স্যামসাংয়ের সাবেক সিটিও এখন ওয়ালটন সিউলের আরঅ্যান্ডডি প্রধান
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক পণ্য খাতের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাতিষ্ঠানিক শাখা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে ওয়ালটন। এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক দপ্তর স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে এই বাংলাদেশের শীর্ষ এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু করার বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ।
ওয়ালটনের পরিচালনা পর্ষদ কী উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠান চালু করার সিদ্ধান্ত নিল?
দেশের অভ্যন্তরীণ সীমানায় থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া সম্ভব না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান জাতীয়ভাবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তবে তাকে অবশ্যই জেলা পর্যায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পুরো দেশজুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বিস্তার করতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকায় এসে কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাদের শহরে আসতে হবে। আমরা, ২০০৮ সাল থেকে তাই করে চলেছি। আমাদের এখন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হওয়ার সময় এসেছে।
আমাদের পরিকল্পনা হলো দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারের কমতি পূরণ করা। একই সময়ে আমরা পণ্যের মানোন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণের দিকে আগাতে থাকব। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হওয়া।
২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বের প্রথম সারির পাঁচটি ব্র্যান্ডের মধ্যে ওয়াল্টনের নাম দেখতে চাই।
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ব্র্যান্ডের তালিকায় পৌঁছাতে হলে আপনাদের স্যামসাং, সনি, জেনারেল, এলজি এবং হিটাচির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আপনাদের কি সেই প্রস্তুতি আছে?
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে পরিণত হতে হলে আমাদের তালিকায় অবস্থানরত শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা বজায় রেখেই আমাদের ব্যবসা করতে হবে।
আন্তরিকতা এবং দক্ষতার সাথেই আমরা তাদের নজরে রাখব। আর তাই আমরা তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ করতে চাচ্ছি। আমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। বর্তমানে আমরা তাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক দপ্তর স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে চলেছি।
আমরা শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একই সাথে তাদের উৎপাদন ব্যবস্থাও বিস্তৃত। প্রায় সকল দেশেই তাদের কারখানা ও দপ্তর আছে। আর সে কারণেই আমরাও বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক শাখা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কেমন ধরনের সম্ভাবনা দেখতে পান?
আমাজনের মাধ্যমে ওয়ালটন বেশ কিছু সময় ধরেই পণ্য বিক্রি করে আসছে। মোবাইল সেটসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমরা দুই বছর আগে আমাজনের সাথে চুক্তি করি। পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পণ্যের চাহিদা দেখেই আমরা বাজার সম্প্রসারণে আগ্রহী হই।
দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠান এবং শাখা চালু করার আগে সেই দেশের মানুষের রুচি, গ্রাহকের মানদণ্ড ও প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি যাচাই পূর্বক চাহিদা নির্ধারণ করতে হয়। আর সে কারণেই একটি প্রাতিষ্ঠানিক দপ্তরের প্রয়োজন।
প্রাতিষ্ঠানিক দপ্তর স্থাপনের পর সেখানে আমাদের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক তথ্য এবং গবেষণা ও মানোন্নয়নে নিয়োজিত তিনটি দল কাজ করবে। এই দলগুলো আমাদের স্থানীয় মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং রুচি সম্পর্কে অবহিত করতে সাহায্য করবে। আমরা সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এখানে পণ্য উৎপাদন করব। এর মধ্য দিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা মূলধারার বাজারে অবস্থান নিতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিশ্বের ইলেকট্রনিক পণ্যের খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। ওয়ালটন দক্ষিণ কোরিয়ায় শাখা চালু করে কী করবে?
আমরা দক্ষিণ কোরিয়ায় মূলত গবেষণা ও মানোন্নয়ন বিষয়ে কাজ করতে প্রাতিষ্ঠানিক শাখা চালু করতে যাচ্ছি। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ অবস্থান অস্বীকার করার উপায় নেই। আর তাই আমরা কোরিয়ার কাছ থেকে আরঅ্যান্ডডি অভিজ্ঞতা নিতে চাই। প্রাথমিকভাবে আমরা সেখানে ১০-১২ জনের একটি দল নিয়োগ করছি। আমাদের কোরিয়ান দলের প্রধান সে দেশের একজন নাগরিক। তিনি ৩৪ বছর ধরে স্যামসাংয়ের সাথে কাজ করে আসছেন। তিনি স্যামসাংয়ের সিটিও হিসেবেও কাজ করেছেন। কোরিয়া থেকে আমরা নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করব বলে আশা করি।
ভারতে শাখা চালু করার বিষয়ে কী বলবেন?
আমরা ভারতে বিপুল সংখ্যক পণ্য রপ্তানি করে আসলেও এখন সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক দপ্তর চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে, আমরা যদি ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের বাজার দখল করতে চাই তাহলে একটিমাত্র অফিস স্থাপন যথেষ্ট নয়। সেজন্য আমাদের ভবিষ্যতে তিন থেকে চারটি অফিস চালু করার প্রয়োজন হবে। আমরা সেই লক্ষ্য ধরেই আগাচ্ছি। ভারত আমাদের জন্য এক বিশাল বাজার হবে।
শুনেছি সংযুক্ত আরব আমিরাতেও আপনারা প্রাতিষ্ঠানিক শাখা চালু করতে চলেছেন?
আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের লক্ষ্যে পৌঁছানোর অপর একটি মাধ্যম হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেখানে, প্রাতিষ্ঠানিক শাখা স্থাপনের মাধ্যমে আমরা মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও আফ্রিকার বাজার ধরতে সক্ষম হব। সেখান থেকে আমরা বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব। সেই লক্ষ্যেই আমরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে হাব বা প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ওয়ালটন কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানোর চিন্তার সাথে যুক্ত হলো এবং কবে নাগাদ তা বাস্তবায়িত হবে?
আমরা গত তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা করে আসছি। তবে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিলম্ব সৃষ্টি হয়। আমাদের আরও আগেই বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার পর আমরা এখন শেষ ধাপের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আমরা পণ্য বাজারজাত করতে সক্ষম হব।
বর্তমানে ওয়ালটনের রপ্তানি অবস্থা কী রকম?
মহামারির কারণে গত অর্থবছরে রপ্তানি হ্রাস পায়। এই বছর আমরা আমাদের সর্ব সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। এছাড়া, আসন্ন অর্থবছরে আমরা রপ্তানি আয় ৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।