তারা ভ্যাকসিন বিরোধী!
নামকরা দুজন অ্যান্টি ভ্যাক্সারের নাম বলুন। একজন এশীয়, একজন ইউরোপিয়ান।
খ্যাতিমান এশীয় হচ্ছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী আর ইউরোপিয়ান খ্যাতিমান জর্জ বার্নার্ড শ।
তার আগে জানা দরকার অ্যান্টি-ভ্যাক্সার কে?
১৮৫৩ সালে The Compulsory Vaccination Act of 1853 জারি হবার পরপরই অ্যান্টি-ভ্যাক্সাররা দাঁড়িয়ে যান। অ্যান্টি ভ্যাক্সার মানে ভ্যাকসিনেশন বিরোধী বা টিকা-বিরোধী, যে আইনে টিকা প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয় তার বিরোধী। সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য বিষয় হচ্ছে ছোঁয়াচে রোগ যেগুলো কালক্রমে মহামারি ও বিশ্বব্যধিতে পরিণত হয় তা প্রতিহত করতে সর্বোত্তম প্রতিষেধক হচ্ছে টিকা। ছোঁয়াচে রোগের বোঝা পৃথিবী থেকে কমাতে ভ্যাকসিন বা টিকা অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অ্যান্টি ভ্যাক্সাররা এসব বিবেচনায় আনতে রাজি নন। অধিকন্তু তারা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অপ্রচার চালায়। তারা মনে করেন বাধ্যতামূলক টিকা মানবাধিকারের পরিপন্থী।
টিকা নিরাপত্তা প্রদানের বদলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। টিকা বিরুদ্ধবাদ কতোটা শক্তিশালী তা পরিমাপ করা হয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে টিকা বিরোধীদের যে অনেক সংগঠন রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেছেন টিকা দেওয়া হচ্ছে একটি বর্বোরোচিত চর্চা, আর একালে যত বিভ্রান্তি রয়েছে তার মধ্যে টিকা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।
তিনি আরও বলেছেন, টিকার সচেতন বিরোধী তিনি তাকে একাই দাঁড়াতে হবে, প্রয়োজনে সমস্ত পৃথিবীর বিরুদ্ধে তার বিশ্বাসের প্রতিরক্ষায়।
জর্জ বার্নার্ড শ বক্তব্য আরো জঙ্গী, টিকা খুনের চেয়ে কম কিছু নয়। তিনি আরও লিখেছেন, বর্তমানে বুদ্ধিমান লোকেরা তাদের সন্তানদের টিকা দেওয়াচ্ছেন না, কিংবা আইনও এখন তা করতে বাধ্য করছে না। তার ফলে জেনারিয়ানরা (জেনার বসন্তের টিকা অবিষ্কারক) যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন গুটি বসন্তে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে তা ঘটছে না বরং গুটি বসন্তে যত মানুষ মরছে তার চেয়ে বেশি মরছে টিকার কারণে।
বার্নাড শ বলেছেন জনগণের স্বাভাবিক অজ্ঞানতা এবং সাধারণ চিকিৎসকদের ভ্রান্ত টিকাজ্ঞানের কারণে টিকার মতো বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে।
জর্জ বার্নার্ড শ
গান্ধী অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছেন। আমি বহু বছর ধরেই এবং এখনো একজন নিশ্চিত ভ্যাকসিন বিরোধী। মৌলবাদী চিকিৎসা বিষয়ক অভিমত যাদের, ভ্যাকসিন বিরোধিতার প্রতি তাদের কোনো সর্মথন নেই। চিকিৎসা পেশার কেউ যদি টিকার বিরুদ্ধে বলেন তাহলে তিনি জাত খোয়ান। গান্ধী মনে করেন, টিকাকে ঘিরে অস্বাভাবিক স্বার্থ গড়ে উঠেছে।
ডক্টর লিওনার্দ হুরোভিচ লিখেছেন, যত মিথ্যেকথা এযাবৎ বলা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যে হচ্ছে টিকা নিরাপদ ও কার্যকারী।
১৯৯৮ সালে এন্ড্রু ওয়েকফিল্ড ল্যান্সেট-এ লিখেছেন মিসেলস মাম্পস ও রুবেলা (এমএমআর) টিকার সাথে অটিজমের একটি সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে ভীষণ হই চই শুরু হয়। বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ল্যান্সেট তাদের প্রকাশিত প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করে নেয়। প্রত্যাহার করে নিলেও একটি সংশয় ছড়িয়ে পড়ে। ডক্টর আইযুব ডেভিড লিখেন টিকা যে অটিজম সৃষ্টি করছে আমি তার সাক্ষ্য টেনে তুলছি না- যথেষ্ট সাক্ষ্য রয়েছে... এই বিতর্কটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর নয় বরং তার রাজনৈতিক বিতর্ক।
