‘পরিবেশের সুস্থতা নির্দেশ করে প্রজাপতি’
প্রকৃতির এক সংবেদনশীল প্রাণ প্রজাপতি। এগুলো হলো পরিবেশের ভারসাম্যের পরিমাপক। কোনো বনের ১০০ শতাংশ ভূমিতে যদি ১০টি প্রজাপতিও থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেখানকার পরিবেশ সুস্থ আছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে দশম প্রজাপতি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রজাপতিকে এভাবেই তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’- এ শ্লোগানকে ধারণ করে জাবিতে দশমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রজাপতি মেলা-২০১৯।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্ণিল ডানার প্রজাপতি শুধু সুন্দর পতঙ্গ নয়, তারা জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্ধারণের সূচকও। জলবায়ু বদলালে বা পরিবেশ দূষণ হলে বদলে যায় ওদের গতিবিধি এবং পরিবর্তন আসে জীবনচক্রে। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৩০০ প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কৃত হয়েছে। জাবিতে রয়েছে ১১৩টি প্রজাতি।
মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন জানান, প্রজাপতি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে মেলায় নানা কর্মসূচি রাখা হয়েছে। থাকছে ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, র্যালি, আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, ঘুড়ি উড়ানো, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘প্রজাপতিকে রক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতি রক্ষা পাবে। অন্যথায় আমাদের সবকিছু হারিয়ে যাবে। প্রজাপতিকে ভালো না রাখলে পরিবেশ ঠিক থাকবে না। পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে প্রজাপতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রজাপতি শুধু সৌন্দর্যের ব্যাপার নয়, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইসিইউএন) সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রজাপতি একক কোনো জীবন নয়, প্রজাপতি এ পরিবেশের সাথে মিশে থাকে। সুতরাং এ পরিবেশ না থাকলে প্রজাপতিও থাকবে না। যেখানেই উন্নয়ন হয় সেখানেই প্রথম বলিদান হয় বৃক্ষের, এটা যেন না হয়। একটা বনের উপাদান যেমন বৃক্ষ ও বিভিন্ন প্রাণি, ঠিক তেমন একটি সুস্থ বনের নির্দেশিকা হলো প্রজাপতি। যে বনে যত বেশি প্রজাপতি থাকবে, সেই বন তত বেশি সুস্থ।’
এবারের মেলায় প্রজাপতি বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ বাশারকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ এবং সবুজবাগ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অরুণাভ ব্রুনোকে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়।
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, অধ্যাপক সাদিয়া আহমদ, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ, কিউটের ব্যবস্থাপক মাতলুব আক্তার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।