আসন্ন বাজেটে দরিদ্রদের জন্য থাকছে না নতুন কোন বরাদ্দ
করোনার প্রভাবে কর্মহীন ও দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাওয়া বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য আসন্ন বাজেটে নতুন কোন বরাদ্দ থাকছে না। তবে করোনার প্রভাব বাড়লে এবারকার মতোই বিভিন্ন খাতের তালিকাভুক্তদের নগদ সহায়তা দেবে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দরিদ্রদের জন্য খোলাবাজারে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রায় অতিরিক্ত এক লাখ টন চাল-গম বিতরণে বাড়তি বরাদ্দ থাকছে বাজেটে। তবে বোরোর বাম্পার ফলনে চালের দাম সহনীয় থাকবে আশা করে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, সমাজের কোন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর ওপর করোনার প্রভাব কতোটা পড়েছে, তার কোন তথ্য সরকারের কাছে নেই। সরকার ঘোষিত প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর প্রভাব সম্পর্কেও এখন পর্যন্ত কোন স্টাডি করা হয়নি।
'ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকায় তাদের চিহ্নিত করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে সংযোজন করা সম্ভব না হওয়ায় বাজেটে কর্মহীন কিংবা নতুন করে দরিদ্র হওয়াদের জন্য বরাদ্দ রাখা সম্ভব হচ্ছে না', জানান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অর্থনীতি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর এর প্রভাব খতিয়ে দেখার কোন চিন্তা আপাতত অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাজেটের পর প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন করতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী অর্থবছর যে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হচ্ছে, প্রয়োজনে সেখান থেকে বিভিন্ন খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে সরকার বছরজুড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসে চাল-গম বিক্রির মাধ্যমে দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
খাদ্য শস্য সংগ্রহের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬,৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, খাদ্যশস্য আমদানি, অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ এবং ওএমএস ভর্তুকিতে এ অর্থ ব্যয় হবে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৬,৪৫৩ কোটি টাকা।
দেশের খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে আগামী অর্থবছর ৩৩ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে চাল সংগ্রহ করা হবে প্রায় ২৬ লাখ টন এবং বাকী ৭ লাখ টন গম।
দেশে খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদশস্য ওএমএস এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ।
আগামী অর্থবছর বিদেশি ঋণের মাধ্যমে খাদ্যশস্য আমদানিখাতে ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া ৩৭৯৩ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে। আর অভ্যন্তরীণভাবে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২১৬ কোটি টাকা।
সরকার বেশি মূল্যে খাদ্যশস্য কিনে দরিদ্র মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকে। এতে যে লোকসান হয়, তা ভর্তুকি হিসেবে গণনা করা হয়। এই ভর্তুকি মেটাতে আগামী অর্থবছর ৪৪১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে, এবার এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৮১৭ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী অর্থবছর আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম এবারের তুলনায় কম হবে। ফলে এখাতে ভর্তুকির পরিমাণও কমবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ১৫০ উপজেলার সকল বয়স্ক ও বিধবাদের মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া, নতুন করে চার লাখ প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরা মাসে ৭৫০ টাকা হারে ভাতা পান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৯ লাখ বয়স্ক ভাতা ২০.৫০ লাখ বিধবা ভাতা এবং ১৮ লাখ ব্যক্তি অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১২০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০,০০০ টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর প্রায় দু'লাখ মুক্তিযোদ্ধা এ ভাতা পাচ্ছেন।