যারা ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের উপর আস্থাশীল এবং ধর্মীয় নিষ্ঠায় তার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক এটা যারা কামনা করেন তাদের অ্যান্টি ভ্যাক্সার হবার কারণ রয়েছে। ম্যালথাস বলেছেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট সঙ্কট কাটাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভয়াবহ রোগ বালাই এসে জনসংখ্যা নামিয়ে আনবে। অবশ্য দু'একটি ভ্যাক্সিন যদি তার তত্ত্ব প্রকাশের আগে বাজারে আসতো ম্যালথাস জনসংখ্যার সমস্যার সমাধানে ভিন্ন কিছু ভাবতেন।
সিআইএ ওসামা বিন লাদেনের সন্ধানে ভুয়া টিকা কেন্দ্র স্থাপন করে। বিষয়টির ভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড়ায়। টিকা দিয়ে মুসলমানদের সন্তান উৎপাদন ও ধারণ ক্ষমতা নষ্ট করে মুসলমান জন্যসংখ্যা হ্রাস করতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই ধর্মীয় ব্যাখ্যাটি বিভিন্ন মুসলমান গোষ্ঠি এবং তালেবানরাও গ্রহণ করে। ফলে বিভিন্ন স্থানে টিকাকর্মীদের উপর আক্রমণ চলতে থাকে, অনেকেই নিহত হন। প্রতিশোধমূলক আমেরিকান ড্রোন আক্রমণ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে সাধারণ মানুষ টিকা কেন্দ্র এবং টিকাকারদের এড়িয়ে চলতে থাকে। ফলে পৃথিবী অন্যান্য অংশ থেকে পলিও নির্মুল হলেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পোলিও প্রবণ রয়ে গেছে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ
ভিয়েতাম কেবল রণাঙ্গণই নয়, বিভিন্ন ধরণের রোগেরও হট বেড বা বিস্তারের উত্তম স্থান। সুতরাং আমেরিকান সৈন্যদের ভিয়েতনামে যাবার আগে তাদের বহুরকম টিকা দেওয়া হতো; কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, বিউবেনিক প্লেগ, পোলিও ভাইরাস, গুটি বসন্ত, টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, টাইফাস এবং ইয়েলো ফিভার। পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারের সাথে মিলে যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় অধিবাসীদের টিকা কর্মসূচির আওতায় এনে 'হউ বেড' ধারণার বিশেষ পরিবর্তন ঘটায়।
স্প্যানিশ- আমেরিকান যুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়লিপনা প্রতিষ্ঠিত রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বাধিয়েছে এবং সৈন্য প্রেরণ করেছে। ১৮৯৮ সালে ৫ মাসব্যাপী স্প্যানিশ আমেরিকান যুদ্ধ হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের কাছ থেকে কিউবা, পোয়ের্টো রিকো এবং ফিলিপাইন অধিকার করে নেয়। তখন যুদ্ধে যত না আমেরিকান সৈন্যের মৃত্যু ঘটেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটেছে স্থানীয় রোগে। শুধু তাই নয়। তারা এই রোগ বহন করে যেখানে গিয়েছে সেখানে ছড়িয়েছে, এবং আমেরিকাতেও নিয়ে এসেছে। ১৮৯৯ সালে ছয় মাস ও তদুর্ধ্ব বয়সী সকলকেই টিকা নিতে হবে এই সামরিক আদেশে ৫ মাসে ৮৬০০০ পোয়ের্টোরিকানকে টিকা দেওয়া হয় এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি অন্যান্য দেশেও সম্প্রসারিত করা হয়। টিকা না নিলে বা নিতে অস্বীকার করলে ১০ ডলার তাৎক্ষণিক জরিমানার আদায় শুরু হয়। ফলে সে অঞ্চলে তখন অ্যান্টি- ভ্যাকসিন আন্দোলন গড়ে উঠতে পারেনি।
