ঈদের পর আরো একদফা বাড়লো ভোজ্যতেলের দাম
ভোগ্যপণ্যের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বেড়েই চলছে ভোজ্যতেলের দাম। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বর্তমানে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয় ২০০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪৪৫০ টাকায়। অথচ রমজানের শেষদিকে বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৪১০০ টাকায়। সেই হিসেবে, ঈদের বন্ধ শেষে গত তিন দিনে পণ্যটির দাম মণপ্রতি ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪৪৫০ টাকা দরে। যা ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত (বুধবার) ৪১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, ঈদের ছুটি শেষে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ পাম অয়েলের দাম ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাম অয়েলের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪৪৫০ টাকা, এস আলম ৪৪৪০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪৪৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
একই সময়ে বাজারে পাম সুপার অয়েলের দামও মণপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ইদের আগে বাজারে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪৩৫০ টাকা দামে। যা বর্তমানে ৪৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রপের প্রতিমণ বে ফিশিং ৪৫০০ টাকা, এস আলম ৪৪৯০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
একই সময়ে মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৭০০ টাকা দরে। যা ইদের আগে ৪৬০০ টাকায় বিক্রি হতো।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে উর্ধ্বমুখী রয়েছে ভোজ্যতেলের বাজার।
গত এপ্রিল মাসে আর্ন্তজাতিক বাজারে কিছুটা নিম্নমুখী হলে চলতি মাসে আবারো বাড়তে শুরু করেছে পাম অয়েলসহ সব ভোজ্যতেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে ঈদের পর থেকে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা আর এম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শেখ সেলিম বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে পাম অয়েলের বাজার উর্ধ্বমুখী।
মালয়েশিয়ায় এখন নতুন মৌসুমের পাম বাজারে আসছে। মৌসুমের শুরুর দিকে গত মাসে পাম অয়েলের বাজার কিছুটা কমলে চলতি মাস থেকে আবার উর্ধ্বমুখী হয়েছে পণ্যটির বাজার। এতে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দামে প্রভাব পড়েছে।
তথ্যমতে, বর্তমানে মালয়েশিয়াতে প্রতিটন পাম অয়েলের বুকিং দর ৪৪০০ রিঙ্গিত। যা গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৩৭০০-৩৮০০ রিঙ্গিত এবং মাসের শেষ দিকে ৪১০০ রিঙ্গিতে বুকিং হয়েছে। সেই হিসেবে, গেল দুই-তিন সপ্তাহে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিটন পাম অয়েলের দাম প্রায় ৩০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত বেড়েছে।
ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাম অয়েলের বাজার বাড়তে শুরু করে। ওই সময় প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ২৪২৮ রিঙ্গিতে। দফায় দফায় বেড়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪১১৬ রিঙ্গিতে। এরপর পণ্যটির দাম আস্তে আস্তে কমতে গত মাসে (এপ্রিল) ৩৭০০ রিঙ্গিতে পৌঁছে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে পণ্যটির দাম আবার বাড়তে শুরু করে। এরমধ্যে পণ্যটির দাম বেড়ে বর্তমানে ৪৪০০ রিঙ্গিতে বিকিকিনি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বুকিং দর ৪৪০০ হিসেব করলে প্রতিটন পাম অয়েলের বাজার মূল্য (১ রিঙ্গিত =২২ টাকা) দাঁড়ায় ৯৬৮০০ টাকা। এর সাথে ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করে প্রতিটন পাম অয়েল আমদানিতে মোট খরচ হয় ১০৬৮০০ টাকা। সেই হিসেবে, খরচসহ প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম হয় ১০৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতিমণ (৪০.৯০ লিটার) পাম অয়েলের মূল্য দাড়াঁয় সর্বোচ্চ ৪৩৩৫ টাকা।
অবশ্য খাতুনগঞ্জে যেসব পাম অয়েল বর্তমানে ৪৪৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে সেসব পাম অয়েল আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে কমপক্ষে আরো দুই মাসের আগের কেনা। ওই সময় পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ৩৮০০-৪১০০ রিঙ্গিত। অর্থাৎ বর্তমানে বাজারে থাকা মণপ্রতি পাম অয়েলের কেনা দর ছিল সর্বোচ্চ ৪১০০ টাকার মধ্যে।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সব তেলের বুকিং দর বাড়তি। পূর্বের আমদানি করা পণ্য এখন বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বুকিং দেয়া পণ্য বাজারে পৌঁছলে ভোজ্যতেলের দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস'র তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের গেল নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছরের একই সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৩ মেট্রিক টন। চলতি বছরের এক সময়ে সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।