হারিয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার’ শামুক-ঝিনুক
কালের বিবর্তনে দেশের উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার্স’ বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুক। গত তিন দশকে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকত থেকে ঝিনুকের প্রায় আশি শতাংশ আবাসস্থলই হারিয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এ পরিস্থিতির জন্য পরিবেশ দুষণ, আবাসস্থলের পরিবর্তন, নির্বিচারে ঝিনুক আহরণসহ নানা কারণকে দায়ী করা হচ্ছে।
সমুদ্রের ‘পানি পরিষ্কারক’, ‘সৈকতের পাহারাদার’সহ নানা নামে পরিচিত ঝিনুককে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য বা প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয়। ঝিনুক হারিয়ে গেলে সমুদ্রের অসংখ্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশংকা করেন বিজ্ঞানীরা। কারণ একটি ঝিনুক প্রতিদিন গড়ে ২৪ থেকে ৯৫ গ্যালন পানি পরিশুদ্ধ করে বলে অভিমত বিজ্ঞানীদের।
দেশ থেকে সামুদ্রিক ঝিনুক হারিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজারস্থ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিউিটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী বলেন, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক উপকুলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ঝিনুকের আবাসস্থল রয়েছে। এসব অঞ্চলের ঝিনুকে মুক্তাও পাওয়া যায়। প্রায় এক যুগ আগের এক জরীপে দেশে ১৪২ প্রজাতির সামুদ্রিক ঝিনুক ও ১৫৯ প্রজাতির শামুক শনাক্ত হয়। যার মধ্যে প্রায় ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায়। আর এরমধ্যে ৩টি সামুদ্রিক প্রজাতির ঝিনুক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদনও করা সম্ভব।
পরিবেশবিদদের মতে, সাম্প্রতিককালে নির্বিচারে ঝিনুক আহরণ, পরিবেশ দুষণ ও আবাসস্থলের পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশ থেকে ঝিনুকের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশে ঝিনুকের গুরুত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, একটি ঝিনুক প্রতিদিন গড়ে ২৪-৯৫ গ্যালনের ওপরে পানি পরিশুদ্ধ করে। পানির নাইট্রেটস ও অ্যামোনিয়া শোষন করে পানিকে বিভিন্ন প্রাণির বসবাসের উপযোগী রাখে। ঝিনুক তাদের অভ্যাসগত কার্যক্রমের মাধ্যমে এমনভাবে কাঠামো তৈরি করে যাতে সমুদ্র উপকূলে জোয়ার প্রবাহ, তরঙ্গ ক্রিয়া এবং পলল গতিবেগ প্রভাবিত হয়। সামুদ্রিক প্রবাহ থেকে মাটি ক্ষয় রোধ করে সমুদ্রের তীর গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে ঝিনুক। এ কারণে উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য ঝিনুকের ভূমিকা অপরিহার্য। ঝিনুক না থাকলে সমুদ্রের অনেক প্রাণি টিকে থাকতে পারতো না।
ড. জুলফিকার আলী বলেন, ঝিনুক থেকে অলংকার ও গৃহ সাজসজ্জাকরণ উপকরণ ছাড়াও ঝিনুকের খোলস থেকে চুন, পোল্ট্রি ও ফিশ ফিড তৈরি হয়। মাছ ও প্রাণির ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ঝিনুক। এছাড়া ঝিনুকের মাংসল অংশ চিংড়ি, মাছ ও হাঁস-মুরগীর খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো ঝিনুকের মাংস খেয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ও সমুদ্র বিজ্ঞানী ড. শাহাদৎ হোসাইন বলেন, সামুদ্রিক ঝিনুকের মধ্যে কিছুর খোলস বা সেল অত্যন্ত ক্যালসিয়াম যুক্ত যা অসম বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এগুলো মানুষের খাদ্য তৈরি থেকে শুরু করে মুক্তা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন দেশে চাষ করা হয়ে থাকে। খাদ্যপোযুক্ত ঝিনুকে গ্লাইকোজেন, লিপিড, প্রোটিন, ভিটামিন এ বি ডি ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ লবণ বিদ্যমান। উইন্ডোপ্যান ওয়েস্টারের (ঝিনুক) স্বচ্ছ খোলস দিয়ে বিভিন্ন ডেকোরেটিভ শো-পিস তৈরি করা হয়ে থাকে। ঝিনুক খোলসের নির্যাস থেকে উন্নত দেশে আয়ুবের্দিক ও হোমিও প্যাথিক ঔষুধ তৈরি করা হয়। জাপান, থাইল্যান্ড, মালোয়শিয়া, শ্রীলংকা ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও রয়েছে।
তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ঝিনুক সংগ্রহের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় দেশ থেকে ঝিনুক হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানান কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, ঝিনুকের আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়ার কারণে জোয়ারের প্রবাহে সমুদ্র উপকূলের মাটি ক্ষয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে মুক্তার প্রাপ্যতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় স্বল্প উষ্ণপ্রধান ও উষ্ণপ্রধান সামুদ্রিক জলাশয় ঝিনুকের আবাসস্থল। এরা সমুদ্রের স্বল্প গভীর হতে ৮০ মিটার গভীর এলাকায় বিচরণ করে। মানুষ ও জলজ পরিবেশ উভয়ের জন্যই ঝিনুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলাশয় থেকে শৈবাল, জৈব পদার্থ এবং দ্রবীভুত ক্ষতিকারক উপাদান যেমন: ভারী ধাতু দুরীকরণে ঝিনুকের ভূমিকা রয়েছে। তাই ঝিনুক প্রাকৃতিক পানি পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের ক্ষেত্রেও ঝিনুক একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান এবং এরা জলজ খাদ্য শিকলের বিভিন্ন স্তরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করলে পরিবেশের ক্ষতি হয়।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে প্রচুর পরিমাণ ঝিনুক দেখা যেতো। কিন্তু শহরে এখন ঝিনুকের আবাসস্থল নেই বললেই চলে। একইভাবে কলাতলী থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সৈকতেও আগের তুলনায় খুব কমই ঝিনুক পাওয়া যাচ্ছে। এখন সৈকতে মরা ঝিনুক পাওয়া না যাওয়ায় অনেকেই পানি ও মাটির নীচ থেকে জীবন্ত ঝিনুক তুলে এনে বিক্রি করছে। কক্সবাজারের বাঁকখালী ও সোনাদিয়া মোহনা, হিমছড়ি, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী, মনখালী, শাপলাপুর, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে শামুক-ঝিনুক।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, মাত্র ৩ দশক আগেও ঝিনুকের জন্য আমরা খালি পায়ে শহরের সমুদ্র সৈকতে হাটতে পারতাম না। অনেক সময় খালি পায়ে সৈকতে নামতে গিয়ে পা কেটে যেতো। আর এখন সৈকতে আগের ঝিনুকের কদাচিৎ দেখা মেলে।
দেশের বিশিষ্ট সমুদ্র বিজ্ঞানী-গবেষক ও কক্সবাজারের সাবেক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ম কবীর আহমদ বলেন, তিন দশক আগে কক্সবাজার সৈকতে যে পরিমাণ শামুক-ঝিনুক দেখা যেতো তার ২০ শতাংশও এখন আর অবশিষ্ট নেই। সমুদ্র সৈকত থেকে বেপরোয়াভাবে পাথর ও ঝিনুক উত্তোলনের কারণে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত কারণে ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়ে গত ২৮ বছরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী থেকে হিমছড়ি পেঁচারদ্বীপ পর্যন্ত এলাকার ৫শ মিটারেরও বেশি জমি সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার বিস্তীর্ণ ভূমিও একইভাবে এখন সাগরগর্ভে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
কলাতলীর বয়োবৃদ্ধ জেলে আবদুর রহমান মাঝি জানান, কলাতলী সাগর তীরে তাদের বাপ দাদার যে বসত ভিটেটি ছিল তা বর্তমান সমুদ্রের কিনারা থেকে অন্তত ৫শ’ মিটার দূরে ছিল। সেখানে তাদের চাষাবাদের জমিও ছিল। এখনও সেই জমির খতিয়ান ও রেকর্ডপত্র রয়েছে।
