এসএমইদের প্রণোদনা: নিজের ভোগান্তির অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন ট্রফিজয়ী রপ্তানিকারক
সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প উদ্যোক্তা তথা এসএমইরা পায়নি উল্লেখ করে নিজের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ।
তিনি শাশা গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বৃহস্পতিবার একটি ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অক্সফাম বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের সহযোগিতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সংলাপটির আয়োজন করে।
শামস মাহমুদ বলেন, "আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার ১০০ মিলিয়ন ডলার। চারবার প্রধানমন্ত্রীর এক্সপোর্ট ট্রফি, গোল্ড ট্রফি পেয়েছি। অথচ আমি যখন ব্যাংকে গেলাম, তখন ব্যাংক বলছে আমি রপ্তানিকারক না।"
"আমি বললাম আমার কারখানা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে। আমি এক্সপোর্ট ট্রফিও পেয়েছি। শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন করি। তবু আমাকে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যাংক আমাকে সহায়তা দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "এখন চিন্তা করেন আমার এই অবস্থা হলে, যারা এসএমই, ছোট ছোট ব্যবসা করে, ব্যাংকের সাথে তেমন সম্পর্ক নাই, তাদের কী অবস্থা?"
বেসরকারি খাতের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "কোভিডের কারণে এখন অনেক নতুন দরিদ্র হয়েছে। সরকারের আগের পরিসংখ্যানে দরিদ্র ছিল ২০ শতাংশ। এখন সেটা ৩৫-৪০ শতাংশ বলে অনেকেই বলছেন। তবে বাজেটে যে বরাদ্দ করা হয়েছে তা ২০ শতাংশ দরিদ্রের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা। কাজেই ২০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ নিয়ে ৪০ শতাংশ দরিদ্রের আউটকাম একরকম হবে না"।
এরপর কর্পোরেট কর ছাড়কে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার দাবি তোলেন শামস মাহমুদ।
তিনি বলেন, "আগামী বাজেটে ২.৫ শতাংশ কর্পোরেট কর কমিয়েছে। একে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সাথে সংযোগ স্থাপন করার দরকার ছিল। এ বছর সরকার যে প্রণোদনাই দিবে বা দেওয়ার চিন্তা করছে, সেটা চাকরি ধরে রাখা এবং চাকরি সৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেমন- আমি নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি বা যদি দেখাতে পারি যে গতবছর যে ওয়ার্কফোর্স ছিল, কাউকে ছাটাই করিনি তখন আপনি ২.৫% করছাড় দেন কিন্তু আমি যদি ১০% ওয়ার্কফোর্স যুক্ত করি, তখন ৫% কর ছাড় সুবিধা দেন। কারণ আমি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি"। এক্ষেত্রে যতটুকু ছাড় দেয়া হবে, তার চেয়ে বেশি উপকার আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঋণের সুদহার কম হলেও বিনিয়োগ না বাড়ায় সরকারের বাজেট ও বিনিয়োগ নীতির সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "গত চার-পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি হার কম। ব্যাংকের সুদ হার বেশি হওয়ার কারণে বিনিয়োগ কম। সেই সুদহার কমানো হয়েছে, টাকা এখন সস্তা হলেও বিনিয়োগ বাড়ছে না। এতে বাজেট পলিসি ও সরকারের বিনিয়োগ নীতিতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।"
এসএমই লিংকেজ পলিসি প্রণয়নের দাবিও তোলেন শাশা ডেনিমস'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি বলেন, "বাজেটে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও অটোমোবাইল খাতে ট্যাক্স হলিডে দেয়া হয়েছে, যেটা খুবই ভালো। অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে সরকার। তবে এখানে এসএমই লিংকেজ পলিসি দেখতে পাই না"।
"অর্থনৈতিক জোনের বাইরের কোনো ফার্ম থেকে স্পেয়ার পার্টস ভ্যাট দিয়ে কিনতে হয়, সেই পণ্য চীন থেকে নিয়ে আসলে ডিউটি ফ্রি পাচ্ছি। এইখানে ভারসাম্য আনতে এসএমই লিংকেজ পলিসি খুবই জরুরী।"
তিনি বলেন, "এফডিআই (প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ) আসছে না বলা হচ্ছে। অনেক কোম্পানী বিদেশ থেকে সরে যাচ্ছে কিন্তু তারা সহজে এখানে আসবে না। আসলে এফডিআই আনার বিষয়ে যতটা সহজে বলা হয়, ততটা সহজে আসবে না"। এই জন্য সরকারকে আরও মনোযোগ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করছে, কিন্তু আগামী বাজেটে সরকার চাইলে এই ভর্তুকি উদ্যোক্তাদের দিতে পারতো। কারণ ছোট বড় সব উদ্যোক্তারা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটে ভুগছে," যোগ করেন তিনি।