
সেসব ফেরিতে করে কিছু কিছু যাত্রী পারাপার করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মানবিক কারণে এসব যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, জেলার দুই প্রবেশদ্বারে দুই প্লাটুন বিজিবি ও ম্যাজিষ্ট্রেট রয়েছে। এছাড়া ফেরিঘাট এলাকাতেও এক প্লাটুন বিজিবি ও ম্যাজিষ্ট্রেট রয়েছে।
ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য বিধি রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।