সমুদ্র বিজ্ঞানের মক্কা নামে পরিচিত নেদারল্যান্ডসে ঝিনুক নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শাহনওয়াজ চৌধুরী। কস্তুরা প্রজাতির ঝিনুকের সাহায্যে উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ বাঁধ তৈরি করা যায় জানিয়ে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীদের অর্জিত প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের দেশের উপকূলেও সেই ধরনের বাঁধ তৈরি করা যায় কীনা তা নিয়ে আমরা গত প্রায় ৫ বছর ধরে গবেষণা করছি। এবিষয়ে আমরা নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতাও চেয়েছি।
পরিবেশে ঝিনুকের প্রভাব সম্পর্কে কক্সবাজারস্থ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের জেষ্ঠ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হক বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অস্তিত্ব নির্ভর করছে শামুক-ঝিনুকের বাসস্থল টিকে থাকার ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই ঝিনুকের মড়ক লাগছে আর শত শত টন মরা শামুক-ঝিনুক কূলে ভেসে আসছে। গত ৭ বছরে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় এই ধরনের ঘটনা পর পর দুইবার দেখা গেছে।
তিনি আরও জানান, দেশের অনেকগুলো বিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুকের মধ্যে অন্যতম হলো গ্রিন মাজেল বা কালো ঝিনুক। আগে সৈকতে প্রচুর পরিমাণে কালো ঝিনুক দেখা গেলেও এখন খুবই বিরল।
ঝিনুকের আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেশ বা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক, কক্সবাজারের সন্তান প্রফেসর জাহেদুর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সৈকতের জীববৈচিত্র দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তা রক্ষার জন্য অচিরেই উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বিচারে ঝিনুক আহরণসহ নানা কারণে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত এবং সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হলে ২০০৫ সালে এসব এলাকাকে পরিবেশ আইনে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। এই আইনে সমুদ্র উপকূল থেকে শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, বালি, পাথর ইত্যাদি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়।
কক্সবাজারের পরিবেশ সংগঠনের নেতারা বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল থেকে অবৈধভাবে শামুক ঝিনুক তোলা হচ্ছে। এর ফলে ভূমিক্ষয়ের শিকার হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোন প্রশাসন এ অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে, তবু আমরা খবর পেলে ঝিনুক আহরণকারীদের তাড়া করি।
ঝিনুকের তৈরি সাজসজ্জা সামগ্রি বিক্রির জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠেছে কয়েকশ’ দোকান। এখানে ১০টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত ঝিনুকের পণ্য রয়েছে। এছাড়া ঝিনুকের সামগ্রি বিক্রির জন্য শহরে আরও কয়েকশত যুবক ও শিশু ভ্রাম্যমাণ হকার রয়েছে। এই পেশার সঙ্গে কয়েক হাজার পরিবার জড়িত রয়েছে।
প্রাকৃতিক উৎস থেকে ঝিনুক তোলার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি না করে ঝিনুক চাষের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দেশের মানুষের জীবন জীবিকার উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন ড. জুলফিকার আলীসহ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
তাদের মতে, বসন্তের শেষে ঝিনুকের ডিম পরিপক্কতা পায় এবং জুন আগস্টে এরা পানিতে প্রজনন করে থাকে। প্রতিটি স্ত্রী ঝিনুক ৭৫ লাখ থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত ডিম ছাড়ে, যার মধ্যে বেঁচে থাকে মাত্র এক হাজার। তাই প্রাকৃতিক ঝিনুক-শামুক রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান বিজ্ঞানীরা।