ভ্যাকসিন ও অটিজম
ষড়যন্ত্র তত্ত্বই হোক কিংবা 'অপ্রাসঙ্গিক গবেষণার প্রচারণাই হোক বহুদিন ধরে চলে আসছে টিকা অটিজমের কারণ। বিশেষ করে অ্যান্টি-ভ্যাক্সার গ্রুপ প্রায় সকল আন্দোলনে এটি সামনে নিয়ে আসে- তাদের দাবি এন্ড্রু ওয়েকফিল্ডের গবেষণার সত্যকে ভ্যাকসিন প্রমোশন গ্রুপ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে গবেষণা বিকৃত করে ফলাফল তৈরি ও প্রকাশনার অভিযোগে ওয়েকফিল্ডকে যুক্তরাজ্যে মেডিক্যাল রেজিস্টার থেকে খারিজ করা হয়েছে। সর্বসম্মত গবেষণায় এখন জানানো হয়েছে এমএমআর ভ্যাকসিন এবং অটিজমের মধ্যে কোনো সম্পর্ক এ যাবৎ আবিষ্কৃত হয়নি।
এস আই ডি এস
সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রৌম- বহুসংখ্যাক টিকা গ্রহণের পর শিশুর এ ধরণের আকস্মিক মৃত্যুর নজির রয়েছে। কিন্তু অ্যন্টি-ভ্যাক্সাররা এই মৃত্যুর দায় অর্পন করেছেন ডিপথেরিয়া টিটেনাস টাইফয়েড টিকার উপর। অনেক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর এই দুইয়ের কোনো যোগসূত্র চিকিৎসক ও গবেষকরা বের করতে সমর্থ হননি। ২০০৩ সালে আমেরিকান ইহস্টিটিউট অব মেডিসিন এই দাবি প্রত্যাখান করেছে।
গাল্ফ ওয়ার সিনড্র্রৌম
১৯৯০-৯১ সালে পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে ফেরার পর মার্কিন সৈন্যদের অনেকেরই তীব্র ক্লান্তি, মাংসপেশীর যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়া, ডায়েরিয়া, মানসিক অস্থিরতাসহ একটি জটিল দেহ-মানসিক সঙ্কট হয়েছে। যুদ্ধ ফেরত সৈনিকের ট্রমা নতুন কিছু নয়। এই জটিল গাল্ফ ওয়ার সিনড্রোমের জন্য অ্যান্ট্রি-ভ্যাক্সাররা অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিনকে দায়ী করেছেন। বায়োটেররিজম বা অনুজীব সন্ত্রাসের রিুদ্ধে লড়াইতে অ্যানথ্রাক্সকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাদার জোনস পত্রিকায় এই সৈনিকদের বেলায় একই সঙ্গে বসন্তের টিকা ও অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রয়োগকে সর্বনাশের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবির ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
অ্যান্টি-ভ্যাক্সারদের জন্য ১৯৭৬ সালের প্রেসিডেন্ট ফোর্ড প্রশাসনে সোয়াইন ফ্লু ক্যাম্পেইন একটি বড় হাতিয়ার। যে পরিমাণ টিকার প্রয়োজন ছিল তার চেয়ে বহুগুণ বেশি তৈরি করা হয়েছে এবং এমনকি অনাগ্রহী দেশেও জোর করে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে সোয়াইন ফ্লু টিকা নেবার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুলেন ব্যারি সিনড্রৌমের প্রকোপ বেড়ে যাবার অভিযোগও উঠেছে, ইউরোপ ও আমেরিকার পরীক্ষাগারে এর যোগসূত্র মেলে। সোয়াইন ফ্লু-র নামে তখন আমেরিকা ও ইউরোপ গোটা পৃথিবীকেই সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল।
ভ্যাকসিনের সাথে মৃগীরোগ, এলার্জি, স্লেরোসিস, ম্যাডকাউ ডিজিস, এনসেফেলোপ্যথি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, এবং এইচআইভি-র সংযোগ কিংবা প্রকোপ বৃদ্ধির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস
টিকাবিরোধী আন্দোলনকারীদের জোর দাবি প্রতিকূল অবস্থায় শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে এবং বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিকভাবে লড়াই করে বহিরাগত জীবানুকে ধ্বংস করে ভ্যাকসিন শরীরের সেই স্বাভাবিক বিকাশকে প্রতিহত করে। টিকা শেষ পর্যন্ত শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে তাদের যুক্তি।
খ্রিষ্টিয় হুজুরদের অ্যান্টি-ভ্যাক্সার ভূমিকা
খ্রিষ্টিয় ধর্মযাজকরা একসময় বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ১৮৭৩ থেকে ১৮৭৪ পর্যন্ত সুইডেনের স্টকহোমে যাজকদের টিকা বিরোধী প্রচারণায় সুইডেনের অন্যান্য অংশে যেমন ৯০ ভাগ টার্গেট অর্জিত হয়, স্টকহোমে তা দাঁড়ায় মাত্র ৪০ ভাগ। অথচ স্টকহোমই রাজধানী ও জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্র। কাজেই অ্যান্টি-ভ্যাক্সার হিসেবে চিহ্নিত আন্দোলনকারীদের চেয়ে অনেক বেশি সফল ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
হুপিং কফ
এমনকি ১৯৭০ ও ১৯৮০ র দশকে ব্র্রিটেনে হুপিং কফের টিকাদান শুরু হবার পর একজন গবেষক গণমাধ্যমে এসে দাবি করলেন এই টিকা কার্যকারিতা অতি সামান্য। অমনি টিকা প্রয়োগ ৮১ থেকে ৩১ ভাগে নেমে গেল। হুপিং কাশিতে বেশ ক'জন শিশুর মৃত্যু হবার পর গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রধান গণমাধ্যম টিকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে তা আবার ৯০ তে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হন।
গভর্নরও অ্যান্টি-ভ্যাক্সার
নতুন সস্রাব্দের শুরুতে নাইজেরিয়া মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা প্রয়োগ করা শুরু হয়। কিন্তু রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতারা তাদের অনুসারীদের নির্দেশ দেন তারা যেন সন্তানদের এই টিকা না খাওয়ায়, কানো স্টেটের গভর্নর ধর্মযাজকদের সমর্থন জানালে পুরো কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়, পোলিও দেখা দেয় এবং নাইজেরিয়াকে পোলিও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০৭ সালে নাইজেরিয়ার বোর্নোতেই ২০০ শিশু পোলিও আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
নেদারল্যান্ডসেও টিকা বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠি রয়েছে।
এমনকি মধ্য প্রাচ্যে এবং ভারতবর্ষেও মুসলমান ধর্মীয় নেতাদের কেউ কেউ টিকা গ্রহণ করে রোগ দমন করাকে সমর্থন করে না।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাতে হাম মহামারী দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় কেবল মাত্র যে শিশুরা টিকা নেয়নি তারাই আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিশুরা নয় তাদের বাবা মা টিকা বিরোধী দীক্ষা গ্রহণের কারণে সন্তানদের টিকা নেওয়া থেকে বিরত রেখেছে।
২০১৯ এর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দু'লক্ষ অধিবাসীর দেশ সামোয়ার ৪৯৯৫ জন হামে আক্রান্ত হয় এবং ৭২ জন মারা যায়। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষনা করে টিকা দেওয়া হয়। হঠাৎ এই প্রকোপের একটি কারণও রয়েছে। এর আগে টিকা পরবর্তী জটিলতায় দু'জন শিশুর মৃত্যু হলে প্রায় সকলেই টিকা বর্জন করে। ভারতের উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। কারণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ ক্লিপে দাবি করা হয় মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকাতে এই টিকা মোদি সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের সম্মিলিত ষড়ষন্ত্র।
পৃথিবীকে মহামারি ও বিশ্বব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে অবশ্য টিকামুখী হতে হবে আবার ফার্মা মাফিয়ার কবলে যেন দরিদ্র ও মাঝারি আয়ের দেশগুলো না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে এক ধরনের আন্দোলন চলমান থাকাও প্রয়োজন।